ইমরানের চাপ বাড়িয়ে কাবুলে বাঁধ গড়বে দিল্লি

হিন্দকুশ পর্বতের সাংলাখ থেকে উৎপন্ন হয়ে কাবুল নদী বয়ে গিয়েছে জালালাবাদ হয়ে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া অঞ্চলে। এই নদীটিতে বাঁধ তৈরি নিয়ে বেশ কিছু দিন মতান্তর চলছে ইসলামাবাদ ও কাবুলের মধ্যে।

Advertisement

অগ্নি রায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৮ ০৪:০৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

এখনও ঠিক মতো ইনিংসই শুরু করে উঠতে পারলেন না ইমরান খান। তার মধ্যেই ভারত-পাকিস্তান কূটনৈতিক ম্যাচের চেহারা বদলাতে শুরু করল!

Advertisement

গত সপ্তাহে আফগানিস্তানের সঙ্গে ‘জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ অন ডেভেলপমেন্ট কো অপারেশন’-এর বৈঠকে বসেছিল ভারত। উপস্থিত ছিলেন বিদেশ মন্ত্রকের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিষয়ক সচিব টি এস তিরুমূর্তি ও আফগান অর্থ মন্ত্রকের উপমন্ত্রী ইসমাইল রহিমি। সূত্রের খবর, স্থির হয়েছে, আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তানে বয়ে যাওয়া কাবুল নদীর উপরে যৌথ উদ্যোগে একটি বাঁধ তৈরির প্রকল্পে কাবুলের সঙ্গে হাত মেলাবে নয়াদিল্লি। অবশ্যই প্রস্তাবিত বাঁধটি (শাহতুত বাঁধ) তৈরি হবে আফগানিস্তানের নদী অববাহিকায়। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ঘোরতর বিরোধিতায় নামবে ইসলামাবাদ।

হিন্দকুশ পর্বতের সাংলাখ থেকে উৎপন্ন হয়ে কাবুল নদী বয়ে গিয়েছে জালালাবাদ হয়ে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া অঞ্চলে। এই নদীটিতে বাঁধ তৈরি নিয়ে বেশ কিছু দিন মতান্তর চলছে ইসলামাবাদ ও কাবুলের মধ্যে। পাকিস্তান সরকারের বক্তব্য, কাবুল নদীতে বাঁধ দেওয়া হলে তাদের দেশে জলের প্রবাহ কমে যাবে। পাশাপাশি, পাকিস্তানের পক্ষ থেকে দু’দেশের মধ্যে বয়ে যাওয়া নদীগুলির জলবণ্টন নিয়ে একটি স্থায়ী চুক্তি করার জন্য আফগানিস্তানের উপর চাপ দেওয়া হচ্ছে। তবে এখনও নতি স্বীকার করেনি কাবুল। কাবুলের আশঙ্কা, পাকিস্তানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হলে কাবুল নদী অববাহিকায় ভবিষ্যতে জলবিদ্যুৎ এবং সেচ প্রকল্প গড়তে সমস্যা হতে পারে।

Advertisement

এই অবস্থায় আফগানিস্তান দ্বারস্থ হয়েছে ভারতের। নয়াদিল্লিও লুফে নিয়েছে কাবুলের প্রস্তাব। তবে প্রশ্ন উঠছে, ইতিমধ্যেই এই ‘ঘোলা’ নদীতে মাথা গলিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার ভূকৌশলগত রাজনীতিতে আরও জটিলতা কেন তৈরি করতে চাইছে সাউথ ব্লক? এমনিতেই আফগানিস্তানে পুনর্গঠনে ভারতের ভূমিকা নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে সমালোচনা করে আসছে ইসলামাবাদ।

কূটনৈতিক শিবিরে মতে, নয়াদিল্লি জেনেশুনেই এটা করেছে। প্রস্তাবিত শাহতুত বাঁধটি গড়তে প্রায় ৩০ কোটি ডলারের মতো খরচ হওয়ার কথা। প্রকল্পটি রূপায়িত হলে কাবুলের ২০ লক্ষ মানুষের জলের সমস্যা মিটবে। পাশাপাশি, চাহার, আশিয়াব ও
খাইরাবাদ এলাকার প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে জলসেচ সম্ভব হবে। এই বিরাট উন্নয়ন কাজে শরিক হয়ে আন্তর্জাতিক শিবিরের কাছে ইতিবাচক বার্তা দিতে চাইছে দিল্লি।

কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, নদীর জল বণ্টন নিয়ে ইসলামাবাদের উপর একটি স্থায়ী চাপ তৈরি করে রাখাটাও ভারতের কৌশলগত উদ্দেশ্য। বিশ্বব্যাঙ্কের তত্ত্বাবধানে পাকিস্তানের সঙ্গে ১৯৬০ সালের সিন্ধু জলচুক্তি নিয়ে দু’দেশের মধ্যে বারবার সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী সিন্ধু, বিতস্তা ও চন্দ্রভাগা থেকে প্রতি বছর পাকিস্তানে ন্যূনতম যে জল পৌঁছনোর কথা, তার থেকে অনেকটা বেশিই যায়। ভারত সেই বাড়তি জল কাজে লাগিয়ে সেচ, বিদ্যুৎ উৎপাদন, শিল্পোৎপাদনের রাস্তায় হাঁটতে চায়। তা নিয়ে আপত্তি রয়েছে পাকিস্তানের। এই নিয়েই দু’দেশের মধ্যে ছায়াযুদ্ধ চলছে।

এই পরিস্থিতিতে অনেকেই মনে করছেন, কাবুলকে পাশে নিয়ে নদী-রাজনীতিতে ইমরান সরকারকে নতুন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিল ভারত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন