একটা স্যান্ডউইচের জন্য গ্রিসে বিকোচ্ছে শরীর

ভেঙে পড়ছে গ্রিসের অর্থনীতি। সিপ্রাস সরকারের পুনরভিষেক পাল্টাতে পারেনি চিত্রটা। দিন দিন বাড়চ্ছে বেকারত্ব। গোটা দেশটার আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি ঠিক কতটা করুণ তার জলজ্যান্ত ছবিটা বোধহয় পাওয়া যাচ্ছে সে দেশের তরুণীদের অবস্থা থেকে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৫ ১৩:৪৬
Share:

ভেঙে পড়ছে গ্রিসের অর্থনীতি। সিপ্রাস সরকারের পুনরভিষেক পাল্টাতে পারেনি চিত্রটা। দিন দিন বাড়চ্ছে বেকারত্ব। গোটা দেশটার আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি ঠিক কতটা করুণ তার জলজ্যান্ত ছবিটা বোধহয় পাওয়া যাচ্ছে সে দেশের তরুণীদের অবস্থা থেকে। নেই চাকরি। খিদের মুখে একটা চিজ বা একটা স্যান্ডউইচ কেনার ক্ষমতাও নেই তাঁদের। বাধ্য হয়ে শরীর বেচছেন তাঁরা। নয়া এক সমীক্ষা অনুযায়ী এই মুহূর্তে ১৭ হাজার গ্রিক তরুণী বাধ্য হয়ে যৌন পেশায় যুক্ত হয়েছেন। শুধু তাই নয়, এই মুহূর্তে সমগ্র ইউরোপে গ্রিসের যৌনকর্মীরা অন্যতম ‘সস্তা’।

Advertisement

প্যান্টেনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক গ্রেগরি ল্যাক্সোসের কথায় ‘‘কিছু মহিলা এই পেশায় জড়াচ্ছেন শুধুমাত্র একটা চিজ পাই বা স্যান্ডউইচ কেনার জন্য। কারণটা খুব সাধারণ। তারা ক্ষুধার্ত। কেউ জড়া্চ্ছেন ট্যাক্স জমা দিতে। কেউবা বিল দিতে।’’ দু’বছর আগেও যৌনকর্মীদের গড় রেট ছিল ৫০ ইউরো। প্রয়োজন খিদেটুকু মেটানো। এখন তাই মাত্র দুই ইউরোর বিনিময়ে তাই ৩০ মিনিটের জন্য শরীর বিকোতে রাজি হয়ে যাচ্ছেন সে দেশের তরুণীরা।

২০০২ সালে দ্রাখমা ছেড়ে ইউরোকে মুদ্রা হিসেবে মেনে নেয় গ্রিস। সরকার দাবি করে এর ফলে কমেছে মুদ্রাস্ফীতি, বেড়েছে জিডিপি। কিন্তু ২০০৯ সালে সেই সরকারই ঘোষণা করে আর্থিক উন্নয়নের পুরো গল্পটাই নাকি ভুয়ো ছিল।

Advertisement

২০১০ সালে ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক, আইএমএপ এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন গ্রিসকে ঋণ দেয়। শর্ত ছিল কমাতে হবে পেনশনের হার। গ্রিসে ঋণের পরিমান এখন জাতীয় আয়ের ১৭৫%। সংস্কারের পথে হেঁটে আগামী ২০ বছরেও এই ঋণ শোধ করা সম্ভব নয় বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। বরং দিন যত বাড়বে, পরিস্থিতি সামাল দিতে বাড়বে ঋণ। আরও সঙ্কুচিত হবে সাধারণ মানুষের আয়।

এই মুহূ্র্তে ঠিক কতটা বেহাল গ্রিসের অর্থনীতি? একটি সমীক্ষা বলছে সে দেশের বেকারত্ব ২৫% ছাপিয়ে গেছে। বেশিরভাগ সংসার চলে বাবা বা ঠাকুরদার পেনশনের টাকায়। স্কুলের ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চারা পেটের জ্বালায় বাসে উঠে ভিক্ষা করছে। প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর সিপ্রাস প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছিলেন কর বাড়বে না সরকারী ক্ষেত্রে। কিন্তু ক্ষণের চাপে জর্জরিত সিরিজা সরকার প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেনি। ইউরোপিয় ইউনিয়নের শর্ত মেনে বেড়েছে কর। গণভেোটে সে দেশের সাধারণ মানুষ ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্তির বিরুদ্ধে মত দিলেও পিছু হটেননি সিপ্রাস। কর বাড়লেও বাড়ছে না বেতন। নেই নতুন কর্মসংস্থানও। গ্রামীন গ্রিসের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি কিন্তু অনেক বেশী স্বতন্ত্র এবং স্বাবলম্বী। সমস্যাটা অনেক বেশি শহরাঞ্চলে। যেখানে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একের পর এক কলকারখানা। কর্তৃপক্ষের ক্ষমতাই নেই কর্মচারীদের বেতন দেওয়ার। অর্থনীতির দশা দৈন্য হলেও এথেন্সের মত শহরগুলোতে কিন্তু পাল্টায়নি জীবনধারণের মান। চাহিদার সঙ্গে দারিদ্র্যের এই অদ্ভুত সঙ্ঘাতেই দেহ ব্যবসাতে বাধ্য হয়েই জড়িয়ে পড়ছেন কম বয়সী গ্রিক মেয়েরা।

এই সংক্রান্ত আরও খবর: ভারত পারে, গ্রিস পারে না? প্রশ্ন করেছিল পাপা

অনলাইনে পর্ন ভিডিওর রমরমার যুগে সারা পৃথিবীতেই আয় কমছে যৌনকর্মীদের। গ্রিসে দেহ ব্যবসা আইনত সিদ্ধ। ইউরোপে বেশ কিছু দেশে এখনও বেআইনি যৌনপেশা। ফলে বহু দিন আগে থেকেই বিশেষত, পূর্ব ইউরোপের বহু তরুণী ও যুবতী দেহব্যবসার জন্য গ্রিসে জড়ো হন। কিন্তু গত তিন বছরে আর্থিক পরিস্থিতির এতটাই অবনতি হয়েছে যে গ্রিসের সাধারণ নাগরিকরা অনেক বেশি এই পেশায় জড়িয়ে পড়ছেন। বেঁচে থাকার সাধারণ চাহিদাগুলো মেটাতে কম বয়সী মহিলারা নামছেন যৌনপেশায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন