prince harry

‘ছিন্নমূল’ হয়েই কি খেসারত দিলেন হ্যারি

সেই কারণেই কি ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়ছিলেন বাকিংহাম প্যালেসের অন্দরে?

Advertisement

শ্রাবণী বসু

লন্ডন শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২০ ০৪:৫৫
Share:

সপরিবার: স্ত্রী মেগান ও ছেলে আর্চির সঙ্গে হ্যারি।

দিন দিন সাধারণের ‘ধরাছোঁয়ার’ মধ্যে চলে আসছিলেন তাঁরা। জনপ্রিয়তার নিরীক্ষে একে একে টপকে যাচ্ছিলেন বয়ঃজ্যেষ্ঠদেরও। সেই কারণেই কি ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়ছিলেন বাকিংহাম প্যালেসের অন্দরে? তার জেরেই কি শেষ পর্যন্ত রাজপরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে বাধ্য হন প্রিন্স হ্যারি এবং তাঁর স্ত্রী মেগান মার্কেল, ডাচেস অব সাসেক্স? ব্রিটিশ রাজপরিবারের পক্ষ থেকে এই তথ্যগুলিকে ‘গুজব’ হিসেবে উড়িয়ে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা হলেও হ্যারি-মেগানের আলাদা হওয়ার পিছনে বাস্তব চিত্র নাকি এটাই। এমনটাই দাবি করা হয়েছে ডিউক এবং ডাচেস অব সাসেক্সকে নিয়ে লেখা বই ‘ফাইন্ডিং ফ্রিডম’-এ। যেটি এ বার থেকে ধারাবাহিক হিসেবে প্রকাশিত হতে চলেছে এক জনপ্রিয় ব্রিটিশ দৈনিকের রবিবারের বিশেষ সংস্করণে।
২০১৮ সালে উইনসর কাসেলে হ্যারি এবং মেগানের পরিণয়ের মধ্যে দিয়ে রাজপরিবারের ইতিহাসে শুরু হয়েছিল এক নয়া অধ্যায়। রূপকথার মতো সেই বিয়ের চাকচিক্য অবশ্য খুব বেশিদিন আড়াল করে রাখতে পারেনি হ্যারি-মেগানের ‘জীবনধারার’ প্রতি রাজপরিবারের অসহিষ্ণুতার কথা। যদিও যত বারই সে-সব বাকিংহাম প্যালেসের শতাব্দী প্রাচীন দেওয়াল ভেদ করে সংবাদমাধ্যমের ‘কানে এসেছে’, তত বারই সেগুলিকে ‘সাজানো ঘটনা’ বলে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে রাজপরিবারের মুখপাত্রদের তরফে। আর হ্যারি-মেগানও তেমন ভাবে তা নিয়ে মুখ খোলেননি কখনই। তবে ক্যারোলিন ডুরান্ড এবং ওমিড স্কবির লেখা এই বইটিতে নাকি আলোকপাত করা হয়েছে সেই-সব ‘অন্দরকাহিনির’ উপরেই। যার জন্য তাঁরা শেষ পর্যন্ত রাজপরিবার থেকে বেরিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন।
দাদা এবং বৌদি, প্রিন্স উইলিয়াম এবং কেটের (ডিউক এবং ডাচেস অব কেমব্রিজ) সঙ্গেও যে হ্যারিদের সম্পর্ক একেবারে তলানিতে ঠেকেছিল এবং তাঁদের মধ্যে যে কথা পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তা অবশ্য ক্যামেরাকে ফাঁকি দিতে পারেনি। যেমন কমনওয়েলথ ডে-র কথাই ধরে নেওয়া যাক। সে দিনই রাজপরিবারের কোনও অনুষ্ঠানে শেষ বারের মতো জনসমক্ষে দেখা গিয়েছিল হ্যারি-মেগানকে।। এসেছিলেন উইলিয়াম এবং কেটও।। তবে একে অপরের জন্য জনসমক্ষে অন্তত একটিও বাক্য ব্যায় করতে দেখা যায়নি তাঁদের। এসেছিলেনও আলাদা। অনুষ্ঠানে বসেওছিলেন দূরত্ব বজায় রেখে।। বইটিতে সে দিনের ঘটনার উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ‘মেগান দু’একবার কেটের সঙ্গে চোখাচোখি করার চেষ্টা করলেও তা সন্তর্পণে এড়িয়ে গিয়েছেন ডাচেস অব কেমব্রিজ।’ তবে জনপ্রিয়তায় যে এগিয়ে ছিলেন হ্যারি-মেগানই। বইটিতে একটি সংবাদমাধ্যমের করা পরিসংখ্যান উদ্ধৃত করে তার প্রমাণ দেওয়া হয়েছে। নভেম্বর ২০১৭ থেকে জানুয়ারি ২০২০-র মধ্যে করা ওই সমীক্ষা অনুযায়ী, হ্যারি-মেগানকে নিয়ে মানুষের উৎসাহ উইলিয়াম-কেটের তুলনায় ৮৩% বেশি।
বইটির আরও দাবি, বিয়ের পর পর নাকি উইনসরে নিজেদের মতো করে সংসার গুছিয়ে নিতে চেয়েছিলেন হ্যারি-মেগান। তাতে ভুরু কুঁচকেছিলেন রাজপরিবারের বাকি সদস্যরা। ধীরে ‘মাটির কাছাকাছি’ চলে আসছিলেন এই দম্পতি। পরিস্থিতির চাপে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন প্রিন্স হ্যারি। স্ত্রী-সন্তানকে এই পরিবেশ থেকে উদ্ধার করতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন। বিষয়টি নিয়ে রানি দ্বিতীয় এলিজ়াবেথের সঙ্গে দেখা করে আলোচনা করতে চেয়েছিলেন। কানাডা থেকে ফিরে তাই ঠাকুমার সঙ্গে দেখা করার তোড়জোড়ও করেছিলেন। কিন্তু তাঁকে সরাসরি জানিয়ে দেওয়া হয়, রানির সঙ্গে দেখা করতে মাসের শেষ অবধি অপেক্ষা করতে হবে।
শেষমেশ প্রিন্স উইলিয়াম এবং প্রিন্স চার্লসের তরফে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়, সব ছেড়েছুড়ে আলাদা হতে চাইলে রাজপরিবারের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্কে ইতি টানতে হবে এই দম্পতিকে। তাঁদের বাসভবন ফ্রগমোর কাসেলে সারাইয়ে খরচ হওয়া অর্থ ফিরিয়ে দিতে হবে। এমনকি ফেরাতে হবে সব উপাধিও। শেষ পর্যন্ত সেই পথেই হেঁটেছেন হ্যারি-মেগান। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে তাঁর পরিচয় দেওয়ার সময়ে তাঁর নামের আগে ‘প্রিন্স’ শব্দটি ব্যবহার না করার আর্জি জানাতে দেখা গিয়েছিল হ্যারিকে।
এখন ১৪ মাসের পুত্র আর্চিকে নিয়ে আমেরিকার লস অ্যাঞ্জেলেসে ঘর বেঁধেছেন হ্যারি-মেগান।

Advertisement

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন