ধ্বংসস্তূপ থেকে বেরোনোর চেষ্টায় এক আহত প্যালেস্তাইনি কিশোর। দক্ষিণ গাজার রাফায়। রবিবার। ছবি: রয়টার্স
বোমার শব্দ ঘুম কেড়েছে। খিদে-তেষ্টাও উধাও হয়েছে আতঙ্কে। বাড়ি-ঘর-পরিজনকে হারিয়ে ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নেওয়া মানুষগুলোকেও আর রেয়াত করছে না ইজরায়েলের অস্ত্র!
আজ সকালে আলো ফোটার আগেই দক্ষিণ গাজার একটি স্কুল তথা ত্রাণশিবিরে উড়ে আসে ইজরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র। এই নিয়ে কত তম বার ইজরায়েলের বাহুবলীদের হাতে গুঁড়িয়ে গেল রাষ্ট্রপুঞ্জের স্কুল তা নিয়ে ধোঁয়াশায় খোদ রাষ্ট্রপুঞ্জের কর্তারাই। আর কত তম বার খাবারের থালা হাতে ত্রাণশিবিরের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা বাচ্চাগুলোর দেহ নিশ্চিহ্ন করে দিল ইজরায়েলি আগুনের গোলা? উত্তর নেই!
সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ ওই এলাকারই একটি প্রাথমিক স্কুলেও বোমাবর্ষণ হয়। সেই সময়ে টিফিন বিরতিতে রাস্তার হকারদের থেকে মিষ্টি এবং বিস্কুট কিনতে গিয়েছিল কয়েক জন ছাত্র। বোমাবর্ষণের পরে আর খোঁজ মেলেনি তাদের। প্যালেস্তাইনের স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রে খবর, আজকের হামলায় রাফার ওই শিবিরের ৩০০০ শরণার্থীর ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত ৩০। ২৭ দিনের ইজরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭৫৬। প্রাণ হারিয়েছেন ৬৪ জন ইজরায়েলি সেনাও। আজ প্যালেস্তাইন প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, সংঘর্ষের পাশাপাশি এ বার স্বাস্থ্য-বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে গাজা। পানীয় জল আর ওষুধের অভাবে ধুঁকছে হাসপাতালগুলো।
আজ টুইট করে আইডিএফ-এর তরফে জানানো হয়েছে, সারা দিনে ইজরায়েলের তেল আবিবে ৫৫বার রকেট হামলা চালিয়েছে হামাস। গত কাল হামাসের বিরুদ্ধে হাদার গোল্ডিন নামে এক ইজরায়েলি সেনাকে অপহরণের অভিযোগ তুলেছিল ইজরায়েল ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ)। নিজস্ব ওয়েবসাইটে বিবৃতি দিয়ে সেই অভিযোগ উড়িয়ে দেয় হামাস। আজ সকালে আইডিএফ জানিয়ে দিয়েছে, অপহরণ নয়, আত্মঘাতী জঙ্গিহানায় মৃত্যু হয়েছে হাদারের।
এ দিকে, টুইটারে আইডিএফ মুখপাত্র উত্তর গাজা থেকে সেনা সরানোর ইঙ্গিত দিলেও এখনও ঘরে ফেরার ভরসা পাচ্ছেন না সেখানকার বাসিন্দারা। বেইত লাহিয়া এবং সংলগ্ন এলাকাগুলি এখনও সুনসান। টুইটারে অভয়-বার্তা দিলেও আইডিএফ আদৌ এলাকা ছাড়ছে কি না তা নিয়ে ধন্দ কাটছে না। হামাসের সুড়ঙ্গ-নিধন অভিযানে নামলেও প্রতি বারই ধাক্কা খেতে হয়েছে আইডিএফ-কে। কোনও না কোনও ভাবে প্রতিটি হামলার পরেই গোপন সুড়ঙ্গ থেকে পাল্টা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে হামাস। মোটের উপর যুদ্ধের ২৭ দিন পরেও সুড়ঙ্গ নিধন নিয়ে ঠিক নিশ্চিন্ত হতে পারেনি ইজরায়েল।
প্রথম থেকেই হামাসের বিরুদ্ধে মানুষকে ঢাল বানিয়ে পাল্টা হামলা চালানোর অভিযোগ করে আসছে আইডিএফ। সে কথা মাথায় রেখে ঘরে ফেরার এই বার্তা যে হামাসকে টোপ দেওয়ার কৌশল নয়, সে প্রশ্ন উড়িয়ে দিচ্ছে না আন্তর্জাতিক মহল। গত কাল ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর যুদ্ধে ইতি না টানার হুঁশিয়ারিও ইজরায়েলি রণকৌশলের টোপ-প্রসঙ্গ উস্কে দিচ্ছে। যদিও আজ সকালেই বেশ কয়েকটি জায়গা থেকে সেনা সরাতে শুরু করেছে আইডিএফ। তবে ওই এলাকাগুলিতে ফের হামলার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে না কোনও পক্ষই।
গাজার হাল ফেরাতে গত কাল থেকেই নতুন করে সংঘর্ষ বিরতির প্রস্তাব নিয়ে মাঠে নেমেছে মিশর। আজ সেই নিয়ে বৈঠক করতে কায়রো পৌঁছেছেন হামাসের প্রতিনিধিরা। আমেরিকার মধ্যস্থতায় ওই ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে রফা সূত্র বেরোতে পারে বলেই আশা করছে আন্তর্জাতিক মহল।
তবে যুদ্ধ শেষের আশা করতেও ভয় পাচ্ছেন ত্রাণশিবিরের সন্তানহারারা। ছেলের দেহের সামনে বসে এক মা বললেন, “মানুষের উপর ভরসা হারিয়ে ফেলেছি। যুদ্ধ যদি থেমেও যায়, বিশ্বাস তো আর ফিরবে না!”