প্রয়াত ফাদার পল দ্যতিয়েন

মারা গেলেন ফাদার পল দ্যতিয়েন। গত সোমবার ভারতীয় সময় বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। বাংলা ভাষাপ্রেমী দ্যতিয়েনের মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৯২ বছর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:০৫
Share:

পল দ্যতিয়েন

মারা গেলেন ফাদার পল দ্যতিয়েন। গত সোমবার ভারতীয় সময় বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। বাংলা ভাষাপ্রেমী দ্যতিয়েনের মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৯২ বছর।

Advertisement

বেলজিয়ামের মফস্্সল শহর রশফরে জন্ম দ্যতিয়েনের। কিন্তু জীবনের অনেকটা সময় তিনি কাটিয়েছেন এই দেশে। এই শহরে। পড়িয়েছেন সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে। উত্তর কলকাতার তেলিপাড়া লেন থেকে পাঞ্জাবি আর ঢোলা পায়জামা পরা দ্যতিয়েনের সাইকেলে চড়ে যাতায়াতের ছবি অনেকের স্মৃতিতে এখনও টাটকা।

শহরকে ভালবাসার পাশাপাশি দ্যতিয়েন ভালবেসে ফেলেছিলেন বাংলা ভাষাকে। তবে এখানে আসার অনেক আগেই তিনি ১৯৪৪ সাল নাগাদ সোসাইটি অফ জেসাসে শুরু করেন ধর্ম জীবন। ভারতে এই সংগঠনের হয়ে আসতে হবে জেনে শিখতে শুরু করেছিলেন সংস্কৃত। আর তখন হাতে আসে রোমান হরফে লেখা বাংলা ভাষা শেখার বই ‘প্রাইমার।’ ওই বইয়ের সাহায্যে শুরু করেন বাংলা ভাষা শেখা। ১৯৪৯ সালে আসেন এই দেশে। থাকতে শুরু করেন শ্রীরামপুরে।

Advertisement

১৯৫১ সালে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের তৎকালীন রেক্টর ফাদার হেনরি বারের কাছে গিয়ে দ্যতিয়েন অনুরোধ করেন, তাঁকে কোনও গ্রামে পাঠানো হোক। কারণ পুঁথিগত বাংলা তিনি শিখলেও ঝরঝরে বাংলা তিনি আয়ত্ত করতে পারেননি। রেক্টর তাঁকে দশ বছর পরে আসতে বলেছিলেন। এর মধ্যে সুন্দরবনের বাসন্তীতে বাংলা মাধ্যমের সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলে তাঁকে শিক্ষক হিসাবে নিযুক্ত করা হয়।

এরই মধ্যে ১৯৫৯ সালে ‘দেশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তাঁর লেখা ‘ডায়েরির ছেঁড়া পাতা’। ১৯৬৩তে আবার তিনি ‘দেশ’ পত্রিকায় একই শিরোনামে লিখতে শুরু করেন। মধ্য কিছুদিন বিরতি। ১৯৬৯ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত আবার টানা লেখেন ‘দেশ’ পত্রিকায় সেই ‘ডায়েরির ছেঁড়া পাতা’।

ইতিমধ্যেই ‘ডায়েরির ছেঁড়া পাতা’ বই হিসাবে প্রকাশিত হয়। ১৯৭১-’৭২ সালে বইটি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘নরসিংহ দাস পুরস্কার’ পান।

১৯৭৭ সালে তিনি বেলজিয়ামে ফিরে গিয়েছিলেন ।

গত ২০০৬ সালে আবার ‘দেশ’ পত্রিকায় লিখতে শুরু করেন দ্যতিয়েন। লেখেন ‘পুরোনো সেই দিনের কথা’, ‘আটপৌরে স্মৃতি’। এখন প্রকাশিত হচ্ছে ‘সাধাসিধে খসড়া’। তাঁর সৃষ্টিশীল লেখার প্রায় সবই প্রকাশিত হয়েছে ‘দেশ’ পত্রিকায়।

মঙ্গলবার দ্যতিয়েনের মৃত্যুর খবর রফি আহমেদ কিদওয়াই রোডের প্রভু যীশু গির্জায় এসে পৌঁছয়। গীর্জার সুপিরিয়র পি জে যোশেফ এদিন বলেন, ‘‘ফাদারের মৃত্যু সংবাদের ই-মেলের মাধ্যমে আজ আমাদের কাছে এসে পৌঁছেছে।’’

সাতাত্তর সালে বেলজিয়ামে ফিরে যাওয়ার পরে বার কয়েক তিনি এ দেশে এসেছিলেন। চিত্রবাণীর প্রশাসক টমাস কার্লো জানালেন, দ্যতিয়েন শেষবারের জন্য কলকাতায় এসেছিলেন গত ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। সপ্তাহ খানেক কাটিয়েছিলেন তাঁদের সঙ্গে। আর এদিন তাঁরা পেলেন দ্যতিয়েনের চলে যাওয়ার খবর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন