Abhishek Banerjee

দুপুরে সাদা-কালো, সন্ধ্যায় রং! জিমে ঘর্মাক্ত আয়না-নিজস্বীর ইনস্টা-স্টোরি অভিষেকের, কেন এমন ছবি? কী জল্পনা তৃণমূলে?

২০১৪ সালে অভিষেক প্রথম সাংসদ হন। কিন্তু সেই অভিষেকের চেহারা আর এখনকার চেহারার কোনও মিলই নেই। ১১ বছর আগে অভিষেক ছিলেন গাবলুগুবলু, মোটাসোটা এবং ফুলো ফোলা গালের এক তরুণ। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের সময়েও তাঁর শরীরে মেদের পরিমাণ ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারের সময়েই অভিষেককে দেখে বোঝা গিয়েছিল, তিনি মেদ ঝরাতে মন দিয়েছেন।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২১:০৩
Share:

(বাঁ দিকে) দুপুরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে দেওয়া ছবি। সন্ধ্যার ছবি (ডান দিকে)। ছবি: সমাজমাধ্যম থেকে নেওয়া।

সাদা স্লিভলেস স্পোর্টস টি শার্ট। সাদা-কালো শর্টস। হাতে আঙুল-কাটা গ্লাভস। দু’বাহু জবজব করছে ঘামে। আলুথালু মাথার চুল। জিমন্যাশিয়ামে দেওয়াল জোড়া আয়নার সামনে বসে নিজস্বী (মিরর সেল্‌ফি) তুলেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার দুপুরে তিনি সেই ছবি দিয়েছিলেন সমাজমাধ্যমে। সেটি ছিল সাদা-কালো ‘ফিল্টারে’ সম্পাদিত। সন্ধ্যায় আবার একই ছবি। তবে এ বার রঙিন। ছবির উপর ‘স্টিক ট্যাগে’ লেখা ‘আনফিল্টার্ড’।

Advertisement

অভিষেক সাধারণত ব্যক্তিগত মুহূর্ত খুব একটা সমাজমাধ্যমে প্রকাশ করেন না। তাঁর ইনস্টাগ্রাম বা ফেসবুকে থাকে তাঁর রাজনৈতিক কর্মসূচির নানা মুহূর্ত। পরিচিতেরা মনে করতে পারছেন, তাঁর পারিবারিক ছবি তিনি দিয়েছিলেন কয়েক বছর আগে সরস্বতী পুজোর দিন পুত্রের হাতেখড়ির সময়। গত বছর চোখের চিকিৎসার জন্য আমেরিকায় গিয়ে নিউ ইয়র্কের টাইম্স স্কোয়ারে তোলা একটি নিজস্বীও পোস্ট করেছিলেন তিনি। তার পর ব্যক্তিগত কোনও ছবি অভিষেক সমাজমাধ্যমে দিয়েছেন বলে কেউ মনে করতে পারছেন না। সেই তিনিই শনিবার কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ইনস্টাগ্রামের স্টোরিতে একই বিভঙ্গের দু’টি ছবি দিলেন। তা-ও সাধারণ ‘ফিড পোস্টে’ নয়। ‘ইনস্টা-স্টোরি’তে। তাঁর ইনস্টা প্রোফাইলে ঢুকলে তা দেখা যাবে না। তৃণ-মহল সে ছবি ঝড়ের গতিতে ছড়িয়ে দিয়েছে সমাজমাধ্যমে। ইনস্টাগ্রামের গণ্ডি ছাড়িয়ে ফেসবুক, হোয়াট্‌সঅ্যাপ স্টেটাস, এক্সে ছড়িয়ে পড়েছে অভিষেকের শরীরচর্চার ছবি।

কিন্তু কেন অভিষেককে এই ছবি দিতে হল?

Advertisement

২০১৪ সালে অভিষেক প্রথম সাংসদ হন। কিন্তু সেই অভিষেকের চেহারা আর এখনকার চেহারার কোনও মিলই নেই। ১১ বছর আগে অভিষেক ছিলেন গাবলুগুবলু, মোটাসোটা এবং ফুলো ফোলা গালের এক তরুণ। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের সময়েও তাঁর শরীরে মেদের পরিমাণ ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারের সময়েই অভিষেককে দেখে বোঝা গিয়েছিল, তিনি মেদ ঝরাতে মন দিয়েছেন। ক্রমে তাঁর চেহারা নির্মেদ এবং টানটান হয়েছে। ২০২১ সালের ভোটের পরে অভিষেক তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রাক্কালে কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ পর্যন্ত ‘নবজোয়ার যাত্রা’ করেছিলেন। তখনই তিনি মেদ ঝরিয়ে ছিপছিপে। কিন্তু কোনও পর্বেই জিম করার বা জিমের ছবি দেননি। বরং তিনি যে নিয়মিত জিম করেন, সেটিই সাধারণ্যে তেমন ভাবে জানা ছিল না। তা হলে এখন কেন দিতে হল? সাধারণত রাজনীতিকেরা কারণ ছাড়া কিছু করেন না। বিশেষত, এখন সমাজমাধ্যমের পোস্ট তাঁদের কাছে অতীব গুরুত্বপূর্ণ। ভেবেচিন্তে তা দেওয়া হয়।

অভিষেক কী ভেবেছন? আনুষ্ঠানিক ভাবে তৃণমূল বা অভিষেকের দফতর ছবি সম্পর্কে কোনও ব্যাখ্যা দেয়নি। দেওয়ার কথাও নয়। তবে তৃণমূলের অন্দরমহল তাদের মতো করে ব্যাখ্যা গঠন করতে শুরু করে দিয়েছে।

এক অভিষেক-ঘনিষ্ঠ নেতার যেমন ব্যাখ্যা, সংগঠনে যে ‘মেদ’ ঝরানো চলছে, অভিষেক নিজের পরিশ্রম করে মেদ ঝরানোর ছবি দিয়ে সেই ‘বার্তা’ দিতে চেয়েছেন। যদিও এ ব্যাখ্যা অনেকেরই জুতসই মনে হয়নি। কারণ, অভিষেক গত কয়েক বছর ধরেই নির্মেদ সংগঠন গড়ার বিষয়ে একরোখা মনোভাব দেখাচ্ছেন। কিন্তু অতীতে কখনও তিনি এই ধরনের ছবি পোস্ট করে তা বোঝাতে নামেননি।

অন্য একাংশের আবার বক্তব্য, সরকার এবং দলের পরামর্শদাতা সংস্থার পরামর্শেই এই ছবি তাঁর ইনস্টা-স্টোরিতে দিয়েছেন অভিষেক। যা তরুণ প্রজন্মকে আকৃষ্ট করার কৌশল হতে পারে। শহরের তরুণ প্রজন্মের একটা বড় অংশ এখন ইনস্টামুখী। এবং জিম-মুখী। তাঁদের ছুঁতে চেয়েছেন অভিষেক। কেউ কেউ রসিকতা করে বলছেন, পুজোর আগে তরুণদের মধ্যে জিমে যাওয়ার হিড়িক দেখা যায়। অভিষেক হয়তো সমাজের সেই অংশকে অনুপ্রাণিত করতে চেয়েছেন। দক্ষিণ কলকাতার এক তরুণ নেতার আবার বক্তব্য, ফিটনেসের ছবি পোস্ট করে আসলে আনফিটদের বার্তা দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, প্রবীণদের বার্তা দিতে চেয়েছেন অভিষেক। যা তৃণমূলে নবীন-প্রবীণ বিতর্কে বহুচর্চিত।

শাসকদলের অন্য একটি অংশ অবশ্য বলছেন, এ-ও এক রাজনৈতিক নকশা। অভিষেক-ঘনিষ্ঠ এক যুবনেতার বক্তব্য, গত কয়েক দিনে একাধিক ফেসবুক এবং এক্স পোস্টে ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে যে, অভিষেক বড় কোনও কর্মসূচির পথে যাচ্ছেন। তাঁদের বক্তব্য, উৎসবের মরসুম শেষ হলেই বিধানসভা নির্বচনকে সামনে রেখে অভিষেক ‘নবজোয়ার’ যাত্রার ধাঁচে আবার লম্বা কর্মসূচি শুরু করতে পারেন। এটা তারই ‘টিজ়ার’। যদিও এ তত্ত্বেও কোনও আনুষ্ঠানিক সিলমোহর পড়েনি। মধ্যবয়সি অনেক নেতার মতে, নির্দিষ্ট কোনও কারণে এই পোস্ট করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। এক মাঝবয়সি এবং তত প্রবীণ নন নেতার কথায়, ‘‘অভিষেক এমনিতেই ছবি-বিলাসী। ছবি তুলতেও পছন্দ করেন। ডায়মন্ড হারবার এফসি-র জার্সি পরনে তাঁর নানা মুহূর্তের ছবি রয়েছে। এ-ও তেমনই।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘অভিষেক যতই বড় নেতা হোন, আসলে তো তাঁর বয়স মাত্রই ৩৭ বছর। এই বয়সে এগুলো স্বাভাবিক।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement