ডোনাল্ড ট্রাম্প। — ফাইল চিত্র।
শুক্রবার সকাল থেকে ইরানে হামলা চালাচ্ছে ইজ়রায়েল। এই নিয়ে আমেরিকার ‘কিছু করার ছিল না’ বলে দাবি করলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে ইরানকে হুঁশিয়ারিও দিয়ে রাখলেন তিনি। জানালেন, ইরান যদি কোনও ভাবে আমেরিকার উপর হামলা চালানোর চেষ্টা করে, তা হলে ‘তছনছ’ করে দেওয়া হবে। এমন প্রত্যাঘাত করা হবে, যা আগে হয়নি। এই দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা করানোর প্রস্তাবও দিয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট।
শুক্রবার ‘চিরশত্রু’ ইরানের উপর আকাশপথে অন্যতম বৃহৎ হামলাটি চালিয়েছে ইজ়রায়েলি বাহিনী। তার নেপথ্যে আমেরিকার হাত দেখেছেন অনেকেই। ট্রাম্প এই হামলাকে একপ্রকার সমর্থনও করেন। ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর পাশে দাঁড়িয়ে জানিয়ে দেন, এই হামলার কথা তিনি আগে থেকেই জানতেন। তা ঠেকানোর চেষ্টাও করেছিলেন। কিন্তু ইরান অনড় থাকায় তা সম্ভব হয়নি। তার পরেই শনিবার আমেরিকাকে হুঁশিয়ারি দেয় ইরান। এ বার ট্রাম্প পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখলেন ইরানকে। রবিবার ট্রুথ সোশ্যালে তিনি লিখলেন, ‘‘ইরানে যে হামলা হয়েছে, তা নিয়ে আমেরিকার কিছুই করার ছিল না। যদি আমাদের উপর কোনও পথে, কোনও ভাবে বা আকারে ইরান হামলা চালায়, তা হলে আমেরিকার সেনাবাহিনী সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে আপনাদের উপর। এমন ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়বে, যা আগে দেখা যায়নি।’’ তবে তিনি দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা করানোর প্রস্তাবও দিয়ে রেখেছেন। ট্রাম্প লিখেছেন, ‘‘ইরান এবং ইজ়রায়েলের মধ্যে অনায়াসে আমরা একটা চুক্তি করাতে পারি, এই সংঘাতে ইতি টানতে পারি।’’
ইরানে ইজ়রায়েলের হামলায় মৃত্যু হয়েছে সে দেশের চার শীর্ষ সেনাকর্তা এবং ছ’জন পরমাণু বিজ্ঞানীর। নিহত হয়েছেন ইরানের সশস্ত্রবাহিনীর সর্বাধিনায়ক মেজর জেনারেল মহম্মদ বাগেরি। এর নেপথ্যে আমেরিকার ‘মদত’ রয়েছে বলে মনে করেছে ইরান। ট্রাম্পও জানিয়ে দেন, এই হামলার কথা তিনি আগেই জানতেন। হামলাকে তিনি সমর্থনও করেছেন। জানা গিয়েছে, ইরানে ইজ়রায়েলের এই হামলার ঠিক আগে ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলেন নেতানিয়াহু। দীর্ঘ ক্ষণ তাঁদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। ট্রাম্প তখনই জানিয়ে দেন, ইজ়রায়েল হামলা চালালে আমেরিকা বাধা দেবে না। শনিবার ট্রাম্প নেতানিয়াহুর পাশে দাঁড়িয়ে এ-ও জানিয়েছিলেন যে, কূটনীতি এবং আলোচনার জন্য ইরানকে ৬০ দিন সময় দেওয়া হয়েছিল। সেই সময় পেরিয়ে গিয়েছে। শুক্রবারই (স্থানীয় সময়) ৬১তম দিন। সেই কারণেই ইজ়রায়েল ইরানের উপর হামলা চালিয়েছে।
থেমে থাকেনি ইরানও। পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইজ়রায়েলে। শনিবার তারা আমেরিকা, ব্রিটেন এবং ফ্রান্সকেও হুমকি দিয়েছে। বলেছে, ইজ়রায়েলকে সাহায্য করলে তাদের সামরিক ঘাঁটিতেও হামলা হবে। রবিবার ওমানে আমেরিকার সঙ্গে যে বৈঠক হওয়ার কথা, তাতেও ‘না’ বলে দিয়েছে ইরান। তার পরেই ইরানকে পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখলেন ট্রাম্প। জানালেন, ইজ়রায়েল যে হামলা শুরু করেছে, তা নিয়ে তাঁর কিছুই করার ছিল না। কিন্তু ইরান আমেরিকার উপর প্রত্যাঘাত করলে ছেড়ে কথা বলবে না।
আন্তর্জাতিক বিধিনিষেধ ভেঙে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে ইরানের বিরুদ্ধে। আমেরিকা চায় না ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি চালিয়ে যাক। একাধিক রিপোর্ট অনুযায়ী, ইরান ইতিমধ্যেই ইউরেনিয়ামের বিশুদ্ধতা ৬০ শতাংশে নিয়ে গিয়েছে। পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে এই বিশুদ্ধতার পরিমাণ আরও কয়েক শতাংশ বৃদ্ধি করতে হবে ইরানকে। কিন্তু আমেরিকা চায় এখানেই থেমে যাক ইরান।