চিনকে তুষ্ট রাখতে দিল্লি নেই মার্কিন প্রকল্পে

কূটনৈতিক সূত্রের খবর, সেপ্টেম্বরে নয়াদিল্লিতে আমেরিকার সঙ্গে যে ২+২-এর বৈঠকটি হতে চলেছে, সেখানে প্রসঙ্গটি ফের উত্থাপন করে ভারতের উপর চাপ তৈরি করবে ওয়াশিংটন।

Advertisement

অগ্নি রায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৮ ০৪:২৬
Share:

ফাইল চিত্র

জুন মাসের গোড়ায় ইঙ্গিত ছিল। জুলাইয়ের শেষে তার ফলাফল দেখা গেল। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় নীতির প্রশ্নে নিঃশব্দ বদল এনে চিন-বিরোধিতাকে লঘু করতে উদ্যোগী হয়েছে নয়াদিল্লি।

Advertisement

সিঙ্গাপুরে ১ জুন শাংগ্রি লা সংলাপে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানিয়েছিলেন, এই মহাসাগরীয় অঞ্চলকে তিনি কখনওই ‘হাতে গোনা কিছু সদস্য দেশের কৌশলগত ক্ষেত্র বা ক্লাব’ হিসেবে দেখেন না। তখনই সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছিল, চিনের সঙ্গে সংঘাত এড়িয়েই মহাসাগরীয় নীতি তৈরি করা হবে। সূত্রের খবর, ৩০ জুলাই জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং আমেরিকার উদ্যোগে ওই অঞ্চলেই পরিকাঠামো সংক্রান্ত যে প্রকল্প ঘোষণা হয়, তাতে থাকার কথা ছিল ভারতেরও। কিন্তু ওই প্রকল্প থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছে নয়াদিল্লি।

কূটনৈতিক সূত্রের খবর, সেপ্টেম্বরে নয়াদিল্লিতে আমেরিকার সঙ্গে যে ২+২-এর বৈঠকটি হতে চলেছে, সেখানে প্রসঙ্গটি ফের উত্থাপন করে ভারতের উপর চাপ তৈরি করবে ওয়াশিংটন। বলা হবে ওই উদ্যোগে শামিল হতে। সেখানে কী ভাবে পরিস্থিতির মোকাবিলা করা যায়, তার প্রস্তুতি শুরু করেছে সাউথ ব্লক। এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যে ত্রিপাক্ষিক প্রকল্পটি শুরু হল, তাকে চিনের ওবর প্রকল্পের পাল্টা হিসেবেই মনে করা হচ্ছে। এটা ঘটনা যে ভারত এখনও ঘোষিত ভাবে ওবর-এর বিরোধী। কিন্তু একই সঙ্গে তারা এই মুহূর্তে নতুন করে এমন কোনও বার্তাও বেজিংকে দিতে চায় না যাতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে আবার সঙ্কট তৈরি হয়।

Advertisement

উহানে চিনের প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং-এর সঙ্গে ঘরোয়া বৈঠকের পর থেকেই ডোকলাম-ক্ষতে প্রলেপ দিতে তৎপর হয়েছে সাউথ ব্লক। মহাসাগরীয় অঞ্চলে চিনের একাধিপত্যের বিরুদ্ধে পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির সঙ্গে জোট বেঁধে নেতৃত্ব দান থেকেও ধীরে ধীরে পিছু হঠেছে মোদী সরকার। শাংগ্রি-লায় তাঁর বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করে দেন, এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে কোনও বিশেষ দেশের (চিন) বিরুদ্ধাচরণ করা তাঁর কাম্য নয়। রাজনৈতিক সূত্রের মতে, ভারতের এই পরিবর্তিত অবস্থান ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনামের মতো দেশগুলির কাছে হতাশাজনক হলেও নয়াদিল্লি এক্ষেত্রে নাচার। ভোটের মুখে দাঁড়িয়ে জাতীয় বাধ্যবাধকতার দিকটি বিবেচনা করে শক্তিশালী প্রতিবেশী চিনের সঙ্গে নরম নীতি নিয়েই এগোনোটাই এখন বিজেপি সরকারের কাছে জরুরি।

অথচ গত নভেম্বরে সাড়ম্বরেই এই তিনটি দেশের (জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং আমেরিকা) সঙ্গে চতুর্দেশীয় জোট গড়েছিল ভারত। উদ্দেশ্য ছিল, চিনের একাধিপত্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। মহাসাগরীয় অঞ্চলকে ‘মুক্ত এবং অবাধ’ এবং ‘আঞ্চলিক সংযোগকে শক্তিশালী’ করতে জাপান এবং জাপান-অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে পৃথক আলোচনাও করেছিল নয়াদিল্লি। কিন্তু এরপরই চিনের সঙ্গে ধীরে ধীরে সম্পর্ক সহজ করার পথে হাঁটতে থাকে ভারত সরকার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন