মেক আমেরিকা গ্রেট এগেন— প্রচারপর্বের প্রতিশ্রুতি সত্যি করতেই এসেছেন তিনি, বিজয়ভাষণের প্রতি ছত্রে বুঝিয়ে দিলেন আমেরিকার ৪৫তম প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প! হাততালির মধ্যে প্রথমেই ধন্যবাদ জানালেন দেশবাসীকে। সাধুবাদ জানালেন হিলারি ক্লিন্টনের জোরদার টক্করকে। হিলারির শুভেচ্ছাবার্তা এসেছে ফোনে, বললেন সেটাও। দীর্ঘ সময় দেশের জন্য হিলারির কঠোর পরিশ্রমের তারিফ করতেও কসুর করেননি। যে বৈষম্য-বিতর্ক আর হেট স্পিচে বার বার তাঁর নাম জড়িয়েছে, সে সব এক মিনিটে উড়িয়ে বার্তা দিলেন দেশকে এক সুতোয় বাঁধার। সবে মিলে কাজ করাটাই যে এখন লক্ষ্য, আস্থা ঐক্যেই— বললেন ট্রাম্প। ধন্যবাদের তালিকায় পরিবারের প্রত্যেক সদস্য, প্রত্যেক প্রচার-সঙ্গীর নাম তো টেনে আনলেনই, তার সঙ্গে বিজয়সভায় পাশে দাঁড় করালেন তাঁদের সক্কলকে। প্রচারপর্বের ‘ভয়ঙ্কর নোংরা আর কঠিন’ সময়ে পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ জানালেন ‘টিম-ট্রাম্প’কে। আর প্রতিবার তাঁর ধন্যবাদ জ্ঞাপনে, প্রত্যেক প্রতিশ্রুতিতে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ল জনতা! ম্যানহাটনের হিলটন হোটেলের মঞ্চে অভিযোগ-বিতর্ককে পিছনে ফেলে প্রেসিডেন্ট এলেন, বললেন এবং জয় করলেন! তবে ছন্দপতন হল মঞ্চে হিলারির অনুপস্থিতিতে। রীতি মেনে ‘কনসেশন’ ভাষণ দিতে সামনে এলেন না হিলারি ক্লিন্টন। বদলে, মঞ্চে এসে দর্শককূলকে শুধু শুভরাত্রি বলেই দায় সারলেন তাঁর প্রচারসচিব!
বিভেদ ভুলে হাতে হাত মেলানোর সময় এসে গিয়েছে। দেশের প্রত্যেকটি মানুষকে কথা দিচ্ছি— আমি তাঁদের প্রত্যেকের প্রেসিডেন্ট হব। যাঁরা আমাকে সমর্থন করেননি, বিপক্ষে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের কিছু মানুষের দিকেও হাত বাড়াতে চাই। দেশকে এক সুতোয় বাঁধতে তাঁদের সাহায্য চাই!
শুধু প্রচার নয়, এই ১৮ মাস, আমরা অভাবনীয় এক আন্দোলন তৈরি করেছি। হাজার হাজার পরিশ্রমী মানুষ যাঁরা এই দেশকে ভালবাসেন, এক সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেন, তাঁরা সবাই এই আন্দোলনের আসল স্রষ্টা। ধর্ম, বর্ণ, বিশ্বাস নির্বিশেষে মানুষের যোগদানে এই আন্দোলন বাস্তবায়িত হয়েছে। তাঁরা সকলে চান, সরকার মানুষের জন্য কাজ করুক। ফের ঢেলে সাজবে দেশ। পুনর্নির্মিত হবে রাষ্ট্র। নতুন করে স্বপ্নপূরণ হবে আমেরিকার। সত্যি হবে ‘দ্য আমেরিকান ড্রিম’।
সারা জীবন আমি ব্যবসাই সামলে এসেছি। মানুষের মধ্যে কী বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে, নিজের চোখে দেখেছি। সেটাই এ বার এ দেশের সঙ্গে করতে চাই। প্রত্যেক মার্কিন নাগরিক এ বার তাঁর পূর্ণ কর্মক্ষমতা, তাঁর সম্পূর্ণ সম্ভাবনা উপলব্ধি করার, কাজে লাগানোর সুযোগ পাবেন!
স্মৃতিতে আবছা হয়ে আসা আমাদের দেশের নারী-পুরুষেরা আর বিস্মৃত থাকবেন না।
ফের গড়া হবে আমাদের শহর। সাজবে সড়ক, উড়ালপুল, সুড়ঙ্গ, বিমানবন্দর, স্কুল, হাসপাতাল...। বিশ্বের শ্রেষ্ঠ পরিকাঠামো তৈরি করব আমরা। সেই কাজে হাত লাগাবেন দেশের মানুষ। সকলের উন্নয়নের জন্য, প্রতিভা খুঁজে বের করব আমরা। আর আমরা খেয়াল রাখতে পারব আমাদের সামরিক সদস্যদেরও। জানি, ওঁরা দেশের প্রতি কী ভীষণ কর্তব্যনিষ্ঠ।
দ্বিগুণ হবে আর্থিক বৃদ্ধি। বিশ্বের এক নম্বর অর্থনৈতিক শক্তি তৈরি করব আমরা। যারা আমাদের সঙ্গে কাজ করতে চায়, আমেরিকা হাত মেলাবে তাদের সঙ্গেও। কোনও স্বপ্নই আর অধরা থাকবে না। পার করব সব চ্যালেঞ্জ। ভবিষ্যতের জন্য যা যা চাইব, তার সবই হাতের মুঠোয় আসবে! সেরা হবে আমেরিকা।
বিশ্বের সব মানুষকে বলতে চাই— আমেরিকার স্বার্থ প্রথমে দেখলেও আমরা সকলের প্রতি একই রকম সৎ থাকব। প্রত্যেকটি মানুষ এবং প্রতিটি দেশের প্রতি। শত্রুতা নয়, বরং একসঙ্গে কাজ করার জায়গা তৈরি করব। যুদ্ধ নয়, বন্ধু হব।
লোকে বলে এটা ঐতিহাসিক মুহূর্ত। তবে সত্যি সত্যি ইতিহাস তৈরি হয় ভাল কাজ করলে। কথা দিচ্ছি, আপনাদের ফেরাব না। আমরা ভাল কাজ করব। যাতে দু’বছর, তিন বছর, চার বছর কিংবা হয়তো আট বছর পরে গর্ববোধ করতে পারেন। এ বার শুরু কাজ। সবে শুরুই।
অসাধারণ এক সন্ধে। এই দেশকে ভালবাসি। আবার বলব, ধন্যবাদ।