পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসী বিক্ষোভ। ছবি: সংগৃহীত।
আবার অশান্ত বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকা। খাগড়াছড়ি জেলায় আদিবাসী (বাংলাদেশে সরকারি নথিতে যাঁদের ‘উপজাতি’ বলা হয়) ‘ত্রিপুরা’ জনগোষ্ঠীর ১৪ বছরের এক কিশোরীকে গণধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে পাহাড়ের অমুসলিম সংগঠনগুলি একযোগে প্রতিবাদ-বিক্ষোভে নেমেছে। গণধর্ষণে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ বিএনপির স্থানীয় চার পদাধিকারীকে গ্রেফতার করেছে। অন্য দুই অভিযুক্ত বিএনপি নেতা পলাতক।
খাগড়াছড়ির পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্য দুই অমুসলিম জনজাতি অধ্যুষিত জেলা রাঙামাটি এবং বান্দরবনেও শুক্রবার বিক্ষোভ ছড়িয়েছে। আদিবাসী সংগঠন ‘জনসংহতি সমিতি’ (জেএসএস), ‘হিল উইমেন্স ফেডারেশন’, ‘পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ’, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতি’র মতো সংগঠনগুলি অভিযোগ তুলেছে, পুলিশ-প্রশাসনের একাংশের মদতে জনজাতিদের বিরুদ্ধে হিংসা ক্রমশ বাড়ছে। গত ২৭ জুন গণধর্ষণের ঘটনা ঘটলেও চাপ দিয়ে ওই নাবালিকা এবং তার পরিবারের ‘মুখ বন্ধ’ রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ।
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ জানাচ্ছে, আদিবাসী নাবালিকাকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত যে চার বিএনপি পদাধিকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁরা হলেন খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার ভাইবোনছড়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আরমান হোসেন, দুই সক্রিয় সদস্য সদস্য ইমন হোসেন ও এনায়েত হোসেন এবং দলের শ্রমিক সংগঠন জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন। দুই পলাতক অভিযুক্ত হলেন ভাইবোনছড়া ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুনির ইসলাম এবং ছাত্রদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল ইসলাম।
গত অগস্টে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে জঙ্গিদমনের অছিলায় সেনা, বিজিবি, র্যাব ও পুলিশের সক্রিয় মদতে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় অমুসলিম জনজাতিদের উপর ধারাবাহিক ভাবে হামলা চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ। পাহাড়ে বসবাসকারী চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, কুকি, ব্রু-সহ বিভিন্ন অমুসলিম জনজাতি সংগঠনগুলির অভিযোগ, ‘আদিবাসী’ তকমা ছিনিয়ে নেওয়ার জন্যও প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার সক্রিয় হয়েছে।
বস্তুত, প্রায় চার দশক আগেই ওই অভিযোগ উঠেছিল বাংলাদেশে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ বলছেন, আশির দশকে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনবিন্যাস বদলে দেওয়ার উদ্দেশ্যে সেনাশাসক জিয়াউর রহমানের আমলে প্রায় ৫০ হাজার সমতলের মানুষকে পাহাড়ে বসতি গড়ে দেওয়া হয়। ‘সেটলার’ নামে পরিচিত সেই জনগোষ্ঠী আজ সংখ্যায় বহু গুণ বেড়ে চাকমা ও অন্য জনজাতিদের অস্তিত্বের সঙ্কটে ফেলে দিয়েছে। বান্দরবনে মুসলিম জনসংখ্যা ইতিমধ্যেই ৫২ শতাংশ পেরিয়ে গিয়েছে। খাগড়াছড়ি এবং রাঙামাটির পাহাড়েও দ্রুত মুসলিম জনসংখ্যা বাড়ছে। নিজভূমে পরবাসী হয়ে পড়ছেন চাকমা, ব্রু, কুকি, মারমা, ত্রিপুরা জনজাতিরা। আর সেখান থেকেই সংঘাতের সূত্রপাত। গত কয়েক মাসের ধারাবাহিক হামলায় পার্বত্য চট্টগ্রামে অন্তত ৩০ জন আদিবাসী খুন হয়েছেন। তাঁদের বাড়িঘর, ধর্মস্থান ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে অহরহ।