International

জঙ্গি রোখার অজুহাতে অধিকৃত কাশ্মীরে যৌথ টহল চিন-পাকিস্তানের

কাশ্মীরের দখলীকৃত অংশ কব্জায় রাখা নিয়ে চিন্তিত পাকিস্তান। জঙ্গি কার্যকলাপ রুখতে বদ্ধপরিকর ভারত পাক অধিকৃত কাশ্মীরের জঙ্গি ঘাঁটিগুলিতে আচমকা অভিযান চালাতে পারে বলে আশঙ্কা ইসলামাবাদের। তেমন পরিস্থিতি হলে ভারতের মোকাবিলা করতে কতটা সক্ষম হবে পাকিস্তান?

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৬ ১৬:৪৮
Share:

ভারতের উপর চাপ আরও বাড়াতেই কি দুই প্রতিবেশীর এই করমর্দন?

কাশ্মীরের দখলীকৃত অংশ কব্জায় রাখা নিয়ে চিন্তিত পাকিস্তান। জঙ্গি কার্যকলাপ রুখতে বদ্ধপরিকর ভারত পাক অধিকৃত কাশ্মীরের জঙ্গি ঘাঁটিগুলিতে আচমকা অভিযান চালাতে পারে বলে আশঙ্কা ইসলামাবাদের। তেমন পরিস্থিতি হলে ভারতের মোকাবিলা করতে কতটা সক্ষম হবে পাকিস্তান? সংশয় রয়েছে পাক সেনার মধ্যেই। তাই পাক অধিকৃত কাশ্মীরে এ বার চিনা সেনাকে সঙ্গে নিয়ে যৌথ টহলদারি শুরু করল পাকিস্তানের সেনা।

Advertisement

পাকিস্তান এবং চিন অবশ্য দাবি করছে, এই যৌথ টহলদারির কারণটা অন্য। চিনের পশ্চিমাংশে জিনজিয়াং প্রদেশ থেকে অনেকে ইরাক এবং সিরিয়ার দিকে চলে যাচ্ছে আইএস-এ যোগ দিতে। তাদের রুখতেই নাকি এই যৌথ টহলদারি।

চিনের জিনজিয়াং প্রদেশে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। উইঘুর সম্প্রদায়ের মানুষরাই মূলত ইসলামের অনুগামী সেখানে। এই উইঘুরদের সঙ্গে চিনা কমিউনিস্ট সরকারের বিরোধও দীর্ঘ দিনের। জিনজিয়াং-এর স্বাধীনতার দাবিতে অস্ত্র হাতে তুলে নেওয়া উইঘুর জঙ্গিরা পশ্চিম চিনের বিভিন্ন অংশে নাশকতাও চালায়। কোথাও হামলা চালিয়ে তারা পশ্চিম সীমান্ত পেরিয়ে প্রতিবেশী কিরঘিজস্তান বা তাজিকিস্তানে আশ্রয় নেয়, এমন অভিযোগও দীর্ঘ দিনের। সেই উইঘুর মুসলিমদের মধ্যেই নাকি এ বার আইএস-এ যোগ দেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। সম্প্রতি অন্তত ১১৪ জন উইঘুর যুবক জিনজিয়াং থেকে ইরাক বা সিরিয়ায় গিয়ে আইএস-এ সামিল হয়েছে বলে একটি মার্কিন রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে। চিনের সরকার উইঘুর মুসলিমদের ধর্মাচরণে বাধা সৃষ্টি করে বলেই উইঘুরদের মধ্যে সন্ত্রাসবাদী প্রবণতা বাড়ছে বলেও নিউ আমেরিকা ফাউন্ডেশনের ওই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। চিনের সরকারি সংবাদমাধ্যমও জানিয়েছে, অন্তত ১০০ জন জিনজিয়াং থেকে আইএস রাজত্বে চলে গিয়েছে। তবে উইঘুরদের ধর্মাচরণে বাধা দেওয়া হয় বলে চিন স্বীকার করেনি।

Advertisement

চিন এবং পাকিস্তান বলছে, জিনজিয়াং থেকে গিলগিট-বাল্টিস্তান (পাক অধিকৃত কাশ্মীরের অংশ) হয়ে উইঘুর যুবকরা ইরাক-সিরিয়ার দিকে যাচ্ছে। তাই গিলগিট-বাল্টিস্তানে চিন-পাকিস্তান যৌথ টহলদারি চালাবে। কিন্তু এই দাবি ভারত নস্যাৎ করে দিচ্ছে। ভারতীয় গোয়েন্দারা বলছেন, জিনজিয়াং প্রদেশ থেকে ইরাক বা সিরিয়ায় যারা যাচ্ছে, তাদের পক্ষে অনেক সহজ পথ হল কিরঘিজস্তান বা তাজিকিস্তান হয়ে যাওয়া। জিনজিয়াং-এ নাশকতা চালিয়ে এমনিতেই ওই সব দেশে ঢুকে পড়ে উইঘুর জঙ্গিরা। ফলে সীমান্ত পেরিয়ে ওই সব দেশ হয়ে মধ্য এশিয়ার দিকে যাত্রা করা তাদের পক্ষে অনেক সুবিধাজনক। সে পথ তাদের অনেক পরিচিত। জিনজিয়াং থেকে গিলগিট-বাল্টিস্তান হয়ে পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরান হয়ে ইরাক-সিরিয়ায় যাওয়া অনেক শক্ত। কারণ প্রথমত, উইঘুর জঙ্গিরা চিনা সরকারের বিরুদ্ধে কাজ করছে। তাই পাকিস্তান পেরিয়ে যাওয়া তাদের পক্ষে খুব শক্ত। পাক সরকার কোনও ভাবেই উইঘুরদের প্রশ্রয় দেবে না। দ্বিতীয়ত, আইএস-এর বিরুদ্ধে আফগানিস্তান এবং ইরানেও এখন সক্রিয়তা তুঙ্গে। তাই ওই দুই দেশের মধ্যে দিয়ে ইরাক-সিরিয়ার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করাও আত্মহত্যা করার সামিল। তার চেয়ে কিরঘিজস্তান বা তাজিকিস্তান হয়ে কাস্পিয়ান সাগরের দিক দিয়ে ইরাক-সিরিয়ায় যাওয়া অনেক নিরাপদ।

আরও পড়ুন: সীমান্তে এত ট্যাঙ্ক পাঠালে কিন্তু আটকাবে বিনিয়োগ, হুঁশিয়ারি চিনের

নয়াদিল্লি বলছে, পাক অধিকৃত কাশ্মীরে যৌথ টহলদারি শুরু করার অজুহাত খুঁজছিল চিন-পাকিস্তান। ভারত যে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের জঙ্গি শিবিরগুলির বিষয়ে অন্য রকম কৌশল নিতে পারে, সে আশঙ্কা পাকিস্তান অনেক দিন ধরেই করছে। পাকিস্তানের দখলে থাকা ওই অঞ্চলে ভারত কোনও সাফল্য পেলে, পাক সেনার প্রবল সম্মানহানি হবে। তাই চিনকে জড়িয়ে নেওয়া। ভারতীয় সেনাকে বার্তা দেওয়া, পাক অধিকৃত কাশ্মীরে কোনও পদক্ষেপ করলে সরাসরি চিনের সঙ্গে সঙ্ঘাতে জড়াতে হতে পারে। চিন-পাক অর্থনৈতিক করিডরের নিরাপত্তার অজুহাতে আগেই কয়েক হাজার সেনা পাক অধিকৃত কাশ্মীরে পাঠিয়ে দিয়েছিল চিন। তখনই ভারত এর তীব্র বিরোধিতা করেছিল। এ বার পাক সীমান্তরক্ষীদের সঙ্গে চিনা সেনার যৌথ টহলদারিও শুরু হল। চিনের এই পদক্ষেপকে অবৈধ বলেই মনে করছে নয়াদিল্লি। এর মোকাবিলায় পাল্টা রণকৌশল সাজানোও শুরু হয়ে গিয়েছে। খবর সাউথ ব্লক সূত্রের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন