চকোলেট। নামটা শুনলেই মনটা কেমন যেন খুশিতে ভরে ওঠে। চকোলেটের এমনই ক্রেজ যে, এর জন্য ধার্য রাখা হয়েছে গোটা একটা দিন! কিন্তু এক থেকে একশোর প্রিয় এই খাদ্য প্রথম কবে মানুষের হাতে বা বলা ভাল জিভে এসেছিল?
এত দিন পর্যন্ত জানা ছিল, এই অসামান্য লোভনীয় বস্তুটি মানুষ প্রথম খেতে শেখে হাজার তিনেক বছর আগে। মনে করা হত, ৩১০০-৪০০০ বছর আগে ছিল প্রথম চকোলেটের অস্তিত্ব।
কিন্তু সম্প্রতি জানা গেল, চকোলেটের বয়স আরও দেড় হাজার বছর বেশি। প্রায় ৫৪৫০ বছর আগে প্রথম চকোলেটের অস্তিত্ব মিলেছে। সৌজন্যে ইকুয়েডরে পাওয়া কিছু প্রাচীন পাত্র।
প্রাচীন এই পাত্রের ভিতর মিলেছে থেয়োব্রোমা নামে একটি উপক্ষার, যেটি কোকো গাছে থাকে।
২০১০ সালে প্রত্নতত্ত্ববিদ মাইকেল ব্লেক সান্তা আনা-লা ইকুয়েডরের ফ্লোরিডা (সালফ)-এ একটি কারুকার্য করা এই পাত্রটির খোঁজ পান। বেশ কয়েক বছর পরীক্ষার পর তিনি ওই উপক্ষার থাকার কথা নিশ্চিত করেন।
ওই অঞ্চলে প্রাচীন আমলের গোলমরিচ ও ভুট্টা মিলেছিল। মাইকেল এবং নৃতত্ত্ববিদ সোনিয়া জ়ারিল্লো সেখানে কোকো থাকার কথাও জানান তাঁরা। কোকো থেকেই তৈরি হয় চকোলেট।
সেরামিকের ওই পাত্রে থেয়োব্রোমা ক্যাকাও নামে কোকো গাছটির অবশেষ মিলেছিল। এ ছাড়াও মিলেছিল ক্যাফেইন। গাছের অংশের ডিএনএ বিশ্লেষণ করা হয় এর পর।
মায়ো-শিনশিপে সংস্কৃতিতে, আন্দিজের গ্রামের অধিবাসীরা প্রায় ৫৪৫০ বছর আগেই ক্যাকাও ব্যবহার করত। অর্থাৎ প্রায় ৫৪৫০ বছর আগেই ছিল চকোলেটের অস্তিত্ব।
বিজ্ঞানীদের দাবি, ওই সময় চকোলেট পানীয় হিসাবে খাওয়া তো হতই, এমনকি ক্যাকাওয়ের বীজ ব্যবহার করা হত মুদ্রা হিসাবেও।
চকোলেটের অস্তিত্ব বিশ্লেষণে থেয়োব্রোমার অস্তিত্ব খুব কাজে দিয়েছে, জানান ব্লেক। কারণ এর আগে কখনও এত প্রাচীন আমলে ক্যাকাও ব্যবহারের প্রমাণ মেলেনি।
অ্যামাজন অরণ্যে থেয়োব্রোমার বেশ কিছু প্রজাতি রয়েছে। সেখান থেকেই আস্তে আস্তে গুয়াতেমালা, নিকারাগুয়া, এল সালভাদোর, হন্ডুরাস, কোস্তা রিকা, কলম্বিয়া, পানামা, মেক্সিকোতে ছড়িয়ে পড়ে কোকোর ব্যবহার।
মাইক্রোনেশিয়ান ও পলিনেশিয়ানদের মধ্যে যাঁরা প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপে পৌঁছন, তাঁদের মধ্যে কোকোর ব্যবহারের আগেই জানা গিয়েছিল।
মেক্সিকো থেকে ১৯ শতকের মাঝামাঝি এই চকোলেটকে বাণিজ্যিক ভাবে নিয়ে আসা হয়। ১৬৬৩-১৬৬৮ সালের মধ্যে কৃষিজীবীরাও ফসল ভাল হওয়ার জন্য জমিতে কোকো বীজ ব্যবহার করতেন। কিন্তু ৫৪৫০ বছর আগে প্রথম চকোলেট খেয়েছিল মানুষ, এটা একেবারেই নতুন আবিষ্কার।