International

ভিতরে শত্রু, বাইরে যুদ্ধের সাজ, মসুলে কঠিন পরিস্থিতির মুখে আইএস

ঠিক যেন বার্লিনের উপকণ্ঠে হাজির হয়েছে মিত্রশক্তির সেনা। শেষ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে হিটলার বাহিনী। বাচ্চা থেকে বুড়ো— শহরের সবাইকে জোর করে সেনাবাহিনীতে ঢুকিয়ে নেওয়া হচ্ছে। রাজি না হলেই হত্যা। শহর জুড়ে বাঙ্কার, পরিখা আর ব্যারিকেডে ভরা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১৮:৪৭
Share:

ইরাকে এই শেষ বড় ঘাঁটি আর কত দিন ধরে রাখা যাবে? সংশয়ে আইএস। —ফাইল চিত্র।

ঠিক যেন বার্লিনের উপকণ্ঠে হাজির হয়েছে মিত্রশক্তির সেনা। শেষ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে হিটলার বাহিনী। বাচ্চা থেকে বুড়ো— শহরের সবাইকে জোর করে সেনাবাহিনীতে ঢুকিয়ে নেওয়া হচ্ছে। রাজি না হলেই হত্যা। শহর জুড়ে বাঙ্কার, পরিখা আর ব্যারিকেডে ভরা। ৭১ বছর পরে প্রায় একই ছবির দেখা মিলতে চলেছে ইরাকে ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর শেষ ঘাঁটি মসুলে। ‘মাদার অব অল ব্যাটল’-এর জন্য প্রস্তুতি এখন তুঙ্গে।

Advertisement

ইরাকের প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল-আবাদি চলতি বছরের মধ্যেই ইরাক থেকে আইএস কে মুছে ফেলতে চান। আর তা যদি সত্যিই করতে হয়, তবে মসুল দখল করতেই হবে। আবাদির লক্ষ্য সেটাই। এটা জানে আইএস-ও। তাই তারাও পাল্টা প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু আইএস-এর সেই কাজে ব্যাঘাত ঘটাতে, সাবোতাজ করাতে তৈরি হয়েছে গুপ্তবাহিনী ‘কিতায়েব আল-মসুল’। নানা ভাবে আইএস-এর প্রস্তুতিতে বাধা তৈরি করছে তারা।

কিছু দিন আগেই একটি ভিডিওতে দেখা যায় মসুলের প্রধান মসজিদে স্প্রে-পেন্টে ‘এম’ লেখা রয়েছে। এটি সঙ্কেত। আরবি ভাষায় সংঙ্কেতটির অর্থ মুক্কাওয়ামা মানে প্রতিরোধ। এই ভিডিওটি তৈরি করেছে কিতায়েব আল-মসুল বলে একটি সংগঠন। এঁরা মসুলের মধ্যে আইএস বিরোধী গোপন প্রচার ও প্রতিরোধ গড়ে তুলছে।

Advertisement

বদলা নিতে দেরি করেনি আইএস। কয়েক দিন পরেই এই ‘এম’ লেখার সামনে তিন জনকে হত্যা করার ভিডিও প্রকাশ করে তারা। একই সঙ্গে চলছে ব্যাপক ধরপাকড়। সামান্য সন্দেহের বশে নাগরিকদের আটক ও হত্যা করা হচ্ছে।

কিন্তু প্রতিরোধ থেমে নেই। আর তার প্রধান টার্গেট শত্রুর মনে ভয় তৈরি করা। সেই কাজে বাইরে থেকে সাহায্য করছে ইরাকি সেনাও। মসুলের বাসিন্দাদের জন্য আকাশ থেকে প্রায় ৭০ লক্ষ লিফলেট ফেলা হয়েছে। সেখানে আসন্ন যুদ্ধের জন্য জনগণকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।

কিন্তু এই ধরনের প্রচারে যাতে জনগণ ‘বিভ্রান্ত’ না হয়, সামরিক প্রস্তুতির খুঁটিনাটি যাতে শত্রু জেনে যেতে না পারে, তাই বেশ কয়েক মাস ধরেই মসুলে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে আইএস। পাশাপাশি নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হয়েছে অধিকাংশ মোবাইল টাওয়ার। তবে এর মধ্যেই মসুলের কয়েকটি অঞ্চলে আশপাশের মোবাইল টাওয়ার থেকে সিগন্যাল পাওয়া যাচ্ছে। তাতেই সামান্য খবর মসুলের বাইরে পৌঁছচ্ছে। জানা গিয়েছে, মসুলের বিভিন্ন এলাকাকে ব্যারিকেড করে পৃথক করে দিচ্ছে আইএস। ফাঁকা বাড়িগুলির দখল নিয়ে নেওয়া হচ্ছে। তৈরি হয়েছে অসংখ্য ‘বুবি ট্র্যাপ’।

পাশাপাশি কিন্তু আইএস নেতৃত্বের মধ্যেও বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। দুর্নীতি, স্বজনপোষণ— নানা কারণে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। আর এর সুযোগটাই নিতে চাইছে ‘কিতায়েব আল-মসুল’। আইএস-এর কড়া নজরদারির মধ্যেই তারা নিজেদের কাজ চালাচ্ছে।

আরও পড়ুন: রাফাল চুক্তি স্বাক্ষরিত, সঙ্গে মিটিওর ক্ষেপণাস্ত্র, অনেক এগোচ্ছে বায়ুসেনা

২০১৪-এর মাঝামাঝি মসুলের পতন হয়। এই মসুলের মসজিদেই প্রথম প্রকাশ্যে আসে আইএস-এর স্বঘোষিত খলিফা আবু বকর আল-বাগদাদি। মসুলকে কেন্দ্র করে বাকি ইরাকেও ক্ষমতা বিস্তার করছিল আইএস। কিন্তু ইরাকি সেনা, মার্কিন বিমানহানা ও মার্কিন স্পেশ্যাল ফোর্সের ব্যবহার, কুর্দদের পেশমেরগা যোদ্ধাদের পরাক্রমে ইরাকে এখন অনেকটাই কোণঠাসা আইএস। মসুল হাতছাড়া হলে ইরাক থেকে আইএস প্রায় মুছে যাবে। কিছু দিন আগেই মসুলের ২৫ মাইল দক্ষিণে কয়িরাহ বিমানঘাঁটি ইরাকি সেনার হাতে চলে এসেছে। সেখান থেকেই মসুল আক্রমণের যাবতীয় প্রস্তুতি চলছে।

কিন্তু এই আসন্ন যুদ্ধে সাধারণ বাসিন্দাদের কী হবে? সাম্প্রতিক হিসেব বলছে মসুলে প্রায় ১০ লক্ষ নাগরিক আইএস-এর হাতে আটকে রয়েছেন। এই যুদ্ধে তাঁদের অবস্থা কী হবে তা নিয়ে অনেকেই আশঙ্কিত। আসন্ন যুদ্ধের অনেকটাই বিমানহানার উপরে নির্ভর করবে। সে ক্ষেত্রে শেষ অবস্থায় নাগরিকদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে পারে আইএস। অন্য ভয়ও আছে। মসুলের কয়েকটি এলাকায় সুন্নিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। ইরাকি সেনার দখলে মসুল আসার পরে তাঁদের কী হবে তা নিয়েও আশঙ্কা রয়েছে। যুদ্ধ শুরু হলে মসুল ছাড়ার ঢল নামবে। আর এর জন্য আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছে ত্রাণসংস্থাগুলি।

মার্কিন হিসেব বলছে, মসুলে এখন তিন থেকে সাড়ে চার হাজার আইএস জঙ্গি রয়েছে। দীর্ঘ দিনের যুদ্ধের অভিজ্ঞতা রয়েছে তাদের। ফলে প্রবল প্রতিরোধ তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে বিমানহানায় মসুলে আইএস-এর ১২ জন নেতার মৃত্যু হয়েছে বলে মার্কিন দাবি। আর এর ফলে আইএস বেশ কিছুটা দুর্বল হয়েছে বলেও মনে করছে মার্কিন সেনা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন