বৃদ্ধাবাসে তদন্তে সেনা। ছবি- এএফপি।
ঠিক যেন সিনেমা! অসহায় মানুষগুলোর হাতে হাতকড়া, মাথায় ঠোকানো বন্দুকের নল। গুলির আঘাতে পর পর ১৬ জন লুটিয়ে পড়লেন মাটিতে। রক্তাক্ত মাটিতে মৃতদেহের সার ঘিরে তখন উল্লাসে ফেটে পড়ছে বন্দুকবাজেরা। শুক্রবার ইয়েমেনের বন্দর শহর আডেনে এমনই ঘটল।
এ দিন দুপুর সাড়ে বারোটা নাগাদ আডেনের এক বৃদ্ধাবাসে আততায়ীরা গুলি চালায়। নিহত হন অন্তত ১৬। তাঁদের মধ্যে চার জন ভারতীয় সন্ন্যাসিনীও রয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। বৃদ্ধাবাসটি মাদার টেরিজা প্রতিষ্ঠিত কলকাতার মিশনারিজ অব চ্যারিটির উদ্যোগে চালানো হয়। ওই সংস্থার তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে, নিহত সন্ন্যাসিনীদের মধ্যে এক জন ভারতীয়। তিনি আদতে ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা। নাম আনসেলম। বাকি তিন সন্ন্যাসিনী রোয়ান্ডা ও কেনিয়ার মানুষ। আইএস জঙ্গিরাই এই হামলা চালিয়েছে বলে মনে করছে পুলিশ।
দীর্ঘদিন ধরেই ইয়েমেনে রাজনৈতিক অস্থিরতা জারি রয়েছে। আল কায়দা ও পরে আইএসের আক্রমণ থেকে বাঁচতে ইয়েমেনের রাষ্ট্রপতি আবেদ্রাবো মনসুর হাদি সাময়িক ভাবে সানা থেকে আডেনে রাজধানী স্থানান্তরিত করার নির্দেশ দেন। এর
পর থেকেই বার বার জঙ্গিদের নিশানায় উঠে এসেছে আডেন। সোমবারই এই এলাকায় গাড়ি বোমা বিস্ফোরণে অন্তত চার জন নিহত হন। ১৭ ফেব্রুয়ারি অন্য একটি আত্মঘাতী হামলায় নিহত হন ১৪ সেনা। দু’টি ঘটনাতেই দায় স্বীকার করেছে আইএস জঙ্গিগোষ্ঠী।
বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ জানিয়েছেন, আক্রান্ত ভারতীয়দের সম্পর্কে তথ্য জোগাড় করা হচ্ছে। বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ টুইটারে শোক প্রকাশ করে বলেন, নিষেধ সত্ত্বেও এই সন্ন্যাসিনীরা ইয়েমেনে রয়ে গিয়েছিলেন।
প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যেই কাজ করে চলেছিলেন মিশনারিজ অব চ্যারিটির কর্মীরা। কর্তৃপক্ষ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই বৃদ্ধাবাসে প্রায় ৮০ জন থাকতেন। মায়ের সঙ্গে দেখা করতে এসেছে বলে রক্ষীকে দরজা খুলতে বলে এক জঙ্গি। প্রথমে নিরাপত্তারক্ষীকে গুলি করে মারে তারা। তখন বাইরে বন্দুক হাতে পাহারায় আরও দুই জঙ্গি। তার পর চলে এলোপাথাড়ি গুলি। ঘরে ঢুকে অসহায় বৃদ্ধ মানুষগুলোর হাতে হাতকড়া পরিয়ে মাথায় গুলি করে খুন করে জঙ্গিরা। অন্যান্য দিনের মতোই দৈনন্দিন কাজে ব্যস্ত ছিলেন সন্ন্যাসিনীরা। অতর্কিত আক্রমণে তাঁরা সামান্য সতর্কতাটুকুও নিতে পারেননি। তারই মধ্যে এক সন্ন্যাসিনী ফ্রিজের ভিতর লুকিয়ে প্রাণ বাঁচান। ঘটনার পরে বৃদ্ধাবাস ছেড়ে পালায় দুষ্কৃতীরা। ইয়েমেনে মিশনারিজ অব চ্যারিটির উপর হামলা এই প্রথম নয়। ১৯৯৮ সালে জঙ্গিদের গুলিতে নিহত হন তিন সন্ন্যাসিনী।