ঘাতক: লন্ডন পুলিশের প্রকাশ করা খালিদের ছবি। এপি
ব্রাইটনের হোটেল ছাড়ার আগে সেখানকার কর্মীদের খুব ঠান্ডা গলায় সে বলেছিল, ‘‘আজ আমি লন্ডন যাচ্ছি। শহরটা আর আগের মতো নেই।’’ তার পরই ভাড়া করা এসইউভি চালিয়ে রওনা হয়ে গিয়েছিল সে। ইংল্যান্ডের সৈকত শহর ব্রাইটনের হোটেল প্রেস্টন পার্কের কর্মীরা বলছেন, সে দিন তার আচরণে অস্বাভাবিক কিছু দেখেননি তাঁরা। আগের রাতেও বেশ খোশমেজাজে ছিল সে। বোঝাই যায়নি, ভয়ঙ্কর এক পরিকল্পনা সে পুষছিল মনের মধ্যে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই লন্ডন পৌঁছে এই লোকটাই পার্লামেন্টে হামলার চেষ্টা চালিয়েছিল, গাড়িতে পিষে মেরে ফেলেছিল নিরীহ লোকজনকে।
ওয়েস্টমিনস্টার হামলার চক্রী, বাহান্ন বছরের খালিদ মাসুদ সম্পর্কে এখন এমন অনেক তথ্যই রয়েছে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের কাছে। খালিদের জন্ম ডার্টফোর্ডের কেন্টে। ১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর। ছোটবেলায় পূর্ব সাসেক্সের রাই শহরে মায়ের সঙ্গে থাকত খালিদ। তখন তার নাম ছিল আড্রিয়ান রাসেল আজাও। ধর্মান্তরিত হওয়ার পরে নামও বদলায়। কখনও কখনও খালিদ চৌধুরি বলেও নিজের পরিচয় দিত সে। বলত, সে শিক্ষক।
এর আগে একাধিক বার জেল খেটেছে খালিদ। ২০০০ সালে দু’বছর, ২০০৩-এ ছ’মাস। তার পরেও নানা খুচরো অপরাধে পুলিশের খাতায় নাম ছিল তার। কিন্তু উগ্র মৌলবাদী কাজকর্মে কোনও দিনই নাম জড়ায়নি খালিদের। কে বা কারা তাকে আইএস ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ করল, সে নিয়েই এখন চিন্তায় পুলিশ। অন্য কোনও বৃহত্তর যড়যন্ত্রের সঙ্গে সে জড়িত ছিল কি না, সে দিকটাও খতিয়ে দেখছে তারা। তবে গোটা ঘটনার দায় আইএস নিলেও এখনও সন্দিহান ব্রিটিশ সরকার। স্বরাষ্ট্রসচিব অ্যাম্বার রুড বলেন, ‘‘আমাদের হাতে প্রমাণ নেই। আইএস এই কথাটা প্রচার করে মানুষের মনে আরও আতঙ্কের আবহ তৈরি করার চেষ্টা চালাচ্ছে আসলে।’’
গোটা ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আজ আরও দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে এক জন পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তি। এক মহিলা পরে জামিনে ছাড়া পান। হামলার ঘটনায় ধৃতের সংখ্যা এখন তিন মহিলা-সহ ৯। এঁরা বেশির ভাগই খালিদের পূর্বপরিচিত, বার্মিংহামের বাসিন্দা। আজ লন্ডনের কিঙ্গস কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে লেসলি রোডস নামে বছর পঁচাত্তরের এক বৃদ্ধের। গাড়ি চাপা পড়ে গুরুতর জখম হয়েছিলেন তিনি।
পুলিশ সূত্র জানাচ্ছে, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত পরিবারের সঙ্গে বার্মিংহামেই থাকত খালিদ। পরে ইস্ট মিডল্যান্ডসে যায়। বার্মিংহামের উইনসন গ্রিনের বাসিন্দারা বিশ্বাসই করতে পারছেন খালিদ এ রকম কিছু করতে পারে। ‘‘সাধারণ পরিবার। ব্যবহারও ভাল ছিল। খালিদ নিজের গা়ড়ি পরিষ্কার করত, লনের ঘাস ছাঁটত। মাঝে মধ্যে গলির ছেলেদের ফুটবল টিপসও দিত। বেশির ভাগ সময় ট্র্যাকস পরে থাকত। ওর স্ত্রী অবশ্য এশীয় পোশাক পরতেন। টিভিতে খালিদের গুলিবিদ্ধ ছবি দেখে চমকে উঠেছিলাম’’, বললেন প্রতিবেশী কায়ারান মোলই। পুলিশ জানিয়েছে, খালিদের স্ত্রীর নাম রোহে হাইদারা। পূর্ব ইংল্যান্ডে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে তাঁর। সেখানে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। খোঁজ মিলেছে খালিদের মায়েরও। ওয়েলসের এক প্রত্যন্ত গ্রামে বর্তমান স্বামীর সঙ্গে এখন থাকেন তিনি।