দিনের মধ্যে কত ক্ষণ বসে থাকেন আপনি? শেষ কবে অফিসে লিফটের বদলে সিঁড়ি ভেঙেছেন? সকালে উঠে শরীরচর্চাই বা কত দিন করেন? এই সব প্রশ্নের উত্তর বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই উত্তর হয়— সময় পাওয়া যায় না। ব্যস্ততা। কিন্তু ব্যস্ততা থাকলেও কর্মঠ কি আপনি?
কোন দেশের নাগরিকরা কতটা অ্যাক্টিভ বা কর্মঠ তা নিয়ে একটা সমীক্ষা করেছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। মোট ১৬৮টা দেশের নাগরিকদের নিয়ে করা হয়েছিল এই সমীক্ষা। এর মধ্যে ভারতীয়রা কত নম্বরে আছে বলুন তো?
সমীক্ষাটি ২০১৬ সালের হলেও জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে সম্প্রতি। ভারতীয় নাগরিকদের মধ্যে প্রায় ৩৪ শতাংশই কর্মতৎপর নন, বলছে ‘দ্য ল্যান্সেট’ জার্নালে প্রকাশিত এই সমীক্ষা। অর্থাৎ ভারতীয়দের অলস বলা যেতেই পারে।
সবচেয়ে কুঁড়ে দেশ কুয়েত, এমনটাই বলছে সমীক্ষা। কুয়েত, সৌদি আরব, আমেরিকান সামোয়া, ইরাক- এই দেশগুলির নাগরিকরাও কর্মঠ নন। আলস্যের দিক থেকে প্রথম চারে রয়েছে এরাই। এমনকি, এই দেশগুলির অর্ধেকের বেশি নাগরিক শুয়ে বসেই কাটিয়ে দেন। ব্যায়ামের ধারও ধারেন না।
যাঁদের নিয়ে সমীক্ষা করা হয়েছে, দেখা হয়েছে তাঁদের অর্থনৈতিক অবস্থান কী, কোন পথে তাঁরা অফিস যান, অফিস যেতে কতটা সময় লাগে, কী খাবার খান, কতটা কাজ করেন, চাকরি করেন না ব্যবসা। ১৮ বছর থেকে যাঁরা অবসরপ্রাপ্ত নন, তাঁদের নিয়েই সমীক্ষা করা হয়েছে।
সমীক্ষা বলছে, এই কুঁড়েমি থেকেই বা শরীর চর্চা না করার অভ্যাস থেকেই ক্যানসার, ডায়াবিটিস, অ্যালঝাইমার্স, স্ট্রোক, অস্টিও-আর্থারাইটিস, ক্রনিক কিডনির অসুখের মতো ‘নন কমিউনিকেবল ডিজিজ’-এর সম্ভাবনা বাড়ছে এই দেশগুলিতে।
হু’র সমীক্ষা অনুযায়ী, নাগরিকদের কুঁড়েমির দিক থেকে দেখলে ভারতীয়দের স্থান ৫২ নম্বরে। আর কর্মতৎপরতার দিক থেকে দেখলে ভারতীয়দের স্থান ১১৭ নম্বরে। ভারতীয়দের ৩৪ শতাংশ ব্যক্তিই যথেষ্ট শারীরিক পরিশ্রম করেন না বলে দাবি করা হয়েছে সমীক্ষায়।
সারা বিশ্বের ১৬৮টি দেশের মধ্যে ৫৫টি দেশের ক্ষেত্রেই নাগরিকদের এক তৃতীয়াংশ এক্কেবারে অলস। পরিশ্রমসাধ্য কাজ করতে তাঁরা কেউই পছন্দ করেন না।
১৬৮টি দেশের মধ্যে এক নম্বরে রয়েছে উগান্ডা। হু-র সমীক্ষা অনুযায়ী উগান্ডার মাত্র ৫.৫ শতাংশ নাগরিক অলস প্রকৃতির। বাচ্চা থেকে বুড়ো, এই দেশের বাসিন্দারা অত্যন্ত কর্মতৎপর। এরপর রয়েছে মোজ়াম্বিক, লেসোথে, তানজানিয়া, ন্যুই, ভানুয়াতু, টোগো।
সমীক্ষা বলছে, ১৬৮টি দেশের মধ্যে ১৫৯টি দেশের মহিলারা একেবারেই শরীরচর্চা করেন না। সব মিলিয়ে এই দেশগুলির ৪৮ শতাংশ মহিলা এবং ২২ শতাংশ পুরুষ যথেষ্ট শারীরিক পরিশ্রম করেন না। এর মধ্যে রয়েছে ভারতীয় মহিলারাও। চাকুরিরতাদের ক্ষেত্রে বেশির ভাগেরই কাজ এক জায়গায় বসে। তাই ব্যায়াম করার সময় তাঁদের নেই। আর বাড়ির কাজেও তাঁরাই বেশি সময় দেন। তাই শরীরচর্চার সময় নেই।
হু’র রিপোর্ট বলছে, এই ১৬৮টি দেশে প্রতি চার জন পুরুষের মধ্যে এক জন পুরুষ ও প্রতি তিন জন মহিলার মধ্যে এক জন মহিলা একেবারেই ব্যায়াম করেন না।
হু’র তরফে সুইত্জারল্যান্ডের চিকিৎসক রেজিনা রিপোর্টে বলেছেন, হাঁটাচলার জন্য একেবারেই সময় দেন না উন্নয়নশীল দেশের মানুষরা। হাঁটার জায়গাও কম তাঁদের আশপাশে, এমনটাও উল্লেখ রয়েছে রিপোর্টে। আর শারীরিক পরিশ্রম যাঁরা করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে আবার পুষ্টির মাত্রা অত্যন্ত কম।
রিপোর্ট বলছে, এক টানা বসে কাজ করেন এই সব দেশের বেশির ভাগ নাগরিকই। শারীরিক পরিশ্রম খুব কমই হয়। অবসর সময়ে চোখ রাখেন মোবাইলে বা ল্যাপটপে। এঁরা মানসিক অবসাদে ভোগেনও বেশি।
স্মার্টফোন, ট্যাব, মোবাইল গেমেই বিনোদন খুঁজে নিচ্ছে মানুষ। ফলে হাঁটাচলার প্রবণতা কমে গিয়েছে।ভাজাভুজি খাওয়ার প্রবণতাও বাড়ছে। হু বলছে, এটা একটা বড় সমস্যা। উন্নত দেশগুলো এই সমস্যা অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোকেও সেই পথে হাঁটতে হবে।
সারা বিশ্বের মধ্যে আলস্যের নিরিখে ভারতের স্থান বেশ উপরের দিকেই। এর আগেও স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সমীক্ষা জানিয়েছিল, গড়ে ভারতীয়রা সারা দিনে মাত্র ৪২৯৭ পা হাঁটে যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।
বিশ্ব জুড়ে ২০ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এই সমীক্ষা করা হয়েছিল ২০১৬ সাল নাগাদ।