গাজ়া সিটিতে খাবারের অপেক্ষায় প্যালেস্টিনীয়েরা। ছবি: রয়টার্স।
প্রবল আন্তর্জাতিক সমালোচনার মাঝে গাজ়ায় অবশেষে ত্রাণ সরবরাহ শুরু করেছে ইজ়রায়েল। আকাশ থেকে ত্রাণের বস্তা ছুড়ে দেওয়া হচ্ছে গাজ়ায়, ক্ষুধার্তেরা তা-ই লুটে নিচ্ছেন। শনিবার রাত থেকে এই প্রক্রিয়ায় বেশ কয়েক জন জখম হয়েছেন বলে খবর। পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী বা খাবার এখনও গাজ়ায় পৌঁছোয়নি। অন্য দিকে, রবিবার থেকে গাজ়ায় প্রতি দিন নির্দিষ্ট সময় সামরিক বিরতির ঘোষণা করেছে ইজ়রায়েল।
শনিবার ইজ়রায়েলের সেনা (আইডিএফ) জানিয়েছে, গাজ়ায় সাত বস্তা ময়দা, চিনি এবং খাবারের ক্যান ফেলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু তাঁর সরকারের সিনিয়রদের সঙ্গে একটি বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্ত নেন। যে পরিমাণ খাবার গাজ়ায় ফেলার কথা বলা হয়েছে, একটি ট্রাকেও তার চেয়ে বেশি খাবার ধরে। ইজ়রায়েলি সেনার দাবি, রবিবার সারা দিন তারা যুদ্ধ বন্ধ রাখবে গাজ়ায় খাবার বিতরণের জন্য। রাষ্ট্রপুঞ্জের সংস্থাগুলিকেও ত্রাণের কাজে সাহায্য করা হবে। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, গাজ়ার তিনটি এলাকায় প্রতি দিন ১০ ঘণ্টা সামরিক অভিযানে কৌশলগত বিরতি পালন করবে ইজ়রায়েলি সেনা। ত্রাণকার্যে সহায়তা করার জন্যই এই সিদ্ধান্ত। আল-মাওয়াসি, দেইর আল-বালাহ্ এবং গাজ়া শহরে প্রতি দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সংঘর্ষ বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া ত্রাণকার্যের জন্য ভোর ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত কিছু রাস্তা খুলে দেওয়া হবে। যে সমস্ত এলাকা জনবহুল, সেখানে আপাতত কিছুটা বিরতি দেওয়া হবে। তবে সামরিক অভিযান থামবে না, জানিয়ে দিয়েছে সেনা।
গাজ়ার একমাত্র জল বিশুদ্ধকরণ প্ল্যান্টটিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ গত মার্চ থেকে বন্ধ করে রেখেছে ইজ়রায়েল। আইডিএফ জানায়, রবিবার সেই প্ল্যান্টে বিদ্যুৎ সরবরাহ আবার চালু করা হবে। সংবাদমাধ্যমে দাবি, গাজ়ার উত্তর দিকে বেইট লাহিয়া অঞ্চলে রাতে আকাশ থেকে খাবার ফেলা হয়েছে। একটি খাবারের বস্তা সরাসরি ক্ষুধার্তদের তাঁবুর উপরে পড়েছে এবং ১১ জন জখম হয়েছেন। কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে দাবি, ইজ়রায়েল সাতটি বস্তা ফেললেও গাজ়ার মানুষ পেয়েছেন মাত্র পাঁচটি বস্তা। বাকি দু’টি এমন জায়গায় পড়েছে, যেখানে সাধারণ মানুষ পৌঁছোতে পারে না।
ত্রাণ সহায়তা সংস্থাগুলি শনিবার গাজ়ায় ইজ়রায়েলের এই ত্রাণকার্যকে ‘অপর্যাপ্ত’ বলে উল্লেখ করেছেন। দাবি, ইচ্ছাকৃত ভাবে দুর্ভিক্ষ তৈরি করা হচ্ছে গাজ়ায়। সেখানকার মানুষ দিনের পর দিন স্রেফ না-খেতে পেয়ে মারা যাচ্ছেন। শিশুরা অপুষ্টিতে ভুগছে। বহু শিশুর মৃত্যু হচ্ছে খাবারের অভাবে। ইজ়রায়েলের এক সেনা আধিকারিক সম্প্রতি স্বীকার করে নেন, গাজ়ায় খাদ্য নিরাপত্তার অভাব রয়েছে। তবে দুর্ভিক্ষের দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন তিনিও।
গাজ়ায় খাদ্য এবং ত্রাণসামগ্রী ঢুকতে না দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নেতানিয়াহু নিয়েছেন, বিশ্ব জুড়ে তার সমালোচনা চলছে। নেতানিয়াহুর যুক্তি, রাষ্ট্রপুঞ্জের পাঠানো এই খাদ্যসামগ্রী আসলে প্যালেস্টাইনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সুবিধা করে দিচ্ছে। তাই কোনও ত্রাণ গাজ়ায় ঢুকতে দেওয়া হবে না। গত মার্চ থেকে গাজ়ায় খাদ্যের হাহাকার চলছে। ইন্দোনেশিয়া থেকে শুরু করে অস্ট্রেলিয়া কিংবা ফ্রান্স, বিভিন্ন দেশে গাজ়ার সমর্থনে প্রতিবাদ বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। ইজ়রায়েলের নীতির নিন্দা করেছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি অ্যালবানিজ়। আন্তর্জাতিক চাপে পড়েই গাজ়ায় খাদ্য বর্ষণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আইডিএফ। কিন্তু তা ক্ষুধার সিন্ধুতে বিন্দু বর্ষণের সমান, দাবি পর্যবেক্ষকদের।