দক্ষিণ কোরিয়ার প্রাক্তন ফার্স্ট লেডি কিম কোয়েন। —ফাইল চিত্র।
গ্রেফতার হলেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রাক্তন ফার্স্ট লেডি কিম কোয়েন। গত জানুয়ারিতে গ্রেফতার হয়েছিলেন তাঁর স্বামী, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল। স্বামীর গ্রেফতারির প্রায় আট মাস পরে ভিন্ন মামলায় গ্রেফতার হলেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রাক্তন ফার্স্ট লেডিও। শেয়ারে কারচুপি, ঘুষ নেওয়া-সহ বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
আটক করার পরে মঙ্গলবার সিওলের এক আদালতে পেশ করা হয়েছিল প্রাক্তন ফার্স্ট লেডিকে। প্রায় চার ঘণ্টা ধরে চলা শুনানিতে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেন কিম। তবে আদালত মনে করছে, তিনি বাইরে থাকলে তথ্যপ্রমাণ লোপাট করতে পারেন। সেই কারণে তাঁকে আটক রাখারই নির্দেশ দেয় আদালত। দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রাক্তন প্রেসিডেন্টদের বিরুদ্ধে অতীতেও অভিযোগ উঠেছে। তাঁদের কেউ কেউ জেলেও গিয়েছেন। তবে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট এবং প্রাক্তন ফার্স্ট লেডি উভয়েরই জেলবন্দি হওয়ার ঘটনা সে দেশে এই প্রথম।
দক্ষিণ কোরিয়ায় বিএমডাব্লিউ-র গাড়ি বিক্রেতা এক সংস্থা ডয়েশ মোটর্স-এর শেয়ার কারচুপি করে কিম ৮০ কোটি ইয়ন (৫,৭৭,৯৪০ ডলার) আয় করেছেন বলে অভিযোগ। ইউন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার আগেই এই কারচুপি হয়েছিল বলে অভিযোগ। এ ছাড়া ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার বদলে এক সংস্থা থেকে তিনি ঘুষ হিসাবে ‘শ্যানেল’ (নামী ব্যাগ বিক্রেতা সংস্থা)-এর দু’টি ব্যাগ এবং হিরের একটি হার নিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ।
বস্তুত, দক্ষিণ কোরিয়ায় সাময়িক ভাবে সামরিক আইন (মার্শাল ’ল) জারি করার কারণে ইয়নের বিরুদ্ধে গত বছর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল সে দেশের আদালত। গত ৩ ডিসেম্বর জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার সময় ইউন জানান, তিনি সারা দেশে সামরিক আইন বলবৎ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। । কেন এমন সিদ্ধান্ত নিতে হল তাঁকে, তার ব্যাখ্যাও দিয়েছিলেন ইউন। তিনি জানান, উত্তর কোরিয়ার একনায়ক কিম জং উনের মদতে ক্ষমতা দখলের ছক কষছেন বিরোধীরা। তাঁর ব্যাখ্যা ছিল, দেশকে কমিউনিস্ট আগ্রাসন থেকে সুরক্ষা দিতে এবং রাষ্ট্রবিরোধী শক্তিকে নির্মূল করতে দক্ষিণ কোরিয়ায় সামরিক আইন জারি করছেন। বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, সামরিক আইন জারির মধ্যে দিয়ে দেশে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে চেয়েছিলেন ইউন।
সামরিক আইন জারির কথা ঘোষণার পর থেকেই ইউনকে বরখাস্তের দাবি তোলেন বিরোধীরা। পার্লামেন্টে বরখাস্তের প্রস্তাবও আনেন তাঁরা। গত ১৪ ডিসেম্বর দক্ষিণ কোরিয়ার ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে ভোটাভুটিতে বরখাস্তের দাবির পক্ষেই অধিকাংশ ভোট পড়ে। বরখাস্ত হওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই প্রাক্তন প্রেসিডেন্টকে গ্রেফতার করা হয়।