অভিবাসনের বিরুদ্ধে লন্ডনের রাস্তায় প্রতিবাদে শামিল দেড় লক্ষ মানুষ। ছবি: রয়টার্স।
একসময় যে সমস্ত দেশ ইংরেজদের উপনিবেশ ছিল, এখন সে সব দেশের লোকজন অবলীলায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন লন্ডনের রাস্তায়! তাঁরা ব্রিটেনে থাকছেন, খাচ্ছেন, চাকরি করছেন, আইনি লড়াই লড়ছেন। কখনও কখনও ব্রিটেনের নাগরিকদের চেয়েও ‘বাইরের’ লোকজনের ক্ষমতা হয়ে যাচ্ছে বেশি। এই ব্যবস্থা অনেকেই মেনে নিতে পারছেন না। লন্ডনের রাস্তায় শনিবার তাঁরা বিক্ষোভ দেখালেন। লক্ষ মানুষের জমায়েতে অভিবাসনের বিরুদ্ধে গর্জে উঠল ব্রিটেনের রাজধানী। পুলিশের সঙ্গে চলল দেদার ধস্তাধস্তি, ধরপাকড়। দাবি একটাই, অবৈধ ভাবে অভিবাসন অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। ইংরেজরা স্লোগান তুললেন, ‘‘আমাদের দেশ আমাদের ফিরিয়ে দাও।’’
শনিবার লন্ডনের এই বিক্ষোভের অন্যতম আহ্বায়ক ছিলেন অতি-দক্ষিণপন্থী নেতা টমি রবিনসন। তাঁর ডাকে হাজার হাজার মানুষ পথে নামেন এবং সরকারের অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখান। কর্মসূচির নাম দেওয়া হয় ‘ইউনাইট দ্য কিংডম’ (রাজত্ব আবার সংগঠিত করো)। সংবাদ সংস্থা এপি জানিয়েছে, ১ লক্ষ ১০ হাজার থেকে দেড় লক্ষ মানুষ রাস্তায় নেমেছিলেন। প্রথম দিকে শান্তিপূর্ণ ভাবে মিছিল চলছিল। কিন্তু দুপুর গড়াতেই অশান্তি ছড়ায়। অভিযোগ, যাঁরা অভিবাসনের পক্ষে, তাঁরা পাল্টা একটি মিছিল বার করেছিলেন। এই কর্মসূচির নাম ছিল ‘মার্চ এগেনস্ট ফ্যাসিজ়ম’ (ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে মিছিল)। সেখান থেকে বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে, দক্ষিণপন্থার বিরুদ্ধে স্লোগান উঠছিল। তাতেই দক্ষিণপন্থী বিক্ষোভকারীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তাঁদের মিছিল থেকে বিপক্ষের দিকে ছোড়া হয় পাথর, বোতল। অনেকে জখম হলে পুলিশ পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করে। পুলিশের সঙ্গেও বিক্ষোভকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। অভিযোগ, পুলিশ আধিকারিকদের রাস্তায় ফেলে মারধরও করা হয়েছে। ঘটনায় অনেকে গ্রেফতারও হয়েছেন।
ক্ষোভ অনেক দিন থেকেই ছিল। বিতর্কের সূত্রপাত কিছু দিন আগের একটি গ্রেফতারিকে ঘিরে। ইথিওপিয়ার এক বাসিন্দার বিরুদ্ধে লন্ডনবাসী নাবালিকাকে যৌন হেনস্থার অভিযোগ উঠেছিল। বাইরে থেকে যাঁরা লন্ডনে যান, আইনি ছাড়পত্র না-পাওয়া পর্যন্ত তাঁরা যে সমস্ত হোটেলে থাকেন, সেগুলিকে ঘিরে তুমুল বিক্ষোভ দেখানো হয়েছিল ওই ঘটনার পর। শনিবারের বিক্ষোভের সঙ্গে তার মিল রয়েছে। বিক্ষোভকারীরা ইংল্যান্ডের লাল-সাদা পতাকা নিয়ে হেঁটেছেন দীর্ঘ পথ। স্লোগান তুলেছেন, ‘আমাদের দেশ ফিরিয়ে দাও’, ‘আমরা আমাদের দেশ ফিরে পেতে চাই’, ‘ওদের বাড়ি পাঠাও’, ‘আমাদের সন্তানদের বাঁচাও’। বিপক্ষের মিছিল থেকে আবার স্লোগান ওঠে, ‘শরণার্থীরা স্বাগত, অতি-দক্ষিণপন্থা নিপাত যাক’, ‘রুখে দাঁড়াও, লড়াই করো’।
মিছিলের মাঝে দাঁড়িয়ে আহ্বাক রবিনসন বলেন, ‘‘এখন ব্রিটিশদের চেয়ে আদালতে অভিবাসীদের অধিকার বেশি। অথচ ব্রিটিশরাই এই দেশ তৈরি করেছে।’’ ফ্রান্সের দক্ষিণপন্থী নেতা এরিক জ়েমোর লন্ডনের মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের এখানে ইউরোপীয়দের সরিয়ে দিয়ে দক্ষিণের দেশগুলি থেকে আসা মানুষ, ইসলামীয় সংস্কৃতি থেকে আসা মানুষ জাঁকিয়ে বসছেন। একসময় যে সমস্ত দেশে আমাদের উপনিবেশ ছিল, আমরা যাদের শাসন করতাম, এখন তারাই আমাদের এলাকা দখল করে নিচ্ছে।’’ লন্ডনের লেবার পার্টির নেতা তথা প্রধামন্ত্রী কিয়ের স্টার্মারকে নিশানা করেও স্লোগান তোলেন বিক্ষোভকারীরা।