ফের চমক, পাশা উল্টে দিয়ে এগোলেন হিলারি

ই-মেল বিতর্ক ঝড় তুলেছিল ঠিকই। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাত্র পাঁচ দিন আগে আকাশ অনেকটাই মেঘমুক্ত। বৃহস্পতিবার তিনটি প্রথম সারির মার্কিন সংবাদমাধ্যমের সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, ই-মেল বিতর্ক পিছনে ফেলে ভোটে ফের এগিয়ে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিন্টন।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নিউ ইয়র্ক শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:১৩
Share:

সমর্থকদের সঙ্গে লাস ভেগাসে নিজস্বী হিলারির। ছবি: এএফপি।

ই-মেল বিতর্ক ঝড় তুলেছিল ঠিকই। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাত্র পাঁচ দিন আগে আকাশ অনেকটাই মেঘমুক্ত। বৃহস্পতিবার তিনটি প্রথম সারির মার্কিন সংবাদমাধ্যমের সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, ই-মেল বিতর্ক পিছনে ফেলে ভোটে ফের এগিয়ে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিন্টন।

Advertisement

তিনটি সংবাদমাধ্যমের সমীক্ষায় শতাংশের হিসেবে একটিতে হিলারি এগিয়ে রয়েছেন ৬% ভোটে। আর একটিতে ৫% ভোটে এবং অন্যটিতে ৩% ভোটে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পিছনে ফেলে দিয়েছেন তিনি।

এ সবে তেমন বিচলিত হতে দেখা যায়নি রিপাবলিকান প্রার্থীকে। হোয়াইট হাউস দখলের দৌড়ে তিনি জিতছেন ধরে নিয়েই ট্রাম্প আজ জানান, ৮ নভেম্বর ফল ঘোষণার পরে ‘জয়ের আনন্দে’ ম্যানহাটনের এক অভিজাত হোটেলে পার্টি দেবেন। পার্টি আমন্ত্রণমূলক। শুধু বন্ধুবান্ধব এবং ঘনিষ্ঠ সমর্থকদেরই ডাকা হবে সেখানে। নিউ ইয়র্কের ওই শহরে হিলারিরও ৮ নভেম্বর রাতে একটি অনুষ্ঠান করার কথা। তফাত একটাই— ডেমোক্র্যাট শিবির এখনও সেই অনুষ্ঠানকে ‘জয়ের পার্টি’ বলে আখ্যা দেয়নি!

Advertisement

ট্রাম্প চরম আত্মবিশ্বাসী হলেও মার্কিন সংবাদমাধ্যমে ঘোরাঘুরি করছে একটাই কথা। এফবিআই অধিকর্তা জেমস কোমি হিলারির ই-মেল নিয়ে তদন্তের কথা ঘোষণা করার আগে যে সুবিধেজনক জায়গায় ছিলেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী, বৃহস্পতিবারের ভোট সমীক্ষা তাঁকে ফের সেই স্বস্তির হাওয়া এনে দিল। তাই পোড় খাওয়া রাজনীতিক এবং প্রাক্তন বিদেশসচিব এখন বলছেন, নির্বাচনের ফলাফলে ই-মেল তদন্ত কোনও ছাপ যে ফেলবে না, তা তিনি আগে থেকেই জানতেন। হিলারির মতে, এই চূড়ান্ত সময়ে পৌঁছে ও সব নিয়ে আর বিভ্রান্ত হওয়ার কোনও আশঙ্কা নেই।

তবে নির্বাচনের মুখে এফবিআইয়ের ই-মেল পুনর্তদন্তের সিদ্ধান্তে তিনি যে অবাক হয়েছিলেন, সেটা মেনে নিয়েছেন হিলারি। তাঁর কথায়, ‘‘আমার মনে হয়, ই-মেল বিতর্ক নিয়ে অনেক দিন আগেই যা ভাবার ভেবে নিয়েছেন মার্কিন নাগরিকরা। প্রচারে অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়েছি। আমার লক্ষ্য একটাই। আমেরিকার মানুষদের জন্য কাজ করা।’’ সাম্প্রতিক জনমত সমীক্ষায় ফের হিলারি এগিয়ে গিয়েছেন জেনে ডোনাল্ড-পুত্র এরিক ট্রাম্প একটি টিভি চ্যানেলে আজ বলেন, ‘‘এক জন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী এফবিআই তদন্তের মুখে, এটা একেবারেই অকল্পনীয়। ভাবুন, ক্লিন্টন শিবিরের দুর্নীতি কোথায় পৌঁছেছে!’’

ট্রাম্পকে কিছুটা ব্যাকফুটে ঠেলতে পেরে ডেমোক্র্যাট শিবিরে এখন ফুরফুরে মেজাজ। আর এ দিনই প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা মুখ খুলেছেন ই-মেল বিতর্ক নিয়ে। কোমির নাম না করে তিনি বলেছেন, ‘‘আমরা জানি, যখন কোনও তদন্ত শুরু হয়, সেটা সম্পূর্ণ তথ্যের উপরে ভিত্তি করেই হয়। কোনও ফাঁস হওয়া তথ্যের উপরে নির্ভর করে তদন্ত এগোয় না।’’ হিলারির হয়ে তাঁর সওয়াল, ‘‘আমি জানি উনি এমন এক জন মানুষ, যিনি শুধু আমেরিকার স্বার্থই দেখেন। আমেরিকার মানুষের কথাই প্রথমে ভাবেন।’’ এফবিআই তৎপরতার প্রসঙ্গ সরাসরি উত্থাপন না করেও ওবামার মন্তব্য, ‘‘হিলারি কিছু ভুল করেছেন ঠিকই। কিন্তু সেটা বিচার প্রক্রিয়ার আওতায় আনার মতো নয়।’’ তবে এফবিআই যে পিছু হটছে না, সেটাও স্পষ্ট। এক মার্কিন সংবাদ চ্যানেলের দাবি, ক্লিন্টন ফাউন্ডেশন নিয়েও তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে এফবিআই। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন এবং প্রাক্তন বিদেশসচিব হিলারির বিরুদ্ধে তথ্যের পাহাড় জমা হচ্ছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার হাতে। উইকিলিকস থেকেও বেশ কিছু তথ্য পেয়েছে তারা।

এ সব নিয়ে আপাতত ভাবছেন না হিলারি। তাঁর পাখির চোখ— মার্কিন ধনকুবের। অ্যারিজোনার টেম্পেতে বৃহস্পতিবার এক জনসভায় প্রেসিডেন্ট ওবামাকে পাশে নিয়ে হিলারি বলেন, ‘‘ধরে নিন, আজ ২০ জানুয়ারি, ২০১৭। ক্যাপিটলের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। মনে মনে ভেবে নিন, ট্রাম্প শপথ নিচ্ছেন। তার পরে ওভাল অফিসে বসে আপনাদের জীবন আর ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।’’ হিলারি এ ভাবে মানুষের মনে ছবি আঁকার চেষ্টা চালিয়ে যান— ‘‘সেই লোকটি— যিনি মহিলাদের অসম্মান করেন, বর্ণবৈষম্যে উস্কানি দেন, টুইটারে লড়াইয়ের বদলে একটা আসল যুদ্ধ শুরু করে দিতে পারেন।’’

ট্রাম্প-বিরোধিতায় ওবামাও সঙ্গ দেন হিলারিকে। বলেন, ‘‘পছন্দটা কিন্তু একেবারেই স্পষ্ট। যে রিপাবলিকানরা ট্রাম্পকে মনোনীত করেছেন, তাঁদের অনেকেই আবার মনে করেন, মার্কিন ওই ধনকুবেরকে মনোনয়ন দেওয়াই উচিত হয়নি। কারণ তাঁরা জানেন, ট্রাম্প ভাঁওতাবাজ, অজ্ঞ এবং এমন একটি পদের জন্য সম্পূর্ণ অযোগ্য।’’

হিলারি শিবিরে তবু চিন্তার মেঘ। মার্কিন কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের যতটা সমর্থন হিলারির জন্য উপচে পড়া উচিত, সেই মাত্রায় সমর্থন মিলছে না বলে কিছুটা সন্দিগ্ধ প্রেসিডেন্ট ওবামা। তাই প্রচারে ওবামা-ক্লিন্টন সেই কৃষ্ণাঙ্গ অধ্যুষিত জায়গাগুলোতেই এখন জোর দিচ্ছেন যেখানে ‘স্যুইং’ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শেষবেলায় যতটা সমর্থন আদায় করা যায়, তার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন দু’জনেই। বৃহস্পতিবার ফ্লোরিডাতেই দু’টি সভা করেছেন ওবামা। তালিকায় রয়েছে জ্যাকসনভিল আর মিয়ামিও। হোয়াইট হাউসে ফেরার আগে রবিবার ঘুরে যাবেন অরল্যান্ডোও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন