(বাঁ দিকে) ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং আয়াতোল্লা আলি খামেনেই (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
কয়েক দশকের পুরোনো বিবাদ মেটাতে আমেরিকার সঙ্গে একটি শান্তিপূর্ণ পরমাণু চুক্তি করতে রাজি ইরান। তবে জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়ে কোনও আপস করা হবে না বলে মঙ্গলবার জানিয়েছে আয়াতোল্লা খামেনেইয়ের দেশ।
ইরানের উপ-বিদেশমন্ত্রী সঈদ খতিবজ়াদে মঙ্গলবার সংযুক্ত আরব আমিরশাহির আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত ১২তম স্ট্র্যাটেজিক আলোচনায় বলেন, ‘‘আমেরিকা তৃতীয় দেশগুলির মাধ্যমে তেহরানকে পারমাণু আলোচনার বিষয়ে পরস্পরবিরোধী বার্তা পাঠাচ্ছে। তাদের মিত্র ইজ়রায়েল এবং ইউরোপীয় দেশগুলি অভিযোগ করছে, তেহরান পারমাণু কর্মসূচির আড়ালে অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে। কিন্তু ইরানের পারমাণু কর্মসূচি সম্পূর্ণ ভাবে শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে।’’ এর পরেই ‘শান্তিপূর্ণ পরমাণু চুক্তি’ সইয়ের পক্ষে সওয়াল করেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজ়েকশিয়ানের মন্ত্রিসভার সদস্য সঈদ।
গত জুনে ১২ দিনের সংঘাতপর্বের পর থেকে ওয়াশিংটন পরমাণু চুক্তি নিয়ে আলোচনা একতরফা ভাবে স্থগিত করে দিয়েছে বলেও আলোচনা করেন তিনি। প্রসঙ্গত, গত ১৩ জুন রাতে ইরানের রাজধানী তেহরান এবং একাধিক পরমাণুকেন্দ্রে হামলা চালিয়েছিল ইজ়রায়েলি যুদ্ধবিমান। ওই অভিযানের পোশাকি নাম ছিল, ‘অপারেশন রাইজ়িং লায়ন’! ঘটনাচক্রে, ইজ়রায়েলি হামলার দিনকয়েক আগে রাষ্ট্রপুঞ্জ নিয়ন্ত্রিত আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-র ডিরেক্টর জেনারেল রাফায়েল মারিয়ানো গ্রোসি জানিয়েছিলেন, পরমাণু বোমা নির্মাণের উদ্দেশ্যে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি চালাচ্ছে ইরান। যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছিল ইরান।
ইজ়রায়েলি হামলার ন’দিন পরে ২২ জুন ইরানের তিনটি পরমাণুকেন্দ্র, ফোরডো, নাতান্জ় এবং ইসফাহানে হামলা চালিয়েছিল আমেরিকার বি-২ বোমারু বিমান। ফেলা হয় বাঙ্কার ব্লাস্টার সিরিজের সবচেয়ে শক্তিশালী বোমা জিবিইউ-৫৭। সেই অভিযানের পোশাকি নাম ছিল ‘অপারেশন মিডনাইট হ্যামার’। ২৪ জুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্যোগে যুদ্ধবিরতি হলেও ওয়াশিংটনের দাবি মেনে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করতে রাজি হয়নি তেহরান। যা নিয়ে নতুন করে অশান্তির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে পশ্চিম এশিয়ায়। প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার জমানায় ইরানের সঙ্গে তিন বছরের পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি করেছিল ছয় শক্তিধর রাষ্ট্র— ব্রিটেন, ফ্রান্স, রাশিয়া, জার্মানি, চিন এবং আমেরিকা। অথচ ২০১৮-য় সেই চুক্তি ভেঙে বেরিয়ে এসেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অথচ চলতি বছরের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় দফায় হোয়াইট হাউসে প্রবেশের পর থেকে পরমাণু চুক্তি নিয়ে নতুন করে ইরানের উপর চাপ সৃষ্টি শুরু করেন তিনি।