Thailand Cambodia Border Conflict

বাঙালির প্রিয় তাইল্যান্ড কেন যুদ্ধে জড়াল? কী নিয়ে সংঘাত কম্বোডিয়ার সঙ্গে? ভারত-পাক বিরোধের সঙ্গে মিল আছে কি

তাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাঙ্কক জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র। ভারত থেকে প্রতি বছর প্রচুর মানুষ ব্যাঙ্ককে ঘুরতে যান। বাঙালির সংখ্যাও সেখানে কম নয়। কিন্তু সেই তাইল্যান্ড এখন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে পড়শি কম্বোডিয়ার সঙ্গে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৫ ০৯:১৮
Share:

তাইল্যান্ড এবং কম্বোডিয়ার মধ্যে সীমান্ত সংঘর্ষ চলছে। ছবি: এক্স।

তিন দিনের টানা সীমান্ত সংঘর্ষের পর অবশেষে তাইল্যান্ড এবং কম্বোডিয়া সংঘর্ষবিরতিতে সম্মত হয়েছে বলে দাবি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সমাজমাধ্যমে তিনি জানিয়েছেন, দুই দেশের প্রধানের সঙ্গে ফোনে তাঁর কথা হয়েছে। যুদ্ধ না থামালে আমেরিকা দুই দেশের সঙ্গে বাণিজ্য নিয়ে আলোচনায় বসবে না, সাফ জানিয়ে দেন ট্রাম্প। তার পরেই ঘোষণা করেন, তাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া সংঘর্ষবিরতিতে রাজি। এই দুই পড়শির সীমান্তবিরোধে মধ্যস্থতা করতে গিয়ে ভারত এবং পাকিস্তানের সংঘর্ষের কথা মনে পড়ে গিয়েছে বলেও দাবি করেছেন ট্রাম্প। কিন্তু কী নিয়ে সংঘর্ষ? কেন লড়ছে তাইল্যান্ড আর কম্বোডিয়া?

Advertisement

ভারতের পূর্বের প্রতিবেশী মায়ানমার। তার ঠিক পূর্ব সীমান্তে রয়েছে তাইল্যান্ড এবং তাইল্যান্ডের পূর্বে কম্বোডিয়া। তাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাঙ্কক জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র। ভারত থেকে প্রতি বছর প্রচুর মানুষ ব্যাঙ্ককে ঘুরতে যান। বাঙালি পর্যটকের সংখ্যাও কম নয়। কিন্তু সেই তাইল্যান্ডই দীর্ঘস্থায়ী দ্বন্দ্বে জড়িয়ে আছে তার পড়শি কম্বোডিয়ার সঙ্গে। দুই প্রতিবেশীর সংঘাত শতাব্দীপ্রাচীন এবং মূলত সীমান্ত নিয়েই। ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত কম্বোডিয়ায় ফ্রান্সের সাম্রাজ্য ছিল। তারাই কম্বোডিয়ার স্থলসীমান্ত নির্ধারিত করে দিয়েছিল। সংঘাতের জন্মও সেই সীমান্তরেখায়। বছরের পর বছর ধরে সেই সংঘাত আরও গভীর হয়েছে।

কোথায় শুরু

Advertisement

কম্বোডিয়া এবং তাইল্যান্ডের মধ্যে মোট সীমান্ত এলাকা ৮১৭ কিলোমিটারের। সেখানে সাম্প্রতিক সংঘর্ষ শুরু হয়েছে গত মে মাসে। সীমান্তবর্তী এলাকায় দুই দেশের সেনার মধ্যে সাময়িক গোলাগুলি চলে। তাতে কম্বোডিয়ার এক জওয়ানের মৃত্যু হয়। এই ঘটনার পর দুই দেশের সরকারই প্রত্যাঘাতমূলক পদক্ষেপ করে। কম্বোডিয়ার সীমান্তে বিধিনিষেধ আরোপ করে দেয় তাইল্যান্ড। আবার, কম্বোডিয়া সরকার তাইল্যান্ডের ফল, সব্জি আমদানি নিষিদ্ধ করে। তাই সিনেমা নিষিদ্ধ করা হয় কম্বোডিয়ায়। দুই দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে প্রথম হামলার অভিযোগ করছে। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যায় গত বুধবার সীমান্তে টহল দেওয়ার সময়ে পাঁচ তাই জওয়ান ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে জখম হলে। এর পর তাইল্যান্ড উত্তর-পূর্ব সীমান্ত সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়। কম্বোডিয়া থেকে রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করে নেয় এবং তাইল্যান্ড থেকে কম্বোডিয়ান রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করা হয়। অভিযোগ ছিল, সীমান্তে ল্যান্ডমাইন পেতে রেখেছিল কম্বোডিয়া। যে অভিযোগ তারা অস্বীকার করেছে। কম্বোডিয়া এর পর জানায়, তাইল্যান্ডের সঙ্গে তারা কূটনৈতিক সম্পর্ক সর্বনিম্ন পর্যায়ে নিয়ে আসছে। ব্যাঙ্ককের দূতাবাস থেকে সকল কর্মীকে প্রত্যাহার করা হচ্ছে।

রাজনৈতিক অস্থিরতা

কম্বোডিয়া কার্যত একটি একদলীয় দেশ। গত কয়েক দশক ধরে সেখানে ক্ষমতায় ছিলেন হান সেন। ২০২৩ সালে তিনি পুত্র হান মানেটের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। মানেটই এখন কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী এবং সেনেটের প্রেসিডেন্ট। তুলনায় তাইল্যান্ডে রাজনৈতিক অস্থিরতা বেশি। কম্বোডিয়ার সঙ্গে সাম্প্রতিক সীমান্ত সংঘাতের আবহে সেখানকার প্রধানমন্ত্রী পেটোঙ্গটার্ন শিনাওয়াত্রা বিতর্কে জড়িয়েছেন। তিনি বর্তমানে পদ থেকে সাসপেন্ডেড। তাঁর পরিবর্তে ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী হিসাবে রয়েছেন ফুমথাম ওয়েচায়াচাই। কম্বোডিয়ার সঙ্গে সীমান্ত সংঘাত সামলানোয় শিনাওয়াত্রার নীতি বার বার সমালোচিত হয়েছে। সম্প্রতি সেই বিতর্কে ঘি ঢালে একটি অডিয়ো। কম্বোয়িডার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হান সেনের সঙ্গে তাঁর ফোনালাপের অডিয়ো ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে সেনকে তিনি ‘আঙ্ক্‌ল’ বলে সম্বোধন করেন এবং জানান, কম্বোডিয়ার যা প্রয়োজন, তা তিনি জোগাড় করে দেবেন। তাইল্যান্ডের সিনিয়র সামরিক কমান্ডারের সমালোচনাও শোনা যায় ওই অডিয়োতে। তার পর পদ থেকে সাসপেন্ড হন প্রধানমন্ত্রী শিনাওয়াত্রা। সেনার সঙ্গে সরকারের সংঘাত তীব্র হয়েছে তাইল্যান্ডে।

চিনের প্রভাব

সীমান্ত সংঘর্ষ মেটাতে আন্তর্জাতিক আদালতের (আইসিজে) হস্তক্ষেপ চেয়েছিল কম্বোডিয়া। কিন্তু তাইল্যান্ড ওই আদালতের এক্তিয়ার স্বীকারই করে না। এ ক্ষেত্রে চিনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। দুই দেশের সঙ্গেই চিনের অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার। তবে কম্বোডিয়ার সঙ্গে বেজিংয়ের ঘনিষ্ঠতা কিছু বেশি, যা ব্যাঙ্ককের অস্বস্তির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে তাইল্যান্ড এবং কম্বোডিয়া, উভয় দেশের উপরেই ৩৬ শতাংশ বাড়তি শুল্ক আরোপ করেছিল আমেরিকা। ১ অগস্ট থেকে যা কার্যকর হওয়ার কথা। তার আগে সংঘাতে হস্তক্ষেপ করলেন ট্রাম্প। দুই দেশের সঙ্গে আলোচনা করে তিনি সংঘর্ষবিরতির কথা ঘোষণা করলেন। আমেরিকার এই তৎপরতাকে চিন কী ভাবে গ্রহণ করবে, তাদের কী প্রতিক্রিয়া হবে, সে দিকেও নজর রেখেছে আন্তর্জাতিক মহল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement