Israel Iran Conflict

বোমা তৈরির জন্য ইউরেনিয়াম শুদ্ধকরণ কয়েক মাসের মধ্যে শুরু করতে পারে ইরান! মত রাষ্ট্রপুঞ্জের পরমাণু সংস্থারও

গত ১৩ জুন ইজ়রায়েল ইরানের পারমাণবিক এবং সামরিকঘাঁটিতে হামলা চালায়। তেহরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা থেকে বিরত রাখতেই ওই আক্রমণ বলে দাবি করে তেল আবিব। অন্য দিকে, ইরান বরাবরই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০২৫ ১৩:৪৫
Share:

রাষ্ট্রপুঞ্জ নিয়ন্ত্রিত আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার জেনারেল রাফায়েল মারিয়ানো গ্রোসি। —ফাইল চিত্র।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবি, ইরানের তিনটি পরমাণুকেন্দ্র সম্পূর্ণ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রপুঞ্জের নিয়ন্ত্রণাধীন আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা বা আইএইএ জানাল, মারাত্মক হলেও সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্র। আইএইএ-র প্রধান রাফায়েল গ্রোসি বলেন, ‘‘আমেরিকা এবং ইজ়রায়েলের হামলায় একাধিক পারমাণবিক কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সত্ত্বেও ইরান সম্ভবত কয়েক মাসের মধ্যেই ইউরেনিয়ামের শুদ্ধিকরণ শুরু করতে পারবে।’’ শনিবার সিবিএস নিউজ়-কে তিনি এ-ও বলেন, ‘‘সত্যি বলতে কি, কেউ-ই দাবি করতে পারে না যে, সব কিছু (পরমাণুঘাঁটি) সম্পূর্ণ ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছে এবং সেখানে আর কিছুই নেই।’’

Advertisement

গত ১৩ জুন ইরানের পারমাণবিক এবং সামরিকঘাঁটিতে হামলা চালায় ইজ়রায়েল।তেহরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা থেকে বিরত রাখতেই ওই আক্রমণ বলে দাবি করে তেল আবিব। অন্য দিকে, ইরান বরাবরই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে। এমতাবস্থায় আমেরিকাও তেহরানের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি পারমাণবিকঘাঁটিতে হামলা চালায়। যার প্রেক্ষিতে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেন, ‘‘পারমাণবিকঘাঁটিতে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা গুরুতর।’’ তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জোর দিয়ে বলেছেন, তাদের হামলার পরে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি কয়েক দশকের জন্য পিছিয়ে গিয়েছে।

কিন্তু আইএইএ-র প্রধান গ্রোসি বলছেন, ‘‘(ইরানে) এখনও কিছু (পারমাণবিকঘাঁটি) টিকে আছে।’’ সাক্ষাৎকারে তাঁর মন্তব্য, ‘‘(ইরান) কয়েক মাসের মধ্যে বা তারও কম সময়ে কয়েকটি সেন্ট্রিফিউজ় চালু করতে পারে। এবং সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম উৎপাদন করতেও সক্ষম হতে পারে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘ইরান এখনও শিল্প এবং প্রযুক্তিগত ভাবে সমৃদ্ধ...। তাই তারা যদি চায়, এখনও ওই সমস্ত কাজ চালিয়ে যেতে পারে।’’

Advertisement

উল্লেখ্য, ইরানের পরমাণুকেন্দ্র এবং সামরিকঘাঁটির উপর ইজ়রায়েলি হানাকে উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ নিয়ন্ত্রিত আইএইএ। গ্রোসি বলেছিলেন, ‘‘পরমাণু কেন্দ্রগুলির উপর কোনও অবস্থাতেই হামলা করা উচিত নয়। কারণ, তা মানুষের জীবন ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। এই ধরনের হামলা পরমাণু নিরাপত্তা, সুরক্ষা এবং নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে গুরুতর বিপদ ডেকে আনতে পারে। পাশাপাশি এটি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তাকেও ঝুঁকির মুখে ফেলে দেয়।’’ আইএইএ-র দাবি, আন্তর্জাতিক বিধিনিষেধ না মেনে পরমাণু কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে তেহরান। গত দু’দশকের মধ্যে প্রথম বার ইরান এমন কাজ করছে। তার পরেও দু’শোর বেশি ইজ়রায়েলি বিমান হামলা হয়েছে ইরানে।

অন্য দিকে, তারা পরমাণু বোমা বানানোর উদ্দেশে ইউরেনিয়ামের শুদ্ধিকরণ করছে, আইএইএ-র এই দাবি প্রসঙ্গে ইরান জানায়, বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্যই ৬০ শতাংশ পরিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম উৎপাদন করা হচ্ছে। কিন্তু গ্রোসি তেহরানের ‘সাফাই’ খারিজ করে দেন। এখন প্রশ্ন, হামলার আগে ইরান তাদের প্রায় ৪০৮ দশমিক ৬ কেজি (প্রায় ৯০০ পাউন্ড) উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুতের কিছু অংশ বা পুরোটা সরিয়ে নিতে পেরেছিল কি না। সিবিএস নিউজ়-কে গ্রোসির জবাব, ‘‘আমরা জানি না, এই উপাদান (ইউরেনিয়াম) এখন কোথায় আছে। কিছু অংশ হয়তো হামলায় ধ্বংস হয়েছে। আবার কিছু সরিয়ে নেওয়া হতে পারে। পরে হয়তো বিষয়টি স্পষ্ট হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement