Raúl Castro

‘কাস্ত্রোযুগ’-এর অবসান কিউবায়! রাজনীতি থেকে অবসর ঘোষণা ফিদেলের ভাই রাউলের

ফিদেল কাস্ত্রো বেঁচে নেই। সরে যাচ্ছেন রাউলও। ‘কাস্ত্রোযুগ’-এর অবসান কিউবায়। ষাট দশকে এই প্রথম।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

হাভানা শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২১ ১৮:৫৩
Share:

রাউল কাস্ত্রো। —ফাইল চিত্র।

বিপ্লবের ভাষা দেশবাসীকে শিখিয়েছিলেন তাঁরাই। সেই কিউবায় এ বার ‘কাস্ত্রোযুগ’-এর অবসান হতে চলেছে। বছর তিনেক আগে চলে গিয়েছেন বিপ্লবের নায়ক ফিদেল কাস্ত্রো। এ বার রাজনীতি থেকে অবসর ঘোষণা করলেন তাঁর ভাই রাউল কাস্ত্রোও। কমিউনিস্ট পার্টি অব কিউবার যাবতীয় দায়দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি। আগামী ২৯ এপ্রিল আনুষ্ঠানিক ভাবে দলের নেতৃত্ব ছাড়ছেন তিনি। নতুন প্রজন্মের যোগ্যতম ব্যক্তিকে নেতা নির্বাচিত করতে দলকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

Advertisement

দেশের অর্থনীতির উপর থেকে অতিমারির প্রকোপ কাটিয়ে ওঠা নিয়ে শুক্রবার থেকে কমিউনিস্ট পার্টি অব কিউবার অষ্টম অধিবেশন শুরু হয়েছে। চারদিন ব্যাপী ওই অধিবেশন শেষ হবে সোমবার। ওই দিনই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিচ্ছেন রাউল। শুক্রবার রাউল বলেন, ‘‘প্রথম সচিব হিসেবে নিজের কাজ শেষ করলাম। কর্তব্য পালন করতে পেরেছি ভেবেই সন্তুষ্ট বোধ করছি। যাত্রা শেষ করছি পিতৃভূমির উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন নিয়েই।’’ যদিও পাঁচ বছর আগেই অবসরের কথা জানিয়ে দিয়েছিলেন রাউল। ২০১৬-র অধিবেশনেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, অধিবেশনে শেষ বারের জন্য নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি।

উত্তরসূরি হিসেবে নিজে কারও নাম সুপারিশ করেননি রাউল। তবে মিগুয়েল দিয়াজ-কানেলের প্রতি তাঁর স্নেহ সর্বজনবিদিত। ২০১৮-র ১৯ এপ্রিল রাউল দেশের প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরে দাঁড়ালে, মিগুয়েলই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। সংসদীয় নির্বাচনের মাধ্যমেই নির্বাচিত হন মিগুয়েল। তবে তখনও দলের রাশ রাউলের হাতেই ছিল। মিগুয়েলের নির্বাচিত হওয়ার পিছনে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বলে মনে করেন কূটনীতিকরা। তাঁদের যুক্তি, কারণ বয়স ৬০ হলেও মিগুয়েল অনেক বেশি বাস্তববাদী। একদলীয় ব্যবস্থাকে না ঘাঁটিয়েও দেশের অর্থনীতিকে উন্মুক্ত করতে সচেষ্ট হয়েছেন তিনি।

Advertisement

তবে রাউল অবসর নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই যে কিউবায় ‘কাস্ত্রোযুগ’-এর অবসান হচ্ছে, ১৯৫৯ সালে ফিদেলের হাত ধরে যার সূত্রপাত ঘটে। তবে পরবর্তী পরিস্থিতি কী হতে চলেছে, তা নিয়ে আশঙ্কায়ও রয়েছেন অনেকে। তাঁদের মতে, অতিমারি গোটা পৃথিবীকে পাল্টে দিয়েছে। ‘কাস্ত্রোযুগ’-এর অবসানে কিউবার জন্য কী অপেক্ষা করছে, তা-ই এখন দেখার।

১৯৫৯ সালে ফুলগেনশিও বাতিস্তাকে ক্ষমতাচ্যূত করে দেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর ১৯৬৫ সালে কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান নিযুক্ত হন ফিদেল। ২০১১ সাল পর্যন্ত সেই দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। তার পর ওই দায়িত্ব যায় রাউলের হাতে। ১৯৭৬ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত দেশের প্রেসিডেন্টও ছিলেন ফিদেল। শারীরিক অসুস্থতার জেরে ভাই রাউলকে জায়গা ছেড়ে দেন তিনি। বিপ্লবের দিনেও দাদার ছায়াসঙ্গী হিসেবে সংগ্রাম চালিয়ে যান রাউল।

তবে জীবনের বেশির ভাগ সময়টাই ফিদেলের পরিচয়ে পরিচিত হিসেবে কাটিয়েছেন রাউল। তবে শাসনক্ষমতা হাতে পাওয়ার পর নিজের পৃথক পরিচয় গড়ে তুলতে চেষ্টায় কোনও ত্রুটি রাখেননি তিনি। ২০১৪ সালে তিনিই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে সমঝোতায় আসতে সক্ষম হন। তবে দেশকে অর্থনৈতিক সঙ্কটের দিকে ঠেলে দেওয়ায় বিস্তর সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়েছে রাউলকে। তবে সক্রিয় রাজনীতি থেকে কেন সরে যাচ্ছেন ৮৯ বছরের রাউল, তার কোনও সদুত্তর মেলেনি। তবে রাউলের বক্তব্য, ‘‘কোনও কিছুই আমার উপর চাপ সৃষ্টি করছে না। চাপে পড়ে এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছি না আমি। যত দিন বেঁচে থাকব, তত দিন পিতৃভূমি, বিপ্লব এবং সমাজতন্ত্রকে রক্ষা করে যাব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন