হংকঙের ‘ওয়াং ফুক কোর্ট’ আবাসনে বৃহস্পতিবারও চলছে আগুন নেভানোর কাজ। ছবি: রয়টার্স
হংকঙের আবাসনে একের পর এক বহুতলকে অল্প সময়ের মধ্যে গ্রাস করেছিল আগুন। সেই আগুন দ্রত ছড়িয়ে পড়েছিল এক তলা থেকে অন্য তলায়। দমকলকর্মীরা চেষ্টা করেও খুব বেশি কিছু করতে পারেননি। কী ভাবে এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল সেই আগুন, এখন তা তদন্ত করে দেখছে পুলিশ। তদন্তকারীদের একাংশ মনে করছেন, অগ্নিকাণ্ডের নেপথ্যে রয়েছে ওই বহুতলের নির্মাণ সামগ্রী। এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৭৫।
সংবাদ সংস্থা এপি বলছে, আবাসনের যে বহুতলে ঘটনাচক্রে আগুন লাগেনি, সেখানকার জানলায় স্টাইরোফোম লাগানো রয়েছে বলে দেখেছেন দমকল কর্মীরা। অর্থাৎ বাকি সাতটি বহুতলেও একই স্টাইরোফোম ব্যবহার করা হয়েছিল। মনে করা হচ্ছে, যে বহুতলগুলিতে আগুন লেগেছিল, তার জানলায় এগুলি থাকার কারণেই আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ইতিমধ্যে আবাসনের সংস্কারের দায়িত্বে যে ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থা ছিল, তার তিন শীর্ষ আধিকারিককে গ্রেফতার করা হয়েছে।
হংকঙের ওই আবাসনে ছিল মোট আটটি বহুতল। আশির দশকে তৈরি হয়েছিল সেগুলি। সেই বহুতলগুলিতে সংস্কারের কাজ চলছে। তার মাঝেই সাতটি বহুতলে আগুন লাগে বুধবার। তদন্তকারীদের একাংশ মনে করছেন, স্টাইরোফোমের কারণেই আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল।
স্টাইরোফোম কী?
পেট্রোলিয়ামজাত প্লাস্টিক পলিস্টাইরিন দিয়ে তৈরি হয় স্টাইরোফোম। নির্মাণ, খাবার প্যাকিংয়ের ক্ষেত্রে এই জিনিসটি ব্যবহার করা হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি দেশ-সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই স্টাইরোফোম নিষিদ্ধ। কারণ, এই পদার্থটি পচনশীল নয়। তা ছাড়া বিজ্ঞানীদের একাংশের দাবি, স্টাইরোফোম থেকে ক্যানসার হতে পারে।
স্টাইরোফোমের গঠনগত উপাদানের কারণে খুব কম তাপমাত্রাতেও তা সহজেই জ্বলে ওঠে। দীর্ঘ ক্ষণ ধরে তা জ্বলতে থাকে। যখন স্টাইরোফোম জ্বলে, তখন কালো ধোঁয়া উৎপন্ন হয়। কার্বন মনোক্সাইডের মতো বিষাক্ত গ্যাসও নির্গত হয়। এই স্টাইরোফোমের মধ্যে বাতাসের পকেট থাকে। ৯৫ থেকে ৯৮ শতাংশ বাতাস দিয়ে তৈরি এটি। সে কারণে হালকা হয় স্টাইরোফোম। আর সেই কারণেই তাতে আগুন লাগলে তা দ্রুত ছড়িয়েও পড়ে।
হংকঙের সংবাদমাধ্যম ‘দ্য স্ট্যান্ডার্ড’ বলছে, আদালতে একটি নোটিস পেশ করেছে আবাসনের মালিকদের সংগঠন। সংস্কারের জন্য কী কী উপাদান ব্যবহার করা হবে, তা জানিয়ে গত বছর নোটিসটি দিয়েছিল ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থা। সেই নোটিসে বলা হয়েছিল, সিমেন্টের টুকরো পড়ে যাতে জানলার কাচ ভেঙে না যায়, তাই তা ‘ফোমবোর্ড’ দিয়ে ঢেকে দেওয়া হবে। তা ছাড়া এই স্টাইরোফোম বেশ সস্তা। সে কারণেও সংস্কারের কাজের সময় এর ব্যবহার বেশি। সেই ‘ফোমবোর্ড’-এর কারণেই কি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল আগুন, এখন তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
হংকঙের ‘ওয়াং ফুক কোর্ট’ আবাসনে ছিল মোট ২,০০০টি ফ্ল্যাট। তাতে বাস করতেন ৪,৮০০ জন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই বৃদ্ধ। আবাসনের সাতটি বহুতলে আগুন লেগে আহত হয়েছেন অন্তত ৭০ জন। মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৭৫।