(বাঁ দিক থেকে) ভ্লাদিমির পুতিন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প। (মাঝে) ভলোদিমির জ়েলেনস্কি। —ফাইল চিত্র।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে এখনও বৈঠক হয়নি। তবে সোমবারের বৈঠকে যোগ দিতে ইতিমধ্যেই ওয়াশিংটনে পৌঁছে গিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি। তবে বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, বৈঠকের আগেই খানিক কোণঠাসা তিনি। ঘরে-বাইরে প্রভূত চাপও রয়েছে তাঁর উপরে। এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের প্রস্তাব মেনে রাশিয়ার সঙ্গে শান্তিচুক্তি করতে হলে ইউক্রেনকে তো বটেই, ব্যক্তিগত ভাবে অনেক মূল্য চোকাতে হবে জ়েলেনস্কিকেও। সম্ভাব্য সেই ক্ষয়ক্ষতি নিয়েই এখন হিসাবনিকেশ চলছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ‘ব্লুমবার্গ’-এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাড়ে তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধে আগ্রাসনকারী রাশিয়াই, এমনটা মনে করে আমেরিকাও। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, শাস্তির খাঁড়া নামতে চলেছে ইউক্রেনের উপরেই। ট্রাম্প ইতিমধ্যেই ইউক্রেনের দুই ‘আবদার’ খারিজ করে জানিয়ে দিয়েছেন ২০১৪ সালে রাশিয়া অধিকৃত ক্রাইমিয়া আর ফেরত পাবে না ইউক্রেন। আমেরিকার নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট নেটো-য় ইউক্রেন অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে না বলেও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প। আগেই সূত্র উদ্ধৃত করে ‘নিউ ইয়র্ক টাইম্স’ জানিয়েছিল, সোমবার হোয়াইট হাউসের বৈঠকে ট্রাম্প ইউক্রেনের পূর্ব দিকের ডনবাস অঞ্চলের পুরোটাই রাশিয়াকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য জ়েলেনস্কির উপর চাপ তৈরি করতে পারেন। রবিবারও অবশ্য নিজের পুরনো অবস্থান আরও এক বার স্পষ্ট করে দিয়ে জ়েলনস্কি জানিয়ে দিয়েছেন ইউক্রেনের ‘সূচ্যগ্র মেদিনী’ তিনি রাশিয়াকে ছাড়বেন না।
তবে তার পরেও যে জ়েলেনস্কি যে খুব একটা স্বস্তিতে, এমনটা নয়। কারণ, আমেরিকা রাশিয়ার তেল বিক্রিতে কোপ ফেলতে চাইলেও ইউক্রেন সীমান্ত বরাবর আক্রমণ জারি রেখেছে রাশিয়া। বরং আক্রমণ আরও বেড়েছে। তা ছাড়া হতাহতের সংখ্যাও ক্রমশ বাড়ছে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে জ়েলেনস্কি যে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন, এত দিন পর্যন্ত তাতে সমর্থন জুগিয়েছেন ইউক্রেনের সাধারণ মানুষ। তবে দীর্ঘ যুদ্ধের কারণে ক্রমশ তাঁদেরও ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটছে। জুলাইয়ের শেষে দুর্নীতিদমন শাখার ক্ষমতা খর্ব করতে গিয়ে জনরোষের মুখে পড়েছিলেন জ়েলেনস্কি। ফলে ঘরোয়া রাজনীতির সমীকরণ মাথায় রেখেও এগোতে হচ্ছে জ়েলেনস্কিকে।
এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে রাশিয়ার উপর আরও অর্থনৈতিক বিধিনিষেধ চাপানোর দাবি জানাতে পারেন জ়েলেনস্কি। এই বিষয়ে ওয়াকিবহাল এক জনকে উদ্ধৃত করে ‘ব্লুমবার্গ’ জানিয়েছে, শুক্রবারের আলাস্কা-বৈঠকে পুতিন ট্রাম্পের কাছে কী কী দাবি করেছেন, তা-ও জানা এবং বোঝার চেষ্টা করবেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। সেইমতো পরবর্তী পদক্ষেপ ভাবতে পারেন তিনি। গত ফেব্রুয়ারিতে হোয়াইট হাউসের বৈঠকে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে তুমুল বাগ্যুদ্ধ হয়েছিল জ়েলেনস্কির। কিছু দিনের জন্য কিভকে সামরিক সহায়তা জোগানো বন্ধ করেছিল ওয়াশিংটন। সেই সময় অবশ্য ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়েছিল ইউরোপের দেশগুলি। অবশ্য ইউরোপের দেশগুলির সাহায্য কত দিন ইউক্রেনের সঙ্গে থাকবে, তা স্পষ্ট নয়। এই পরিস্থিতিতে রাশিয়ার তরফে নিরাপত্তা সংক্রান্ত আশ্বাস পেলে ট্রাম্পের প্রস্তাবে জমি এবং ক্ষমতা খুইয়ে জ়েলেনস্কি শান্তিচুক্তির পথে হাঁটেন কি না, তা-ই এখন দেখার।