প্রবাসে পুজো

ফরাসি হেমন্তিকায় মৃন্ময়ীর আবাহন

প্যারিসের আকাশে ছিন্ন মেঘ দেখতে দেখতে ভাবছিলাম— পুজো এসে গেল। শিরশিরে হাওয়া, ঝরা পাতাদের অভিমান আর ঝুপ করে নামা সন্ধ্যার মধ্যেই দেবীর উপাসনা।

Advertisement

শ্রেয়স সরকার

প্যারিস শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৮ ০৪:৪৪
Share:

এখানে শরতের মধ্যেও হেমন্তের এক অবিস্মরণীয় ব্যাপ্তি। কে যেন হেমন্তের পত্রবাহক এখানে। ডালে ডালে, কত শত বার্তা। জীর্ণ পত্রপুঞ্জের মধ্যেও কার জন্য যেন প্রতীক্ষা। মৃন্ময়ী কি অবশেষে এখানেও এলেন, জগতের সমস্ত লাবণ্য নিয়ে? জানি না। প্যারিসের আকাশে ছিন্ন মেঘ দেখতে দেখতে ভাবছিলাম— পুজো এসে গেল। শিরশিরে হাওয়া, ঝরা পাতাদের অভিমান আর ঝুপ করে নামা সন্ধ্যার মধ্যেই দেবীর উপাসনা।

Advertisement

গত দু’বছর ধরে এখানেই পুজো কাটছে আমার। ‘সিতে ইউনিভার্সিতে র মেসন দে ল্য অন্দে’ সম্মেলনী আয়োজিত পুজোয় আমার যাতায়াত। নতুন পাঞ্জাবির তলায় গরম পোশাক পরতে অস্বস্তি হয় না আর। বরং ফরাসি স্টেশনে বাংলায় বন্ধুবান্ধবদের ডাকাডাকি করে ট্রেনে ওঠার মজাটাই আলাদা! অষ্টমীর অঞ্জলি থেকে নবমীর ভোজ— সব কিছুই এক সঙ্গে। এখানে দেবীর আরাধনার পৌরোহিত্য করেন যিনি, তিনি ফরাসি। ‘স্বামী বীতামোহানন্দ মহারাজ’ নামেই পরিচিত। গ্রেট্জর ‘সেন্টার বেদান্তিক রামকৃষ্ণ’র কর্ণধার। দেবীকে আবাহন করেন অবশ্য তান্ত্রিক মতে। প্রতিবারই স্নিগ্ধ ছাঁচে গড়া প্রতিমা আসে। নীল পদ্মের ব্যবস্থা করা হয় শ্রীলঙ্কা থেকে। পুজোর বাড়ির রমরমা, কাজের মানুষের গুনগুন আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধুময়তা মিলেমিশে এক। অষ্টমীর অঞ্জলির সময়ে অন্বেষণ করি বাগবাজারের সেই মূর্তিময়তাকে আর সমুদ্র পেরিয়ে আসা ভাইদের ঢাকের আওয়াজে মনে হয়, কলকাতাই তরঙ্গ তুলেছে বুকে।

ফরাসি বন্ধুদের টানতে টানতে পুজো দেখতে নিয়ে যাই। তারাও এ কয়েক বছরে বেশ বুঝে গিয়েছে, বাঙালিদের উৎসবের ব্যাপারটাই আলাদা। আমার বান্ধবী এলোইস্ তো প্রতিবারই প্রচুর উৎসাহ নিয়ে শাড়ি পরে। এ বারও অপেক্ষায় রয়েছে নতুন শাড়ি পরার।

Advertisement

বাঙালির পুজো মানেই তো এলাহি ভোজ। তাই অষ্টমী-নবমীতে চলে যাই আমার প্রিয় জাপানি রেস্তরাঁ হিগুমা বা কোনও ইটালিয় খানার দোকানে। মনে পড়ে যায় সেই সব দিনের কথা, যখন বোসপুকুর-একডালিয়া-মুদিয়ালি-সুরুচি পার করে আমরা ঢুকে পড়তাম পার্ক স্ট্রিটের কোনও না কোনও রেস্তরাঁয়। এখানে প্রতিমা দেখা বা বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে খানাপিনা অবশ্য গবেষণাগারের কাজ শেষ করার পরেই। এখানে তো পুজোর ছুটি দেবে না! আমাদের ও-পার বাংলার বন্ধুরাও পুজো করেন, ববিনিতে। সেখানে পেয়েছি এক স্বতন্ত্র আন্তরিকতার স্পর্শ।

অনেক ঘোরাঘুরির পরে ক্লান্ত ও আনন্দে সর্বস্বান্ত মন নিয়ে প্যারিসের রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মনে হয়, ঝরা পাতার এক একটি কবিতা দিয়েই হোক প্রতিমা নিরঞ্জন। ততক্ষণ বাতাসে ভাসুক—

‘য়স্যা: প্রণশ্যতে পুষ্পং গর্ভো বা পততে য়দি।

ম্রিয়তে বালকো য়স্যা: কাকবন্ধ্যা চ য়া ভবেৎ।।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন