মাসুদ আজহার। —ফাইল চিত্র।
জইশ-প্রধান মাসুদ আজহারকে রাষ্ট্রপুঞ্জ আন্তর্জাতিক জঙ্গির তকমা দেওয়ার পরে অবশেষে নড়ে বসতে বাধ্য হল ইসলামাবাদ। সরকারি তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, রাষ্ট্রপুঞ্জের নিয়ম মেনেই মাসুদের যাবতীয় সম্পত্তি ‘ফ্রিজ’ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জঙ্গি নেতার যাবতীয় ভ্রমণের উপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে বলে দাবি পাক বিদেশ মন্ত্রকের।
মাসুদের সংগঠন জইশের সঙ্গে আল কায়দার যোগাযোগ থাকায় এবং ভারত, ফ্রান্স, ব্রিটেন, আমেরিকা-সহ একাধিক দেশের দাবি মেনে গত বুধবার মাসুদকে আন্তর্জাতিক জঙ্গি হিসেবে ঘোষণা করে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ। এর পর-পরই চাপের মুখে পাক বিদেশ মন্ত্রক জানায়, ‘‘রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রস্তাব মোতাবেক মাসুদের বিরুদ্ধে আমরা সব ধরনের পদক্ষেপের জন্য তৈরি।’’ জইশ প্রধান যাতে ভবিষ্যতে কোনও রকম অস্ত্র বা গোলাগুলি কিনতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে পাকিস্তান।
২০০১-এ ভারতের সংসদে হামলা থেকে শুরু করে ২০০৮-এর মুম্বই হামলা, হালে পঠানকোট এবং পুলওয়ামায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর উপরে হামলা চালিয়ে তার দায়ও স্বীকার করেছিল জইশ। কার্যত পুলওয়ামা হামলার জেরেই ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে নতুন করে টানাপড়েন তৈরি হয়েছে। কিন্তু বারবার চিন বাগড়া দিচ্ছিল বলেই, এত দিন রাষ্ট্রপুঞ্জে কোণঠাসা করা যায়নি মাসুদকে। ১ মে-র প্রস্তাবে অবশ্য বেজিং কোনও আপত্তি জানায়নি। তাই গোটা বিষয়টিকে ভারতেরই কূটনৈতিক জয় হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞ মহলের একটা বড় অংশ। ঠিক কী ভাবে চিনকে হাত করা সম্ভব হল, তার পুরোটা স্পষ্ট না হলেও, মাসুদ-সাফল্য ভোটের ময়দানে বিজেপিকে বাড়তি সুবিধা দিতে পারে বলে মত অনেকের। এর মধ্যে আবার জইশ-প্রধানের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ পদক্ষেপ করার কথা
জানাল ইসলামাবাদ।
পাক বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে খবর, সে দেশের সিকিয়োরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসিপি) গত কাল পাকিস্তানের সব নন-ব্যাঙ্কিং আর্থিক সংস্থাকে মাসুদের যাবতীয় বিনিয়োগ সংক্রান্ত অ্যাকাউন্ট ‘ফ্রিজ’ করার নির্দেশ দিয়েছে। তিন দিনের মধ্যে এই সব সংস্থাগুলিকে নিজেদের তথ্য তল্লাশি করে মাসুদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হল, তা জানাতে হবে এসইসিপি-কে। পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদ বিরোধী আইন অনুযায়ী মাসুদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পাক বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র মহম্মদ ফয়সল।
এ দিকে সন্ত্রাস-দমনে পাকিস্তানের সাম্প্রতিক কিছু পদক্ষেপে আমেরিকাও সন্তুষ্ট বলে জানা গিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের এক কর্তা আজ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘আমরা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির মধ্যে ঢুকতে চাই না। কিন্তু সে দেশের সামরিক এবং অ-সামরিক প্রশাসন সন্ত্রাস-দমন নিয়ে কী করছে, সে দিকে আমরা কড়া নজর রাখছি। সম্প্রতি আমরা লক্ষ্য করেছি, পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান যা করছেন, দেশের সামরিক বিভাগও সেই পথেই হাঁটছেন। এটা খুবই ভাল ইঙ্গিত।’’