Donald Trump

সরকারি নথি চুরির দায়ে বিচারের মুখে ডোনাল্ড ট্রাম্প! কী কী অভিযোগ? কী পরিণতি হতে পারে?

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে মেয়াদ শেষের পরে কেউ কোনও সরকারি নথি ব্যক্তিগত হেফাজতে রাখতে পারেন না। অভিযোগ, হোয়াইট হাউস ছাড়ার সময় বহু সরকারি নথি সঙ্গে করে নিয়ে যান ট্রাম্প।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০২৩ ২০:০৩
Share:

এ বার সরকারি নথি চুরির অভিযোগ উঠল আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। ফাইল চিত্র।

ক্ষমতার থাকার সময় তিনি কোনও কথা শোনেননি। এমনকি, বিচার বিভাগেরও আপত্তি উড়িয়ে ফাঁস করে দিয়েছিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপ সংক্রান্ত এফবিআই-এর এক গুচ্ছ গোপন নথি। সেটা ছিল ‘রিপাবলিকান মেমো’। ভোটে হেরে হোয়াইট হাউস ছাড়ার তিন বছর বাদে, সরকারি নথি চুরির নতুন অভিযোগে বিদ্ধ আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

Advertisement

ক্যাপিটল হিলসে হামলায় উস্কানি থেকে পর্ন তারকাকে ঘুষ, আয়কর জালিয়াতি, বিচারব্যবস্থার উপর অবৈধ ভাবে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা থেকে বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানদের দেওয়া উপহার সরকারি কোষাগারে জমা না দেওয়া— আমেরিকার ফেডারেল আদালতে মোট ৩৪টি মামলায় অভিযুক্ত ট্রাম্প। সেই তালিকায় অন্যতম হল, প্রচুর গোপন সরকারি নথি বেআইনি ভাবে নিজের ব্যক্তিগত ঠিকানায় রাখা।

ট্রাম্পই জানালেন

Advertisement

বৃহস্পতিবার ট্রাম্প নিজেই তাঁর সমাজমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ জানান, সরকারি নথি চুরির মামলায় মঙ্গলবার ফ্লরিডার মায়ামি আদালত তাঁকে তলব করেছে। ট্রাম্পের কথায়, ‘‘আমার আইনজীবীদের থেকে জানতে পারলাম, গোপন সরকারি নথি সংক্রান্ত মামলায় দুর্নীতিগ্রস্ত জো বাইডেনের প্রশাসন আমাকে অভিযুক্ত করেছে।’’

অভিযোগ কী?

২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি সরকারি ভাবে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে মেয়াদ শেষ হয় ট্রাম্পের। সে দেশের ‘প্রেসিডেন্সিয়াল রেকর্ডস অ্যাক্ট’ অনুযায়ী, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে মেয়াদ শেষের পরে কেউ কোনও সরকারি নথি ব্যক্তিগত হেফাজতে রাখতে পারেন না। কিন্তু অভিযোগ, হোয়াইট হাউস ছাড়ার সময় ব্যক্তিগত চিঠিপত্রের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ এবং গোপনীয় নানা সরকারি নথিপত্র সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলেন ট্রাম্প। রেখে দিয়েছিলেন ফ্লরিডার পাম বিচে তাঁর প্রাসাদোপম বাড়ি ‘মার-আ-লাগো’ রিসর্টে। এই অভিযোগ প্রমাণিত হলে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়তে পারবেন না ট্রাম্প।

কী ভাবে অভিযোগ সামনে এল?

আমেরিকার ‘ন্যাশনাল আর্কাইভস অ্যান্ড রেকর্ডস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’-এর আধিকারিকরা ২০২১ সালের মাঝামাঝি নথির হিসাব মিলিয়ে দেখতে গিয়ে বুঝতে পারেন, বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ এবং গোপনীয় দস্তাবেজের কোনও খোঁজ নেই! দ্রুত তাঁরা প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দফতরের প্রতিনিধিদের কাছে বিষয়টি নিয়ে জবাব চান। খবর যায় আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের কাছেও। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ট্রাম্পের দফতরের এক আধিকারিক জানান, ফ্লরিডার বাড়িতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি রাখা রয়েছে। এর পরেই ২০২২ সালের জানুয়ারিতে এফবিআই অভিযান চালিয়ে ১৫টি বাক্স বোঝাই নথি উদ্ধার করে।

