দুলছে ঘর, এটাই তবে ক্যালিফর্নিয়ার কম্পন!

আমরা থাকি লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে ৩০ মাইল পুবে। কাছেই ক্যালটেক বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানকার ভূতাত্ত্বিক বিভাগের বিশেষজ্ঞদের মতামত শুনছিলাম টিভিতে।

Advertisement

প্রিয়দর্শী মজুমদার

লস অ্যাঞ্জেলেস শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৯ ০৪:০৬
Share:

ফাটল: ভূমিকম্পের পরে। ক্যালিফর্নিয়ার রিজক্রেস্টের এক হাইওয়েতে। ছবি: এএফপি।

মার্কিন স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জুলাই ৪-এর ছুটি। তাই সকালে বাড়িতেই ছিলাম। সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ হঠাৎ দুলুনি। প্রায় দশ সেকেন্ড হবে। সবে আড়াই বছর হল নিউ অর্লিয়্যান্স থেকে দক্ষিণ ক্যালিফর্নিয়াতে এসেছি। এত দিন সে রকম কোনও কম্পন টের পাইনি। তাই ক্যালিফর্নিয়া কম্পনের কথা অনেক পড়ে থাকলেও প্রথমে হকচকিয়ে গিয়েছিলাম। পরে টিভি ও ইন্টারনেটে দেখলাম ১৯৯৯-এর পরে নাকি এত বড় কম্পন (রিখটার স্কেলে যার মাত্রা ৬.৪) দক্ষিণ ক্যালিফর্নিয়ায় হয়নি।

Advertisement

আমরা থাকি লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে ৩০ মাইল পুবে। কাছেই ক্যালটেক বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানকার ভূতাত্ত্বিক বিভাগের বিশেষজ্ঞদের মতামত শুনছিলাম টিভিতে। শুনলাম, কম্পনের উৎসস্থল রিজক্রেস্ট শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে। রিজক্রেস্টের কয়েকটি জায়গায় আগুন ধরে গিয়েছে, বেশ কিছু বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কয়েক জন আহতও হয়েছেন। একটাই ভাল কথা, বিশেষ ক্ষয়ক্ষতি হয়নি, কোনও প্রাণহানিও হয়নি। খবরে দেখলাম, প্রায় ৬৫০ মাইল দীর্ঘ আর ৩৫০ মাইল প্রস্থ জুড়ে এই কম্পন অনুভূত হয়েছে বলে, দক্ষিণে মেক্সিকো, পূর্বে লাস ভেগাস এবং উত্তরে চিকো পর্যন্ত।

এই বছরই লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টিতে ভূমিকম্পের আগাম সতর্কতা জানানোর ব্যবস্থা চালু হয়েছে। ‘শেকঅ্যালার্টএলএ’ (ShakeAlertLA) নামে স্মার্ট ফোনে একটি অ্যাপ রয়েছে, যার মাধ্যমে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস পাওয়া যেতে পারে। যদিও আজ সে রকম কোনও সতর্কতা সেই অ্যাপে আসেনি। তার কারণ, ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির আশঙ্কা থাকলেই এই অ্যাপের মাধ্যমে সতর্কবার্তা মোবাইলে পাঠানো হয়।

Advertisement

আমরা রিজক্রেস্ট থেকে প্রায় একশো মাইল দূরে থাকি। উৎসস্থলের তুলনায় এ দিকে কম্পনের মাত্রা অনেকটাই কম। তবু যথেষ্ট ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। গোটা ঘর দুলছে। কত ক্ষণ চলবে, জানি না। কী হতে পারে, তা-ও বুঝতে পারছি না। অন্য ঘরে স্ত্রী ও মেয়ে ছিল। হাঁক পেড়ে দেখলাম, তারা ঠিক আছে তো! দেশের মতো এখানে ভূমিকম্পের সময়ে বাইরে বেরোনোর রেওয়াজ নেই। বরঞ্চ ভেতরেই থাকতে বলা হয়। দেওয়াল থেকে জিনিসপত্র ঘাড়ের ওপর পড়ে যেতে পারে, সেই আশঙ্কা করতে করতেই অবশ্য কম্পন থেমে গেল।

মেয়ে ইন্টারনেট দেখে কনফার্ম করল, এটা সত্যিই ভূমিকম্প। কাছেই আমার স্কুল জীবনের এক বন্ধু থাকে। তাকে ফোন করে দেখলাম, তারা ঠিক আছে তো? বন্ধুরা যারা আমাদের খোঁজ নেওয়ার জন্য ফোন বা হোয়াটসঅ্যাপ করছিল, তাদেরও আশ্বস্ত করলাম যে, আমরা সবাই বহাল তবিয়তেই আছি। এ বারের মতো ফাঁড়া কাটল!

লেখক সিভিল এবং এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ার

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন