রুদ্ধশ্বাস চিত্রনাট্যের সাক্ষী রইল ডেল্টা এয়ার লাইন্সের ৭৬৭ বোয়িং বিমানের যাত্রীরা। প্রতীকী ছবি।
নীচে প্রশান্ত মহাসাগর। আর তার থেকে কয়েক হাজার ফুট উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে বিমান। হঠাৎই তালজ্ঞানশূন্য হয়ে বিমানের বেরোনোর দরজা খোলার চেষ্টা করতে শুরু করলেন এক যুবক। ছুটে আসেন বিমানকর্মীরা। বাধা দিতে গিয়ে মারধরও খেয়ে বসলেন কিছু বিমানকর্মী ও যাত্রীদের অনেকে। অবশেষে উপায় না দেখে ওই যুবকের মাথায় মদের বোতল দিয়ে আঘাত করলেন এক বিমানকর্মী। পর পর দু’বার। ভেঙে চুরমার হয়ে গেল বোতল দু’টি।
বৃহস্পতিবার এমনই রুদ্ধশ্বাস চিত্রনাট্যের সাক্ষী রইল ডেল্টা এয়ার লাইন্সের ৭৬৭ বোয়িং বিমানের ২০০ জন যাত্রী। সিয়াটল থেকে বেজিং যাচ্ছিল উড়ানটি। ঘটনার পরেই তড়িঘড়ি ফের সিয়াটল-টাকোমা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফিরিয়ে আনা হয় সেটিকে।
ঘটনায় অভিযুক্ত ২৩ বছরের জোসেফ ড্যানিয়েল হ্যাডককে বৃহস্পতিবার রাতেই গ্রেফতার করা হয়েছে। এক বিমানকর্মী ও যাত্রীকে জখম অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সূত্রের খবর, বিমানকর্মীকে মারধরের অভিযোগে অন্তত ২০ বছরের জেল হতে পারে হ্যাডকের। সঙ্গে ২৫ হাজার ডলারের জরিমানা। আপাতত তাঁকে জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
আরও খবর
ইনিই ব্রিটেনের প্রথম পুরুষ মা! সুস্থ আছে নবজাতক
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী, বিমানকর্মীদের বিশেষ টিকিটে বৃহস্পতিবার ওই ৭৬৭ বোয়িং বিমানের প্রথম শ্রেণিতে ওঠেন হ্যাডক। উড়ানের আগে বিমানকর্মীদের কাছ থেকে একটি মদের বোতল চেয়ে নেন তিনি। তবে তাতে তাঁর বিশেষ নেশা হয়নি বলেই জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। বিমানটি যখন প্রশান্ত মহাসাগর সংলগ্ল ভ্যাঙ্কুভার দ্বীপের উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে, সে সময় শৌচাগারের দিকে এগিয়ে যান হ্যাডক। তারপর এক বিমানকর্মীকে প্রশ্ন করে ফের আসনে এসে বসেন। এর দু’মিনিটের মাথায় হঠাৎই বিমানের বাইরের দরজার কাছে গিয়ে সেটিকে খোলার চেষ্টা করতে থাকেন হ্যাডক।
সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে ধরে ফেলেন দু’জন বিমানকর্মী। তাঁদের ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন হ্যাডক। বাধ্য হয়েই যাত্রীদের সাহায্য চাওয়া হয়। সঙ্কেত পাঠানো ককপিটেও। এক বিমানকর্মীর মুখে ঘুষি মারেন হ্যাডক। এক যাত্রীর মাথায় মদের বোতল দিয়ে আঘাতও করেন। এর পরেও হ্যাডককে থামানো যাচ্ছে না দেখে এক বিমানকর্মী বাধ্য হয়ে হ্যাডকের মাথায় দু’টি মদের বোতল দিয়ে আঘাত করেন। ভেঙে চুরমার হয়ে যায় বোতল দু’টি।
তবে তাতেও দমানো যায়নি ওই যুবককে। বিমানের যাত্রীরা জানান, এর পরেও চিৎকার করে শাসাতে থাকেন হ্যাডক। এক যাত্রী হাত দিয়ে তাঁর মাথা চেপে ধরারও চেষ্টা করেন, তাতেও ফল হয়নি। এর মধ্যেই কোনও মতে ফের সিয়াটল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফিরিয়ে আনা হয় বিমানটিকে। যাত্রীরা হ্যাডককে সামলানোর চেষ্টা করলেও রণে ভঙ্গ দেননি যুবক। শেষমেশ পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে তবেই রেহাই মেলে। বৃহস্পতিবার রাতের দিকে যাত্রীদের নিয়ে ফের বেজিংয়ের উদ্দেশে রওনা দেয় বিমানটি।