অভিযোগ মিথ্যাচারেরও

২০২২-এর অগস্টে মিয়ামির আদালতে জমা দেওয়া ৩২ পাতার হলফনামায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অনুমতি ছাড়া গোপনীয় সরকারি দস্তাবেজ ব্যক্তিগত হেফাজতে রাখার অভিযোগ এনেছিল এফবিআই। সে সময় ট্রাম্পের দফতরের আধিকারিকদের থেকে হলফনামা নেওয়া হয়, ফ্লরিডার বাড়িতে অন্য আর কোনও নথি নেই। কিন্তু ‘সূত্র’ মারফত খবর পেয়ে আবার সেখানে অভিযান চালায় এফবিআই। এ বার উদ্ধার হয় আরও ৩৩টি বাক্সে ভরা প্রায় ১১ হাজার সরকারি নথি। যার মধ্যে ১০০টি ‘গোপনীয়’। এর মধ্যে জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক নথিও ছিল। সব মিলিয়ে ট্রাম্পের ফ্লরিডার বাড়ি থেকে ৩০০টি ‘গোপনীয়’, ‘অতি গোপনীয়’ এবং ‘গোপনীয় ভাবে রক্ষিত’ ফাইল উদ্ধার করা হয়েছে বলে তদন্তকারীদের দাবি।

তদন্তে বিশেষ কৌঁসুলি

আমেরিকার অ্যাটর্নি জেনারেল মেরিক গারল্যান্ড সরকারি নথি উদ্ধারের তদন্তের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য ‘বিশেষ কৌঁসুলি’ হিসাবে গত বছর জ্যাক স্মিথকে নিয়োগ করেন। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ঘনিষ্ঠ গারল্যান্ড ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সঙ্গে যুক্ত। ট্রাম্পের অভিযোগ, তাঁর বিরুদ্ধে তদন্তকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত করা হচ্ছে। স্মিথ আদালতে জমা দেওয়া তাঁর রিপোর্টে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বেআইনি ভাবে সরকারি নথি রাখার অভিযোগের সারবত্তা রয়েছে বলে জানিয়েছেন।

আইনি প্রক্রিয়া এখন কোন পর্যায়ে?

আমেরিকার আইন অনুযায়ী, জনস্বার্থ সম্পর্কিত বিষয়ের তদন্তে বিশেষ কৌঁসুলি নিয়োগ করা যেতে পারে। তাঁর রিপোর্টে পেশ করা তথ্য প্রমাণ খতিয়ে দেখে ‘গ্র্যান্ড জুরি’ সিদ্ধান্ত নেবে তদন্তের আওতাধীনকে আদালতে আনুষ্ঠানিক ভাবে ‘অভিযুক্ত’ করা হবে কি না। গ্র্যান্ড জুরির ছাড়পত্র পেলে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করবে মায়ামি আদালত। ট্রাম্প জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই তাঁকে ‘অভিযুক্ত’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে সরকারি নথি চুরির এই মামলায় ট্রাম্প ছাড়া আর কারও বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। প্রসঙ্গত, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ট্রাম্পের জমানার ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের বাড়ি থেকে বাজেয়াপ্ত হয় গোপন সরকারি নথি। কিন্তু তিনি অভিযোগ আড়াল করার চেষ্টা বা তদন্তে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেননি বলে তদন্তকারী সংস্থার দাবি।

অভিযুক্ত বাইডেনও!

দু’বছর আগে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বাড়ি থেকেও গোপনভাবে রক্ষিত নথি উদ্ধার হয়েছিল বলে অভিযোগ। ২০২১ সালে ওয়াশিংটনে বাইডেনের নামে থাকা একটি দফতর থেকে কয়েকটি নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল। এর পর গোপন নথি উদ্ধার হয় তাঁর ডেলাওয়্যারের বাড়ি থেকে। নিয়ম অনুযায়ী ওই নথিগুলি প্রেসিডেন্ট তাঁর ব্যক্তিগত দফতর বা বাড়িতে রাখতে পারেন না ওই নথিগুলি। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ট্রাম্পের জমানার ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের বাড়ি থেকে বাজেয়াপ্ত হয় গোপন সরকারি নথিগুলি। কিন্তু তিনি অভিযোগ আড়াল করার চেষ্টা করেননি বলে তদন্তকারী সংস্থার দাবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন