চিনকে রুখতে মরিয়া দিল্লির সাহায্য সু চি-কে

কূটনৈতিক শিবিরের মতে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চিনের আগ্রাসী ভূমিকার পাল্টা হিসেবে মায়ানমারকে যতটা সম্ভব কাছে পেতে চাইছে ভারত। কৌশলগত অবস্থানের প্রশ্নে দেশটির গুরুত্ব নয়াদিল্লির কাছে ক্রমশই বাড়ছে। আসিয়ান-ভুক্ত দেশগুলির সঙ্গে ভারতের ভৌগোলিক যোগসূত্র একমাত্র যে দেশের মাধ্যমে, সেটি হল মায়ানমার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:৫৩
Share:

দর্শন: মায়ানমারের বাগান-এ একটি বৌদ্ধ মন্দিরে। ছবি: পিটিআই।

ড্রাগনের ‘নেকনজর’ থেকে মায়ানমারকে মুক্ত করতে সর্বাত্মক প্রয়াস শুরু করল নয়াদিল্লি।

Advertisement

গত কাল প্রেসিডেন্ট হিতিন কওয়াইয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আজ ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী আউং সান সু চি-র সঙ্গে বৈঠক করে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে এক নয়া পর্বের সূচনা করলেন তিনি। দু’দেশের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা আরও বাড়ানো নিয়ে কথা হয়েছে। সই হল সমুদ্রপথে নিরাপত্তা বাড়ানো-সহ মোট ১১টি চুক্তিপত্রে। সে দেশের নাগরিকদের ভারতে আসার জন্য ভিসা-ফি তুলে দেওয়ার কথাও ঘোষণা করলেন মোদী। একটি আবেগঘন মুহূর্তে সু চি-র হাতে মোদী তুলে দিলেন একত্রিশ বছর আগে শিমলার ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্সড স্টাডিজ’-এ তাঁর জমা দেওয়া গবেষণাপত্রের বিশেষ প্রতিলিপি। মোদীর কথায়, ‘‘মায়ানমারের উন্নয়নে আমরাও অবদান রাখতে চাই। ভারত সরকারের ‘সব কা সাথ, সব কা বিকাশ’ উদ্যোগে সামিল করতে চাই তাদের।’’

কূটনৈতিক শিবিরের মতে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চিনের আগ্রাসী ভূমিকার পাল্টা হিসেবে মায়ানমারকে যতটা সম্ভব কাছে পেতে চাইছে ভারত। কৌশলগত অবস্থানের প্রশ্নে দেশটির গুরুত্ব নয়াদিল্লির কাছে ক্রমশই বাড়ছে। আসিয়ান-ভুক্ত দেশগুলির সঙ্গে ভারতের ভৌগোলিক যোগসূত্র একমাত্র যে দেশের মাধ্যমে, সেটি হল মায়ানমার। মোদীর সাধের প্রকল্প ‘অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি’ যদি কার্যকর করতে হয়, তা হলে মায়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ আরও বহুগুণ বাড়ানো ছাড়া গতি নেই। বাণিজ্য, সংস্কৃতি ও নিরাপত্তা— তিনটি ক্ষেত্রেই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে কী ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, তা নিয়ে সু চি-র সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা সেরেছেন মোদী। ভারতের বিভিন্ন জেলে বন্দি মায়ানমারের চল্লিশজন নাগরিককে মুক্তি দেওয়ার কথাও ঘোষণা করা হয়েছে। সন্ধেয় ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের উদ্দেশে মোদী বলেন, ‘‘দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দরজা মায়ানমারের দিকেই খোলে। ভারত এখানে যোগসূত্র তৈরি করতে উৎসুক।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের নিয়েও চাপ দেবে ভারত

তবে এই কাজে চিনের প্রাচীর যে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে, সে কথা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে নয়াদিল্লি। মায়ানমারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে পুঁজি সরবরাহ, কম সুদে ঋণ, প্রযুক্তিগত সাহায্য— কয়েক বছর ধরে মুড়িমুড়কির মত বিলিয়ে গিয়েছে বেজিং। বিনিময়ে চিনের যে বাণিজ্যিক লাভ হয়নি— এমনটাও নয়। মায়ানমারের বিপুল হাইড্রোকার্বন রসদ হাতের মুঠোয় পাওয়া, অবাধ বাণিজ্যপথ, তেল গ্যাস করিডর ব্যবহারের মত বিষয়গুলিতে যথেচ্ছ সুবিধা পাচ্ছে চিন। ভারত ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে এই ক্ষেত্রগুলিতে। পাশাপাশি মায়ানমারের মাধ্যমে ভারত মহাসাগরের আধিপত্য বিস্তারের কাজটিও করে চলেছে চিন।

গত এক বছর ধরে আসিয়ান দেশগুলির সঙ্গে বহুপাক্ষিক এবং দ্বিপাক্ষিক স্তরে প্রতিরক্ষা, এবং বাণিজ্যিক যোগাযোগ বাড়াতে মরিয়া ভারত। কিন্তু মায়ানমারে চিনের প্রভাব কমিয়ে সে দেশের সঙ্গে আরও গভীর সম্পর্ক তৈরি না করলে সাফল্য আসবে না, তা স্পষ্ট। সেই লক্ষ্যপূরণে আজ একটি বড় পদক্ষেপ করা হল বলেই দাবি করছে বিদেশ মন্ত্রক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement