Sheikh Hasina Verdict

হাসিনার মতোই মুশারফেরও মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা হয়েছিল! তবে এক জন প্রাক্তন রাষ্ট্রনেতারই ফাঁসি হয়েছে উপমহাদেশে

প্রাক্তন পাক সেনাশাসক পারভেজ মুশারফকেও হাসিনার মতোই গণঅভ্যুত্থানের জেরে ক্ষমতা হারাতে হয়েছিল। মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি ঘোষণার পরে আর পাকিস্তানে ফেরেননি তিনি।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২৫ ২১:৩০
Share:

(বাঁ দিক থেকে) শেখ হাসিনা, পারভেজ মুশারফ এবং জুলফিকর আলি ভুট্টো। —ফাইল চিত্র।

শেখ হাসিনার মতোই গণঅভ্যুত্থানের জেরে ক্ষমতা হারিয়েছিলেন তিনি। বিদেশে থাকাকালীন হাসিনার মতোই মৃত্যুদণ্ডের সাজা শুনতে হয়েছিল পাকিস্তানের প্রাক্তন সামরিক শাসক জেনারেল পারভেজ মুশারফকে। কিন্তু তা কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। তবে জীবদ্দশায় আর পাকিস্তানে ফিরতে পারেননি তিনি।

Advertisement

প্রাক্তন রাষ্ট্রনেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের নজিরও অবশ্য পাকিস্তানেই রয়েছে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)-র প্রতিষ্ঠাতা প্রধান জুলফিকর আলি ভুট্টো। ১৯৭৭ সালের জুলাই মাসে তৎকালীন পাক সেনাপ্রধান জেনারেল জিয়াউল হক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী ভুট্টোকে। তার কিছু দিনের মধ্যেই তাঁকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানের সেনা সরকার। পরবর্তী সময়ে তাঁর বিরুদ্ধে আনা হয় এক রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীকে খুনের অভিযোগ। পিপিপি-র প্রতিষ্ঠাতা ভুট্টো সেই মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। কিন্তু গোড়া থেকেই তাঁর পরিবার এবং দল ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রে’র অভিযোগ তুলেছিল জিয়া সরকারের বিরুদ্ধে।

১৯৭৯ সালের ৪ এপ্রিল পাকিস্তানের সেনা সরকারের তত্ত্বাবধানে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছিল ভুট্টোকে। গত বছর পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ সর্বসম্মত রায়ে জানিয়েছিল, ন্যায়বিচার পাননি ভুট্টো। ভুট্টোর বিচার ‘স্বচ্ছ ও যথাযথ আইনি পদ্ধতি’ মেনে হয়নি বলে পাক শীর্ষ আদালত স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করে। মুশারফের পক্ষে অবশ্য এখনও কোনও মন্তব্য আসেনি পাক সুপ্রিম কোর্টের তরফে। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে লন্ডনে প্রয়াণের পরে ‘দেশের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন’— এই অভিযোগে পাকিস্তান পার্লামেন্টের সদস্যেরা তাঁকে শেষ শ্রদ্ধাটুকুও জানাননি! লন্ডন থেকে দেহ এনে করাচির গুলমোহর পোলো গ্রাউন্ডের মসজিদে পারিবারিক প্রার্থনার পর এক ফৌজি গোরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়াই এবং প্রায় নীরবে সমাধিস্থ করা হয়েছিল মুশারফকে।

Advertisement

১৯৯৯ সালে সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট নওয়াজ শরিফকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করেছিলেন মুশারফ। ২০০১ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের ‘নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট’ ছিলেন তিনি। পাক পার্লমেন্টে আনা ইমপিচমেন্ট এড়াতে ২০০৮ সালের অগস্টে ইস্তফা দিয়েছিলেন তিনি। সে বছরেরই নভেম্বরে পাকিস্তান ছেড়েছিলেন। ইস্তফা দেওয়ার এক বছর আগেই অবশ্য সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে সংঘাত এবং বিরোধীদের তীব্র আন্দোলনের জেরে ‘অবাধ’ পার্লামেন্ট নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করতে হয়েছিল দোর্দণ্ডপ্রতাপ জেনারেলকে।

২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মুশারফের মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছিল পেশোয়ার হাইকোর্টের তিন বিচারপতির বেঞ্চ। ২০০৭ সালে সংবিধান বাতিল করে সাংবিধানিক জরুরি অবস্থা ঘোষণার জন্য তিন সদস্যের বেঞ্চ তাঁকে ওই মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি দিয়েছিল। ২০১৪ সালে মুশারফের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গঠিত চার্জের ভিত্তিতে দেওয়া ১৬৭ পাতার সেই রায়ে উল্লেখ করা হয় যে, মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার আগে যদি মুশারফের মৃত্যু হয়, তা হলে তাঁর মৃতদেহ ইসলামাবাদের ডি-চকে নিয়ে আসতে হবে। সেখানে তা তিন দিন ঝুলিয়ে রাখতে হবে! যদিও ২০২৩ সালে লন্ডন থেকে কফিনবন্দি করে করাচি ফেরানোর পরে আর ঝোলানো হয়নি মুশারফকে। প্রসঙ্গত, আদালতে মৃত্যুদণ্ডের সাজা না হলেও ১৯৭৫ সালে এই নভেম্বর মাসেই বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় জেলবন্দি প্রাক্তন কার্যনির্বাহী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ-সহ আওয়ামী লীগের চার নেতাকে হত্যা করেছিল সেনা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement