International News

‘করোনা-যুদ্ধে ফের প্রমাণিত, হিন্দি-চিনি ভাই ভাই!’

ভারতে থাকা চিনাদের সিংহ ভাগ থাকেন কলকাতায়, টেরিটি বাজার ও ট্যাংরা এলাকায়।

Advertisement

অনমিত্র চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২০ ০৬:২২
Share:

ছবি: সংগৃহীত।

উহান থেকে ছোট্ট শহর সাহ খুব দূরে নয়। কয়েক মাস আগেও সেখানে গিয়ে স্বজনদের সঙ্গে পাঁচটা দিন কাটিয়ে এসেছেন বৃদ্ধা উয়েই সিয়াগুই। তার পরে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার খবর। মন ভাল নেই উয়েইর। চিঠি আসছে না আত্মীয়দের, ফোনেও সাড়া নেই। অজানা আশঙ্কায় চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে বারে বারে।

Advertisement

চিনের হুপাই প্রদেশের উহান শহর এখন করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে খবরের শিরোনামে। ভারতে বসবাসকারী চিনাদের মধ্যে বহু মানুষ রয়েছেন, যাঁদের শিকড় হুপাইয়ে। প্রৌঢ় মাও চুয়েই কলকাতায় হুপাই অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট। আদি বাড়ি উহান থেকে ঘণ্টা চারেক দূরে। সেখানে বসবাস করা আত্মীয়দের সঙ্গে যে নিত্য যোগাযোগ, তা বলা যায় না। মাস দেড়েক আগে চিনা নববর্ষের সময়ে শেষ স্কাইপে কথা হয়েছে বোনেদের সঙ্গে। ‘ইঁদুর বর্ষ’-এর শুভেচ্ছা বিনিময় হয়েছে। এখন রোজ চেষ্টা করেও সাড়া মিলছে না।

ভারতে থাকা চিনাদের সিংহ ভাগ থাকেন কলকাতায়, টেরিটি বাজার ও ট্যাংরা এলাকায়। বস্তুত দু’-তিন প্রজন্ম কলকাতায় থেকেও এঁরা নিজেদের জাতিগত পরিচিতি ও সংস্কৃতিকে আগলে রাখেন চিনের প্রাচীরের মতো প্রায় অলঙ্ঘ্য এক বেড়া তুলে। কলকাতায় বসবাস ও ব্যবসা-বাণিজ্য করেন, কিন্তু মনেপ্রাণে তাঁরা চৈনিক। যাটের দশকে ভারত ও চিন যুদ্ধে জড়ালে টানাহেঁচড়ায় প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়েছিল এই চিনাদের। তবে ভারত বা চিন, দু’দেশের যে কোনও রাজনৈতিক বিষয়ে নীরবতার খোলসে এঁরা নিজেদের ঢেকে রাখেন। শক, হুন দল, পাঠান, মোগলের মতো ভারতীয়ত্বে লীন হতে বড় একটা দেখা যায় না এঁদের। নানা সংগঠন, ক্লাব, রেস্তরাঁ ও পাবকে ঘিরে নিজেরা নিজেদের মতো গুছিয়ে থাকেন এঁরা।

Advertisement

আরও পড়ুন: পাকিস্তানে বদলের মিছিল নারী দিবসে

তবে এই মুহূর্তে তাঁদের মন পড়ে রয়েছে হিমালয়-পারে। উদ্বেগ তো রয়েছেই, স্বজাতির বিপর্যয়ে পাশে দাঁড়াতে এগিয়েও এসেছেন ভারতের চিনারা। নিজেদের মতো অর্থ সংগ্রহ করেছেন।

অল ইন্ডিয়া ওভারসিজ চাইনিজ অ্যাসোসিয়েশনের কর্তা চেন ইয়াওহুয়া জানালেন, ক্লাব ও সংগঠনগুলির মাধ্যমে তাঁরা যথাসাধ্য অর্থ সংগ্রহ করেছেন। বিভিন্ন জায়গায় প্রার্থনা সভারও আয়োজন করেছেন। সরাসরি টাকা পাঠানোয় নানা আইনি জটিলতা থাকায় কলকাতায় চিনা কনসুলেটের মাধ্যমে তাঁরা সংগৃহীত অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন।

কলকাতায় চিনা কনসাল জেনারেল চা লিইয়-র প্রতিক্রিয়া— ‘‘আমি অভিভূত! করোনার বিরুদ্ধে চিনে সর্বাত্মক লড়াই চালাচ্ছেন সরকার ও মানুষ। ভারতের চিনা সম্প্রদায় শুধু উদ্বেগ প্রকাশ করেই ক্ষান্ত থাকেননি, লড়াইয়ে শামিল হতে যে যার মতো এগিয়ে এসেছেন। বিশ্ববাসীর কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন চিন সরকার। ভারতের চিনা সম্প্রদায় বলতে গেলে সবার আগে এগিয়ে এসেছেন।’’

বিভিন্ন ভারতীয় সংস্থা ও সংগঠন, বিশেষ করে যাঁদের সঙ্গে চিনের ব্যবসা-বাণিজ্যের যোগাযোগ রয়েছে, তাঁরাও করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন কনসাল জেনারেল। চিনা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে বাণিজ্যিক যোগ রয়েছে এমন একটি সংস্থার কর্ণধার পার্থপ্রিয়া গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘চিনে সরকার ও সেনা বাহিনী তো যা করার করছেই, কিন্তু মানুষের সচেতনতার বিষয়টি অতুলনীয়।’’ ঘরবন্দি ভারতীয় ছাত্রদের জন্য অনলাইন টিউশনের ব্যবস্থা করেছে এঁদের সংস্থা। চিনে পাঠিয়েছে বেশ কয়েক হাজার মুখোশও।

ডাক্তার দ্বারকানাথ কোটনিসের প্রসঙ্গ তুলে কনসাল জেনারেল চা বলেন, ‘‘ভারতের এই সাহায্য সহযোগিতা নতুন নয়। এ বারের দুঃসময়েও প্রমাণ হল— হিন্দি-চিনি ভাই ভাই!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন