কঙ্কালসার, অনাহারক্লিষ্ট, উলঙ্গ শিশুর ছবি ‘যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ’ ভাবল ফেসবুক!

উলঙ্গ শিশু? হ্যাঁ, মেয়েটির গায়ে জামাকাপড় নেই বটে। কিন্তু সে যে ‘উলঙ্গ’, ছবি দেখে এই ভাবনা আসা দুষ্কর। শীর্ণকায় শরীর, পিতপিতে চামড়া ঠেলে বেরিয়ে আসছে হাড়।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নিউ ইয়র্ক শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:১৭
Share:

অনাহারক্লিষ্ট: আমাল হুসেনের এই ছবি সরিয়ে দিয়েছিল ফেসবুক।

একটি মার্কিন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছিল খবরটি। যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইয়েমেনে অনাহারে ভুগছে হাজার হাজার শিশু। খবরের সঙ্গে ছিল বেশ কয়েকটি ছবিও। তার মধ্যে একটি কঙ্কালসার ছবির নীচে লেখা— ‘সাত বছরের ইয়েমেনি কন্যা আমাল হুসেন, কয়েক মাস ধরে বিন্দুমাত্র পুষ্টিকর খাবার জোটে না ওর’।

Advertisement

দ্রুত সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছিল সেই ছবি। ফেসবুক ‘ব্লক’ করে দেয় সেটা। সেই ছবি ও খবর যাঁরা শেয়ার করেছেন, তাঁদের কাছে বার্তা যায়— ‘ফেসবুকের নীতিতে স্পষ্ট বলা রয়েছে, উলঙ্গ শিশুর ছবি ছাপা যাবে না। কোনও নাবালক বা নাবালিকার সম্পর্কে যৌন ইঙ্গিতও করা যাবে না। শালীনতা বজায় রাখার সেই নিয়ম লঙ্ঘন করার জন্য আপনার পোস্টটি ব্লক করে দেওয়া হল।’

উলঙ্গ শিশু? হ্যাঁ, মেয়েটির গায়ে জামাকাপড় নেই বটে। কিন্তু সে যে ‘উলঙ্গ’, ছবি দেখে এই ভাবনা আসা দুষ্কর। শীর্ণকায় শরীর, পিতপিতে চামড়া ঠেলে বেরিয়ে আসছে হাড়। কাঠির মতো হাত-পাগুলো বাঁকা। দৃষ্টি প্রাণহীন। এই মর্মান্তিক ছবিতে ফেসবুক ‘উলঙ্গ, তাই যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ এবং অশালীন’ তকমা লাগানোয় আপত্তি জানাতে শুরু করেন অসংখ্য নেটিজ়েন। ওয়াশিংটনের কলেজপড়ুয়া জারজে ফ্যাংয়ের কথায়, ‘‘ইয়েমেনে কী ঘটছে, সে দিকে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে এই পোস্টটি শেয়ার করেছিলাম। ব্লক করার সময়ে ফেসবুক সেই গুরুত্বটা বুঝল না।’’ ছবি-সহ খবরটি ফেসবুকে অন্তত ৪৩ হাজার বার শেয়ার করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে কতগুলো পোস্টকে ব্লক করা হয়েছে, সেই পরিসংখ্যান জানাতে পারেনি ফেসবুক।

Advertisement

আরও পড়ুন: বিলেতে কেক বানিয়ে সেরা বাঙালি, বিশ্বাসই হচ্ছে না কলকাতার রাহুলের

প্রবল প্রতিবাদের মুখে এক দিন পরে অবশ্য নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় জ়াকারবার্গের সংস্থা। বিবৃতি জারি করে বলা হয়, ‘‘ফেসবুকে আমরা উলঙ্গ বাচ্চার ছবি ছাপতে দিই না। কিন্তু আন্তর্জাতিক খবরের ক্ষেত্রে এই ছবিটি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। তাই এটিকে ব্লক করা হচ্ছে না।’’ যে মার্কিন দৈনিকে এই ছবি ছাপা হয়েছিল, তাদের ফেসবুক পেজে অবশ্য ছবিটি ব্লক করা হয়নি। বিবৃতি দিয়ে সংবাদপত্রটি বলে, ‘‘আপনি ছবিগুলো দেখে চোখ বন্ধ করতেই পারেন। কিন্তু ছবিগুলো দেখার সুযোগ তো দিতে হবে!’’ ‘কেন আমরা এই ছবি ছেপেছিলাম’ এই মর্মে পরের দিন কাগজে একটি রিপোর্টও প্রকাশ করে সংবাদপত্রটি।

কী ছাপা উচিত, সংবাদমাধ্যমকে প্রতিনিয়ত এর উত্তর দিতে হয়। এখন সোশ্যাল মিডিয়াকেও। কিন্তু নিয়ম-নীতির চাপে জরুরি খবর যে হারিয়ে যেতে পারে, সেটাই দেখিয়ে দিল না-খেতে পাওয়া আমাল হুসেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন