International News

পাসপোর্ট আটকে রেখেছে ভারতীয় মালিক, শারজায় অসহায় সঞ্জীবের ভরসা আরবি বন্ধুরাই

বিদেশ বিভুঁইয়ে তিনি একা। ঠাঁইহারা। কাজহারাও। কোনও দিন খাবার জুটছে, কোনও দিন বা তা-ও মিলছে না। দেশে ফেরার রাস্তা খুঁজছেন। কিন্তু, সে পথ আটকে আইনি জটিলতায়। মাথার ওপরে ছাদ নেই। বরং তিনি বাস করছেন ছাদের ওপর। গত আট মাস এ ভাবেই কাটছে সঞ্জীব রাজনের।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৬ ১৩:৪৭
Share:

সঞ্জীব রাজন। ছবি সৌজন্যে ফেসবুক।

বিদেশ বিভুঁইয়ে তিনি একা। ঠাঁইহারা। কাজহারাও। কোনও দিন খাবার জুটছে, কোনও দিন বা তা-ও মিলছে না। দেশে ফেরার রাস্তা খুঁজছেন। কিন্তু, সে পথ আটকে আইনি জটিলতায়। মাথার ওপরে ছাদ নেই। বরং তিনি বাস করছেন ছাদের ওপর। গত আট মাস এ ভাবেই কাটছে সঞ্জীব রাজনের।

Advertisement

পেশায় ইলেকট্রিশিয়ান। মধ্য চল্লিশের সঞ্জীব সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে গিয়েছিলেন পেটের টানে। সেখানে একটি নির্মাণ সংস্থায় কাজের সুরাহারও হয়েছিল। কিন্তু, চুক্তি শেষে সঞ্জীবের পাসপোর্ট ফেরত দিতে অস্বীকার করেছেন তাঁর মালিক। ফলে এখন সে দেশেই আটকে পড়ছেন তিনি। কেরলের কোল্লামের বাড়িতে তাঁর অপেক্ষায় এখন দিন গুনছেন স্ত্রী, দুই ছেলেমেয়ে আর বয়স্ক মা-বাবা। তবে ছেলে কবে কাছে ফিরবেন জানেন না তাঁরা।

এক চোখে দেখতে পারেন না সঞ্জীব। আমিরশাহিতে পৌঁছে শারজার এক নির্মাণ সংস্থায় কাজ পেয়েছিলেন। সংস্থার মালিক এস সিংহ আদতে পঞ্জাবের বাসিন্দা। গত মার্চেই তাঁর চুক্তি শেষ হয়ে যায়। তার পর আর কোথাও কাজ জোটেনি সঞ্জীবের। এর পর থেকেই অতি কষ্টে দিন কাটছে তাঁর। একটি নির্মীয়মান ছ’তলা বাড়ির একচিলতে ছাদে রাত কাটাচ্ছেন তিনি। খাওয়া জুটছে ওই বাড়ির কয়েক জন মজুরের দয়ায়। সঞ্জীবের এই অবস্থা দেখে তাঁকে কখনও-সখনও খেতে দিচ্ছেন কাছেপিঠের রেস্তোরাঁ মালিকেরা। ইতিমধ্যেই আমিরশাহিতে ভারতীয় দূতাবাসে যোগাযোগ করে নিজের দুরবস্থার কথা জানিয়েছেন সঞ্জীব। তবে তাঁর দাবি, দূতাবাসের থেকে কোনও রকমের সহযোগিতাই পাননি তিনি। সোমবার সঞ্জীবের কাহিনি ফলাও করে ছাপা হয়েছে আমিরশাহির এক বহুল প্রচারিত দৈনিকে। এর পরই তাঁকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন আশপাশের মানুষজন। রুজিরুটির জোগাড়ের একটা সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছে। প্রাক্তন মালিক এস সিংহও জানিয়েছেন, সঞ্জীবকে কাজে ফেরানোর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন তিনি। যদিও দূতাবাসের আধিকারিকদের কাছ থেকে এখনও কোনও সাড়া মেলেনি।

Advertisement

সঞ্জীব জানিয়েছেন, বছর দু’য়েক আগে শারজার কাজে যোগ দেওয়ার পর থেকে সংস্থার বাড়িতেই থাকতেন তিনি। তবে গত ১১ মার্চে তাঁর কাজের চুক্তি শেষ হওয়ার পর থেকেই রোজগার নেই তাঁর। প্রাপ্য টাকাপয়সা মেটালেও তাঁর পাসপোর্ট ফেরাতে অস্বীকার করেছেন মালিক। সঞ্জীব বলেন, “আমি বাড়ি ফিরতে চাই। মাসে মাত্র ৯০০ দিরহামে (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ১৭ হাজার) আমার কোনও ভাবে চলে না।” গোটা ঘটনা জানিয়ে লেবার কোর্টে আবেদনও করেছেন তিনি। কিন্তু, কবে তার শুনানি হবে, জানেন না সঞ্জীব। ফলে বার বার সকলের দরজায় ঘুরলেও দেশে ফেরার বিষয়ে সুরাহা হয়নি। তিনি বলেন, “গত আট মাসে ভারতীয় দূতাবাস থেকে শুরু করে প্রায় সকলের দরজায় কড়া নেড়েছি। কিন্তু, এগিয়ে আসেননি কেউ।”

তবে এ বার বোধহয় আশার আলোর দেখতে পাচ্ছেন সঞ্জীব। মিডিয়ায় এই খবর সামনে আসার পর ফোন এসেছে দূতাবাস থেকে। সাহায্যে হাত বাড়াচ্ছেন আশপাশের মানুষেরাও। তবে শেষমেশ তিনি করে দেশে ফিরবেন তা এখনও জানেন না সঞ্জীব।

আরও পড়ুন

সাঁড়াশি আক্রমণে দিশেহারা আইএস, কারও মোবাইলে সিম পেলেই গুলি বা গর্দান

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন