সারা রাত চলেছে ইজরায়েলি হানা। চুরমার দেওয়ালের পিছন থেকেই উঁকিঝুঁকি। খোঁজ নেওয়া, ফের হামলা শুরু হল কি? গাজায় নিহতের সংখ্যা ৬০০ ছাড়িয়েছে মঙ্গলবার। ছবি: এএফপি।
আন্তর্জাতিক শান্তি আবেদনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ইজরায়েল আজও লাগাতার হামলা চালাল গাজায়। ইজরায়েলি ডিফেন্স ফোর্সের (আইডিএফ) বোমাবর্ষণে আজ গাজার পাঁচটি ধর্মস্থান ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সেনা রেয়াত করেনি হাসপাতালকেও। ছ’শো ছাড়িয়ে গিয়েছে নিহতের সংখ্যা। আজ আরও এক বার গাজায় সংঘর্ষ বিরতির প্রস্তাব দিয়েছে মিশর ও আমেরিকা। কায়রোতে মিশর, রাষ্ট্রপুঞ্জ এবং আমেরিকার ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের পরে মার্কিন বিদেশসচিব জন কেরি এবং মিশরের বিদেশমন্ত্রী সামেহ সৌকরি যৌথ ভাবে সংঘর্ষ বিরতির আর্জি জানান। তবে তাতে বন্ধ হয়নি রক্তপাত।
আজ বোমাবর্ষণে গাজার দের এল-বালায় একই পরিবারের পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুমিছিল জারি খান ইউনুস এবং নুসেইরাতেও। ইজরায়েলের বোমাবর্ষণে আল কাসা নামে মধ্য গাজার একটি হাসপাতালের দু’টি তলা ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছে। রোগীদের পাশাপাশি মৃত্যু হয়েছে কয়েক জন চিকিৎসকেরও। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চিকিৎসার সরঞ্জাম-ওষুধপত্র। আজ গাজায় বোমাবর্ষণে ভেঙে পড়েছে আল-জাজিরার অফিসও।
সংঘর্ষের পনেরো দিনের মাথায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সরকারি হিসেবে ৬০৪। প্রাণ গিয়েছে ২৭ জন ইজরায়েলি সেনা এবং ১৮০ জন হামাস জঙ্গির। রাষ্ট্রপুঞ্জ জানিয়েছে, নিহতদের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশই সাধারণ মানুষ। নিহত হয়েছে অন্তত ১২০টি শিশুও। প্যালেস্তাইনের স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে, বিমান হামলায় আজ সাত জন নিহত হয়েছেন। কাল রাত থেকে আজ সকাল পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৩০ জনেরও বেশি প্যালেস্তাইনির। গত পরশু রাতে অ্যারন শল নামে এক ইজরায়েলি সেনাকে অপহরণ করা হয়েছিল বলে খবর জানিয়েছিল হামাস। প্রথমে আইডিএফ সেই দাবি উড়িয়ে দিলেও আজ সেই দাবির সত্যতা স্বীকার করে সেনা মুখপাত্র জানিয়েছেন, ২১ বছরের অ্যারনকে অপহরণ করে হত্যা করেছে জঙ্গিরা। যদিও অ্যারনের দেহ এখনও শনাক্ত করা যায়নি।
শূন্য চোখে। ইজরায়েলি বিমান হানায় ভেঙেছে ঘরবাড়ি, হারিয়েছে পরিবার।
মঙ্গলবার গাজায়। ছবি: এএফপি।
রাষ্ট্রপুঞ্জ জানিয়েছে, গাজায় এখনও লক্ষাধিক মানুষ ত্রাণশিবিরে রয়েছেন। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি জানিয়েছে, এত মানুষকে ত্রাণ সরবরাহ করা অসম্ভব হয়ে পড়ছে। ওই শিবিরের জন্য আজই ৪ কোটি ৭০ লক্ষ ডলার সাহায্য পাঠানোর কথা জানিয়েছে আমেরিকা। আজ সাংবাদিক বৈঠকে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, সুড়ঙ্গের গোপন ঘাঁটি থেকে এখনও রকেট হানা এবং অনুপ্রবেশ চালিয়ে যাচ্ছে হামাস। সুড়ঙ্গগুলি নিশ্চিহ্ন না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে।
গাজা নিয়ে আজ কায়রোয় বৈঠকে বসেন রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব বান কি-মুন এবং আমেরিকার বিদেশসচিব জন কেরি। ছিলেন মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফতাহ আল-সিসিও। কাল রাতে এক দূতকে কায়রোয় পাঠিয়েছে আমেরিকা। এই বৈঠকের পরে গাজা-সংঘর্ষের অবসান নিয়ে তাঁরা আশাবাদী বলে জানান মিশরের বিদেশমন্ত্রী। তবে নিরীহ মানুষের মৃত্যু নিয়ে ইজরায়েলকে ফের সতর্ক করেছে আমেরিকা। আজ হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব জশ আর্নেস্ট বলেন, “এত মৃত্যুতে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা উদ্বিগ্ন। ইজরায়েলেরও কয়ে ক জন সেনা মারা গিয়েছেন। আমরা উভয় পক্ষের পরিবারকে সমবেদনা জানাচ্ছি।” সংঘর্ষ বিরতির প্রস্তাব দিয়ে ফ্রান্সের বিদেশমন্ত্রী লরেন ফ্যাবিয়াস আজ বলেন, “এত মৃত্যুর কোনও যুক্তি থাকতে পারে না।”