কে সন্ত্রাসবাদী? ভারত-পাক তরজায় উত্তপ্ত রাষ্ট্রপুঞ্জ

রাষ্ট্রপুঞ্জের মঞ্চে কুরেশি দাবি করেন, পাকিস্তানে একাধিক জঙ্গি হামলায় ভারত জড়িত। পাকিস্তানে ধৃত প্রাক্তন ভারতীয় নৌসেনা অফিসার কুলভূষণ যাদব সেখানে জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা করতে গিয়েছিলেন।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নিউ ইয়র্ক ও নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০১৮ ০৪:১৩
Share:

শাহ মেহমুদ কুরেশি এবং সুষমা স্বরাজ

সন্ত্রাস প্রশ্নে ফের রাষ্ট্রপুঞ্জে পাকিস্তানকে তুলোধোনা করেছিলেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। তার জবাবে ভারতের বিরুদ্ধেও জঙ্গি হামলায় যুক্ত থাকার অভিযোগ তুললেন সে দেশের বিদেশমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি। পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণরেখাতেও উত্তাপ বাড়ানোর চেষ্টা করল পাকিস্তান। জবাবে রাষ্ট্রপুঞ্জের মঞ্চে ভারত জানিয়ে দিল, এমন ভিত্তিহীন অভিযোগ পাকিস্তানে জঙ্গি হামলায় নিহত শিশুদের স্মৃতির পক্ষে অবমাননাকর। পাকিস্তান আবার টেনে আনল সঙ্ঘ পরিবার ও বিজেপির ‘সন্ত্রাস’-এর প্রসঙ্গ।

Advertisement

গতকাল রাষ্ট্রপুঞ্জের মঞ্চে কুরেশি দাবি করেন, পাকিস্তানে একাধিক জঙ্গি হামলায় ভারত জড়িত। পাকিস্তানে ধৃত প্রাক্তন ভারতীয় নৌসেনা অফিসার কুলভূষণ যাদব সেখানে জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা করতে গিয়েছিলেন। এই প্রসঙ্গে ২০১৪ সালে পেশোয়ারে সেনা স্কুলে হামলার কথা উল্লেখ করেন তিনি। কুরেশির দাবি, ওই হামলায় জড়িত জঙ্গিদের পিছনেও ভারতের মদত রয়েছে।

পাক বিদেশমন্ত্রীর আরও দাবি, ‘‘কাশ্মীর নিয়ে বিবাদ দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় সমস্যা। রাষ্ট্রপুঞ্জের সুপারিশ কার্যকর করলে কাশ্মীর নিয়ে সমস্যা মিটত।’’ এর পরে সাম্প্রতিক আলোচনার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার দায় পুরোপুরি দিল্লির উপরে চাপান তিনি। তাঁর দাবি, ‘‘নরেন্দ্র মোদী সরকারের মনোভাবের জন্য কার্যকর আলোচনার সুযোগ নষ্ট হয়েছে। তুচ্ছ কারণে তারা আলোচনা বন্ধ করেছে। কাশ্মীরে প্রতিদিন রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চালাচ্ছে দিল্লি।’’ এই প্রসঙ্গে কাশ্মীরের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের নয়া রিপোর্টেরও সমালোচনা করেছেন কুরেশি।

Advertisement

জবাবে রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের অন্যতম শীর্ষ কূটনীতিক এনাম গম্ভীর বলেন, ‘‘পাক বিদেশমন্ত্রীর ভিত্তিহীন অভিযোগ পেশোয়ার হামলায় নিহত শিশুদের স্মৃতির পক্ষে অবমাননাকর। ইমরান খান সরকারই ক্ষমতায় আসার পরে জানিয়েছিল, পেশোয়ার হামলায় নিহত শিশুদের জন্য শোকার্ত হয়েছিলেন ভারতের বহু মানুষ।’’ সন্ত্রাস দমনে পাকিস্তান কিছুটা এগিয়েছে বলে মন্তব্য করেছিলেন কুরেশি। এনাম বলেন, ‘‘১৩২ জন নিষিদ্ধ জঙ্গি ও ২২টি নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনকে যে পাকিস্তান মদত দেয়, তা কি তারা অস্বীকার করতে পারে?’’ মানবাধিকার প্রসঙ্গে পাক দাবির কথা উড়িয়ে দিয়ে ভারতীয় কূটনীতিক মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘‘পাকিস্তান মানবাধিকার নিয়ে দ্বিচারিতা করছে। অর্থনীতিবিদ আতিফ মিয়াঁকে আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদে স্থান দেওয়ার পরেও সরিয়ে দিয়েছে ইমরান সরকার। কারণ, তিনি সংখ্যালঘু আহমদি সম্প্রদায়ভুক্ত।’’ তাঁর কথায়, ‘‘ভারত তুচ্ছ কারণে আলোচনা বন্ধ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন পাক বিদেশমন্ত্রী। কাশ্মীরে আমাদের জওয়ানদের হত্যাকে যে তারা তুচ্ছ বলে মনে করে, তা বুঝিয়ে দিয়েছে ইসলামাবাদ।’’

এর জবাবে পাক কূটনীতিক জানিয়েছেন, দক্ষিণ এশিয়ায় সন্ত্রাসের সবচেয়ে বড় কারখানা হল ভারতে আরএসএসের কেন্দ্রগুলি। ‘হিন্দু চরমপন্থী’ যোগী আদিত্যনাথ এখন ভারতের সবচেয়ে বড় রাজ্য উত্তরপ্রদেশের রাজনৈতিক মুখ। বর্তমানের ‘অনুদার’ ভারতে বিরোধীদের কোনও স্থান নেই।

আজ ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে পরোক্ষে ভারত-পাক সম্পর্ক নিয়ে মুখ খোলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর কথায়, ‘‘ভারত সব সময়েই শান্তির পথে হাঁটতে চায়। কিন্তু আত্মসম্মান ত্যাগ করে নয়।’’ সার্জিকাল স্ট্রাইকের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমাদের জওয়ানেরা যে কোনও হামলার কড়া জবাব দেবেন।’’ বস্তুত এ দিনই জম্মু-কাশ্মীরের পুঞ্চে নিয়ন্ত্রণরেখা পেরোয় পাক কপ্টার। ভারতীয় সেনা গুলি চালাতে শুরু করলে কপ্টারটি পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে ফিরে যায়। আগামী কয়েক মাসে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রণরেখায় উত্তেজনা বাড়ানোর চেষ্টা করতে পারে বলে ধারণা দিল্লির।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন