ভিসা-জটে আক্ষেপ পাক হিন্দু পুণ্যার্থীর

পেশায় ঠিকাদার রমেশের কথায়, ‘‘কালে-ভদ্রে পাকিস্তানে কোনও হিন্দুর উপরে অত্যাচারের খবর যদি শুনেও থাকি, সব মিলিয়ে আমরা শান্তিতেই আছি।’’

Advertisement

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৯ ০৩:১৬
Share:

হরিদ্বারে রমেশ কিশোর লাল।

‘জয় শ্রীকৃষ্ণ’ বলে কথা শুরু করেছিলেন। ফোনে কথা বলার সময়ে নিজের শহর করাচির সোলজারবাজারে ‘পঞ্চমুখী হনুমান মন্দিরের গল্প বলতেই ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। ৩৭ বছরের রমেশ কিশোর লাল এখন মথুরায়। তিনি ছাড়া ৯৩ জন পাকিস্তানি হিন্দুর একটি দল এখন এ দেশে তীর্থ করছেন। গত ১৭ মে থেকে নির্দিষ্ট সফর-সূচি মেনে ঘুরছেন তাঁরা।

Advertisement

পেশায় ঠিকাদার রমেশের কথায়, ‘‘কালে-ভদ্রে পাকিস্তানে কোনও হিন্দুর উপরে অত্যাচারের খবর যদি শুনেও থাকি, সব মিলিয়ে আমরা শান্তিতেই আছি।’’ রমেশের বক্তব্য, ‘অচ্ছে লিডার’ ইমরান খানের আমলে হিন্দুরা ভালই আছেন। শাসক দল পাক তেহরিক-ই-ইনসাফ-এও হিন্দু প্রদেশ নেতা বা এমপি সবই আছেন। ‘‘কোনও অশান্তি হলে প্রশাসন নিরাপত্তা দেয়। মাইকে ঘোষণা করা হয়, হিন্দুরাও পাকিস্তানি! ইন লোগো কো তকলিফ মত দিজিয়ে!’’— বলছেন রমেশ।

পাকিস্তানে হিন্দু ধর্মে চর্চা প্রসঙ্গে করাচির যুবক সগর্বে বলছিলেন, ‘‘মাতা হিংলাজের শক্তিপীঠ থেকে শুরু করে করাচির রত্নেশ্বর মহাদেব মন্দির, জমকালো স্বামীনারায়ণ মন্দিরও খুবই মশহুর (বিখ্যাত)।’’ সোলজারবাজারের ১৪০০ বছরের পুরনো পঞ্চমুখী হনুমান মন্দিরের কথাও তখনই উঠল। ‘‘ঘুরে আসুন, করাচির ওই মন্দিরে হনুমান জয়ন্তী বা রাম নবমীর অনুষ্ঠানও দেখার মতোই!’’— বললেন রমেশ। তাঁদের দেশে সংখ্যালঘু নাগরিকের ধর্মপালনের অধিকারটুকু যে মজবুত, তা বার বার বলছিলেন শ্রীকৃষ্ণভক্ত পাকিস্তানি যুবক। তাঁর কথায়, ‘‘দিওয়ালি বা হোলিতেও আমাদের উৎসব পালনের আলাদা জায়গা দেওয়া হয়। শুক্র-শনি-রবিবারে করাচিতে ধূমধাম করে ভাগবত-পাঠের অনুষ্ঠানও করি।’’ ইস্কনের ভক্ত রমেশ খুবই উত্তেজিত বাংলায় মহাপ্রভুর জন্মস্থানের কাছে মায়াপুরের মন্দিরদর্শন করেও। এ বার প্রথমে হরিদ্বার, মায়াপুর ও পুরীর জগন্নাথ-ধাম দর্শন করেন পাকিস্তানি পুণ্যার্থীরা। বেশির ভাগই সিন্দের বাসিন্দা। ভুবনেশ্বরে ওঙ্কারনাথ মিশনের তরফে ‘শান্তি-বার্তা’ হিসেবে পড়শি দেশের পুণ্যার্থীদের সংবর্ধনাও দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

রমেশ এই নিয়ে বার দশেক ভারতে এলেন। তাঁর দুই শ্যালিকা বিবাহ সূত্রে বৃন্দাবন ও রাজকোটে থাকেন। তবে এ দেশের প্রতি সামান্য অভিযোগও আছে করাচির যুবার। তাঁর কথায়, ‘‘ইচ্ছে থাকলেও এ বার কেদার-বদ্রী যেতে পারলাম না। ভিসার নিয়ম অদ্ভুত! জগন্নাথ-পুরী দেখার অনুমতি রয়েছে। কিন্তু দ্বারকা বা রামেশ্বরম যাওয়া যাবে না!’’ বৃন্দাবন-পরিক্রমা সেরে ১৩ জুন পাকিস্তানে ফেরার কথা রমেশদের। তাঁর বক্তব্য, ‘‘পাকিস্তানে গাঙ্গুলি-সচিনদের পেয়ে শপিং মলে লোকে পয়সাই নিচ্ছিল না! কাশ্মীর ছাড়া দু’দেশের ঝগড়ার কারণ নেই। দু’দেশের মানুষের মেলামেশার সুযোগ বাড়া উচিত!’’ আর এ দেশে মোদীর ‘প্রত্যাবর্তন’-কে কী চোখে দেখছেন? ‘‘আমরা তো অতিথি, এ সব বলার এক্তিয়ার নেই।’’— ধন্যবাদ জানিয়ে ফোন রাখলেন রমেশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন