21 February

একুশে মানুষের ঢলে চুরমার করোনা-বাধা

ব্যক্তিগত শ্রদ্ধা নিবেদনের সমান্তরাল সংগঠনগত ভাবে শ্রদ্ধা নিবেদনের বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয় শহিদ বেদিতে।

Advertisement

বাপী রায়চৌধুরী

ঢাকা শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৬:৪৬
Share:

n ভাষা-শহিদ মিনারে ফুল দিতে এসেছে ছোট্ট এই মেয়েটিও। রবিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে। ছবি: বাপী রায়চৌধুরী

অতিমরির কালে প্রশাসনের তরফে নানা বিধি-নিষেধ জারি করা হয়েছিল। কিন্তু দৃপ্ত মানুষের ঢলে কখন সে সব মুছে গেল একুশের সুসজ্জিত ভাষা-শহিদ
মিনার চত্বরে।

Advertisement

শনিবার ঢাকায় পৌঁছনোর পর থেকেই শুনেছি সংশয়ের কথা— ‘এ বারে বুঝি তেমনটা আর হবে না!’ কোথায় যেন হতাশা। শনিবার রাত ১২টা বেজে এক মিনিটে একুশের সূচনায় অন্য বারে শহিদ
বেদিতে ফুল দিতে আসেন প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি। এ বারে যে তাঁদের প্রতিনিধিরা সে কাজ করবেন, জানানো হয়েছিল আগেই। কিন্তু সে সব আনুষ্ঠানিকতা মেটার পরে শহিদ মিনার চত্বর সাধারণের জন্য খুলে দিতেই জন জোয়ার। সেই পুরনো ছবি, পুরনো উৎসাহ, বাঙালির উদ্‌যাপনের আকাঙ্ক্ষা—
অক্লেশে যা খান খান করে দিল বিধি-নিষেধের গণ্ডি।

রবিবার সারাটা দিন সাদা-কালো পোশাকে মানুষ দীর্ঘ পথ খালি পায়ে এসে লাইনে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধার ফুল রেখে দিয়েছেন মাতৃভাষার স্বীকৃতির দাবিতে প্রাণ বাজি রাখা শহিদদের স্মরণে নির্মিত বেদিমূলে। দু’দণ্ড দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে স্মরণ করেছেন তাঁদের। সঙ্গে নিয়ে এসেছেন পরিজন, কচি-কাঁচাদেরও। শ্রদ্ধা জানানোর পরে সকলে ছবি তুলেছেন, নিজস্বীও। ঘুরে বেড়িয়েছেন ফুলে সাজানো সুবিশাল চত্বর জুড়ে।

Advertisement

একটা অবশ্য-গন্তব্য কম ছিল এ বারে, যা নিয়ে আফসোসের অন্ত ছিল না কারও। অন্য বার গোটা ফেব্রুয়ারি জুড়ে বইমেলা ছাউনি ফেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে। করোনা-কারণে সে মেলা এ বার এ মাসে হয়নি। হতে পারে মার্চে।

ব্যক্তিগত শ্রদ্ধা নিবেদনের সমান্তরাল সংগঠনগত ভাবে শ্রদ্ধা নিবেদনের বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয় শহিদ বেদিতে। এ বার সংগঠন-পিছু পাঁচ জন সদস্যের সংখ্যা বেঁধে দিয়েছিলেন আয়োজকেরা। শাসক আওয়ামি লিগের পক্ষে শ্রদ্ধা জানাতে এসে সাধারণ সম্পাদক ওবায়েদুল কাদের ঘোষণা করলেন, ২১ ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্রে রেখে নতুন একটি প্রয়াস শুরু করেছে বাংলাদেশ সরকার। বাংলাকে রাষ্ট্রপুঞ্জের দাপ্তরিক ভাষা করার প্রস্তাব জানিয়ে কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু হয়েছে।

এই প্রথম একুশের অনুষ্ঠানে হাজির হতে পেরে দৃশ্যতই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন নতুন ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী। ভাঙা বাংলায় বলেন, “বাঙালির এই আবেগের কথা শুনেছিলাম। কিন্তু তার মাত্রা যে এমন হতে পারে, ভাবতেও পারিনি! অমর একুশের ভাষা শহিদদের শ্রদ্ধা জানাই। একই সঙ্গে সকল মায়ের মুখের ভাষাকে
সম্মান জানাচ্ছি।”

বাংলাদেশের ৫০ বছরের সঙ্গে স্বাধীনতার নায়ক শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ চলছে এখন। শুধু ঢাকা তো নয়, ময়মনসিংহ, রাজশাহি, সিলেট থেকে বরিশাল, চট্টগ্রাম, যশোর— সর্বত্রই একুশের প্রথম প্রহরটি থেকে সারা দিন কেটেছে এমনই উৎসাহে। সন্ধ্যাবেলায় নির্বাচিতদের হাতে এই প্রথম বারের মতো ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক’ তুলে দেওয়ার অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি হাজির থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমা চেয়ে নিলেন, একুশের
অনুষ্ঠানে সশরীরে উপস্থিত না-হতে পারার জন্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন