কাবুলে ফের হানা ইসলামিক স্টেটের, জোড়া মানববোমায় হত ৮০

মুখে সরকার বিরোধী স্লোগান আর হাতে জাতীয় পতাকা। আঁটোসাটো নিরাপত্তার মধ্যে শান্তিপূর্ণ ভাবেই মিছিল এগোচ্ছিল প্রেসিডেন্টের প্রাসাদের দিকে। হঠাৎই সেই ভরা মিছিল কেঁপে উঠল জোড়া বিস্ফোরণে! আরও এক বার রক্তাক্ত হল কাবুলের রাজপথ!

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

কাবুল শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৬ ২৩:১৫
Share:

আতঙ্কের রাজপথ। শনিবার কাবুলে। ছবি: রয়টার্স।

মুখে সরকার বিরোধী স্লোগান আর হাতে জাতীয় পতাকা। আঁটোসাটো নিরাপত্তার মধ্যে শান্তিপূর্ণ ভাবেই মিছিল এগোচ্ছিল প্রেসিডেন্টের প্রাসাদের দিকে। হঠাৎই সেই ভরা মিছিল কেঁপে উঠল জোড়া বিস্ফোরণে! আরও এক বার রক্তাক্ত হল কাবুলের রাজপথ!

Advertisement

শনিবার সকালে কাবুলে সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাতে এসেছিলেন হাজারা সম্প্রদায়ের বহু মানুষ। দেশের উন্নয়নমূলক বিদ্যুৎ-প্রকল্প থেকে তাঁরা কেন বাদ পড়ছেন, তার জবাব চাইছিলেন সরকারের কাছে। আর আপাত শান্ত সেই মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দেয় জোড়া মানববোমা! ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গিয়েছে, দে-মাঝাং স্কোয়ারের সেই জমায়েতের মধ্যেই বোরখা পরে লুকিয়ে ছিল দুই আত্মঘাতী জঙ্গি! পর পর বিস্ফোরণে ছত্রভঙ্গ হয় মিছিল। মুহূর্তে প্রতিবাদ-স্থল ভরে যায় মৃতদেহের স্তূপে। ক্ষতবিক্ষত সেই সব দেহের মধ্যেই পড়ে গোঙাচ্ছিলেন অনেকে। কারও হাত উড়ে গিয়েছে, কেউ আবার পা হারিয়ে চলাফেরার শক্তি হারিয়েছেন!

আফগানিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক রাতে বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে নিহতের সংখ্যা ৮০। তবে জনস্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র মহম্মদ ইসমাইল কাউসি জানাচ্ছেন, যে ভাবে ভরা মিছিলে বিস্ফোরণ হয়েছে, তাতে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। আহতদের অনেকের অবস্থাই আশঙ্কাজনক! হামলার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই প্রচার সংস্থা আমাকের মাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে হামলার দায় নিয়েছে ইসলামিক স্টেট (আইএস)!

Advertisement

বালুচিস্তানের বিস্তীর্ণ এলাকায় বাস পার্সিভাষী এই হাজারা গোষ্ঠীর মানুষের। এঁরা মূলত শিয়া সম্প্রদায়ভুক্ত। পশ্চিম এশিয়ার সুন্নি জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের নিশানায় প্রথম থেকেই রয়েছে শিয়ারা। শুধু আফগানিস্তানই নয়, গত কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন দেশেই শিয়াদের লক্ষ করেই হামলা চালিয়েছে আইএস। রমজান মাসের সাময়িক ‘বিরতির’ পর আফগান সরকারের বিরুদ্ধে নতুন করে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে তালিবানও। তবে এই হামলার সঙ্গে তাদের যে কোনও সম্পর্ক নেই, তা-ও এ দিন স্পষ্ট করে তালিবানের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

সরকারের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ তুলে আজ রাজধানীতে এসেছিলেন হাজারা সম্প্রদায়ের মানুষজন। তাঁদের অভিযোগ, হাজারাদের বঞ্চিত করতেই একটি বিদ্যুতের লাইন অন্য পদ দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সরকার।

আফগান প্রেসিডেন্ট অবশ্য আম জনতার প্রতিবাদের অধিকার সমর্থন করে তীব্র নিন্দা করেছেন এই হামলার। তাঁর বিবৃতি বলছে, ‘‘শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ আফগানিস্তানের প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার। কিন্তু সুবিধাবাদী কিছু জঙ্গি মিছিলে ঢুকে হামলা চালিয়েছে। আমজনতার পাশাপাশি খুন করেছে পুলিশ ও নিরাপত্তাবাহিনীর কর্মীদেরও।’’

প্রশাসনের একটি সূত্র বলছে, হামলায় ক’জন জঙ্গি জড়িত তা নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি। ফুটেজে বোরখা পরা দুই জঙ্গিকে দেখা গেলেও আরও জঙ্গি এই হামলায় জড়িত বলেও মনে করা হচ্ছে। যদিও পুলিশের দাবি, হাজারাদের মিছিলের জন্য এ দিন থেকেই কাবুলে কড়া নজরদারি চলেছে। মোতায়েন ছিল বিরাট পুলিশবাহিনী। হেলিকপ্টারেও চলছিল নজরদারি। তা সত্ত্বেও কী ভাবে মিছিলের মধ্যে এমন হামলা চলল, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েও!

আত্মঘাতী হামলার ভিডিও ফুটেজ এবং ছবি সংবাদমাধ্যমের পাশাপাশি ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলোতেও। সেখানে দেখা গিয়েছে, বিস্ফোরণের পরে সাময়িক ভাবে হতভম্ব হয়ে পড়লেও আতঙ্কের জের কাটিয়ে ফের একজোট হন বিক্ষোভকারীরা। দে-মাঝাং স্কোয়ারের পাশের একটি জায়গা দখল করে ফের স্লোগান দিতে থাকেন তাঁরা। সাধারণ মানুষের অধিকার আর সুরক্ষার প্রশ্নে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে পাথর ছু়ড়তে থাকেন পুলিশকে লক্ষ করে।

আফগানিস্তানের পরিস্থিতি এবং মানবাধিকার নিয়ে এ দিন প্রশ্ন তুলেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও। আফগান সরকারকে কটাক্ষ করে তারা বলছে, ‘‘এমন হামলা দেখিয়ে দিচ্ছে, আফগানিস্তান এখনও অশান্তই। সে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি আমাদের জন্য উদ্বেগ উত্তরোত্তর বাড়াচ্ছে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন