সাম্বুকা। ইতালির অন্যতম সুন্দর শহর। বছর কয়েক আগে শহরটির নাম উঠেছিল দেশের সব থেকে সুন্দর শহরগুলোর তালিকায়। সেই শহরেই এখন বাড়ি বিক্রি হচ্ছে জলের দরে। মাত্র ১ ইউরো ফেললেই পাওয়া যাচ্ছে বাড়ি। ভারতীয় মুদ্রায় যা ৮০ টাকার সামান্য বেশি।
২০১৬ সালে ইতালির সবচেয়ে সুন্দর শহর প্রতিযোগিতায় মনোনয়ন পেয়েছিল সাম্বুকা। বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদে ঠাসা এই শহর। এর সঙ্গে অনেক ইতিহাসও জড়িয়ে আছে। মনোরম সৈকতের পাশাপাশি অপরূপ ও প্রশান্ত এই শহরের চারদিকে রয়েছে গাছগাছালি ও পাহাড়-পর্বত।
কিন্তু, দেশের আর পাঁচটা শহরের মতো গত কয়েক বছরে এখান থেকে বহু মানুষ রাজধানী বা বড় শহরে চলে গিয়েছেন। প্রায় ফাঁকা হয়ে গিয়েছে এই ছোট্ট শহর। সাম্বুকা ছেড়ে চলে যাওয়ার মূল কারণ অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা। চিকিৎসা ব্যবস্থাও তেমন উন্নত ছিল না এখানে। ফলে এখানে থেকে আধুনিক জীবন যাত্রার স্বাদ নেওয়ার সুযোগও তেমন মিলছিল না।
ক্রমাগত জনসংখ্যা হ্রাস পাওয়ায় নড়েচড়ে বসে স্থানীয় প্রশাসন। সাম্বুকার উপ-মেয়র জুসেপ্পে ক্যাসোপ্পো আবেদন করেন, শহরে বাড়ি কিনতে। আবেদনে সাড়া দিয়ে, অনেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন জুসেপ্পে। সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স ও স্পেন থেকে অনেকে এখানে বাড়ি কেনার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি বাড়ি বিক্রি হয়ে গিয়েছে।
এখানকার বেশির ভাগ বাড়িতেই সাজানো উদ্যান রয়েছে। সূর্যাস্তের সময় গোলাপি-লালচে রঙের দোতলা একটি বাড়ির জ্বলজ্বল করা ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমতো ভাইরাল। এতে রয়েছে পাম গাছের বাগান, কমলালেবু গাছ, ফুলশোভিত সিঁড়ি, সিসিলীয় ধাঁচের ছাদ ও বারান্দা।
সাম্বুকা গড়ে তোলে প্রাচীন গ্রিকরা। পরবর্তীকালে এখানকার রাজা সারাসেনস সাম্বুকাকে সমৃদ্ধ বাণিজ্য নগরীতে পরিণত করেন। আমির আল জাবুতের নামে শহরটির নামকরণ হয়েছে। বর্তমানে শহরটির বৈচিত্র্যপূর্ণ স্থাপত্যশৈলীতে আরব প্রভাব স্পষ্ট।
সাম্বুকা থেকেই অভিজাত সিসিলীয় ওয়াইনের নবজাগরণ শুরু হয়। লাল আঙুরের চাষ হয় এখানে। এই শহরে রয়েছে বিস্তীর্ণ আঙুর ক্ষেত।
ইতালির স্থানীয় খাবার সাম্বুকার অন্যতম আকর্ষণ। ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতিতে বানানো রুটি ও পাস্তার চাহিদা ব্যাপক। ফুল ও লেবুর সমন্বয়ে ডিম ভাজাও অতুলনীয়। সঙ্গে পিৎজা আর কেক তো আছেই।
১ ইউরোতে বাড়ি কেনা গেলেও একটি শর্ত আছে। নতুন মালিককে বাড়িটি সংস্কার করতে হবে। আর তা করতে হবে তিন বছরের মধ্যে।
এ ছাড়া নিরাপত্তা আমানত হিসেবে নেওয়া হবে ৫ হাজার ইউরো। সংস্কার হয়ে গেলে তা ফেরত পাবেন নতুন মালিক।
জুসেপ্পে ক্যাসোপ্পা বলেন, ‘সাম্বুকায় বাড়ি কিনলে কেউ হতাশ হবেন না। সাম্বুকায় এলে সবারই মনে হবে ভূ-স্বর্গ। প্রাকৃতিক সম্পদের ভেতর শহরটি অবস্থিত। এর সঙ্গে অনেক ইতিহাস জড়িয়ে আছে।