(বাঁ দিকে) ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইলন মাস্ক (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, তিনি ‘বন্ধু’ তথা মার্কিন শিল্পোদ্যোগী ইলন মাস্ককে অনেক সাহায্য করেছেন। তার পরেই মাস্ক পাল্টা দাবি করলেন যে, তিনি সাহায্য না করলে ট্রাম্প আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিততেই পারতেন না! দু’জনের সম্পর্ক যে আগের মতো মসৃণ নেই, সাম্প্রতিক ঘটনাক্রম থেকে তার ইঙ্গিত মিলছিলই। কিন্তু এ বার সেই ট্রাম্প-মাস্ক সংঘাত প্রকাশ্যে চলে এল।
বৃহস্পতিবার ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, মাস্ককে ছাড়াই তিনি আমেরিকার পেনসিনভেনিয়া প্রদেশে জয়ী হতে পারতেন। ট্রাম্পের ওই দাবি সম্বলিত ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই একটি পোস্ট করেন টেসলা এবং এক্স-এর কর্ণধার মাস্ক। সেখানে তিনি লেখেন, “আমার সাহায্য ছাড়া ট্রাম্প এই নির্বাচনে জিততে পারতেন না।” মাস্কের দাবি, সে ক্ষেত্রে মার্কিন আইনসভার নিম্নকক্ষ হাউস অফ রিপ্রেজ়েন্টিটিভসে ডেমোক্র্যাটরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতেন আর উচ্চকক্ষ সেনেটে অল্পের জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা বজায় থাকত রিপাবলিকানদের। অবশ্য ভোটে জিততে ট্রাম্পকে তিনি কী ভাবে সাহায্য করেছিলেন, তার ব্যাখ্যা দেননি মাস্ক।
অন্য দিকে, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সুর আরও চড়িয়ে ‘বড় বোমা’ ফেলার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন মাস্ক। বিতর্কিত ‘এপস্টাইন ফাইলে’ ট্রাম্পের নাম রয়েছে, সে কথা উল্লেখ করে দাবি করেছেন, শুধু এই কারণেই ফাইলটি প্রকাশ্যে আনা হয়নি। বোমা সংক্রান্ত পোস্টটি পুনরায় প্রকাশ্যে এনে মাস্ক লিখেছেন, “ভবিষ্যতের জন্য এটাকে মাথায় রেখে দিন। সত্যি সামনে আসবে।”
প্রসঙ্গত, জেফ্রি এপস্টাইন নামের এক বিতর্কিত ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ এক জনের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা ঠুকেছিলেন ভার্জিনিয়া গিফরে নামের এক মহিলা। মামলার নথিতে এপস্টাইন-ঘনিষ্ঠদের যাবতীয় তথ্য তুলে ধরা হয়েছিল। শোনা গিয়েছিল, যৌন কেলেঙ্কারিতে দোষী সাব্যস্ত এপস্টাইনের সঙ্গে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা। এ-ও শোনা যায় এপস্টাইনের বিলাসবহুল বিমান ‘লোলিটা এক্সপ্রেস’-এ চেপে বেশ কয়েক বার বিভিন্ন দেশে গিয়েছিলেন ট্রাম্প। চলতি বছরের গোড়ায় ওই ফাইলের একাংশ প্রকাশ্যে আনা হয়। কিন্তু মাস্ক ওই ফাইলের পুরো অংশ প্রকাশ্যে আনার দাবি জানিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, একটি সাক্ষাৎকারে প্রশ্নকর্তার সুরে সুর মিলিয়ে মাস্ক বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ‘ইমপিচ’ (পদচ্যুত) করা উচিত এবং তাঁর জায়গায় ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্সকে বসানো উচিত।
গত ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় বারের জন্য আমেরিকার প্রেসিডেন্টের কুর্সিতে বসে মাস্ককে নিজের বিশেষ পরামর্শদাতা হিসাবে নিয়োগ করেছিলেন ট্রাম্প। বলেছিলেন, ‘‘ওঁর সঙ্গে আমার সম্পর্ক দারুণ।’’ মাস্কের জন্য আলাদা একটি দফতর তৈরিও করা হয়েছিল। সেই ‘সরকারি দক্ষতা বিষয়ক দফতর’ (ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা ডিওজিই)-এর কাজ ছিল প্রশাসনের ‘অপ্রয়োজনীয় ব্যয়’ কাটছাঁট এবং অর্থনৈতিক সাশ্রয়। কিন্তু ট্রাম্পের ‘জনকল্যাণমূলক’ বিলকে ‘জঘন্য পদক্ষেপ’ বলে চিহ্নিত করে প্রশাসনিক উপদেষ্টার পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। ছেড়েছিলেন ‘খরচ কমানোর দফতরের’ দায়িত্বভারও।
এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার ট্রাম্প বলেন, “আমি ইলনের ব্যাপারে খুবই হতাশ। ওঁর সঙ্গে আর দারুণ সম্পর্ক থাকবে কি না জানা নেই।” তার পর একের পর এক ইঙ্গিতপূর্ণ পোস্ট করে মাস্ক বুঝিয়ে দিয়েছেন, দু’জনের মধ্যে ‘দারুণ সম্পর্ক’ আর থাকছে না।