Bangladesh

৫ দিনে ১৪০০ কুকুরের খাবার যোগালেন মডেল-অভিনেত্রী নায়লা নাঈম

নায়লা জানালেন,  গত  ডিসেম্বরে জন্মদিনে একটা স্কুটি উপহার পেয়েছিলেন তিনি। প্রায় পড়েই ছিল সেটি। এখন সেটি কাজে আসছে।

Advertisement

অঞ্জন রায়

ঢাকা শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২০ ১৫:৫০
Share:

নায়লা নাঈম। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

অঘোষিত লকডাউনে স্তব্ধ ঢাকা। দোকানপাট বন্ধ। বন্ধ পথের ধারের গুমটি থেকে বড়-মাঝারি খাবারের দোকানগুলোও বেশির ভাগ বন্ধ। ক্রেতাও নেই– নেই উচ্ছিষ্ট খাবার।সমাজের প্রান্তিক মানুষদের জন্য বাংলাদেশ তার সেই মানবিক রূপেই। কিন্তু প্রচন্ড খাবারের সঙ্কটে পড়েছে শহরের পথকুকুররা। সুপারশপে বা বড় বাজারেই যখন কোনওমতে পরিবারের নিত্যপণ্য কিনে মুখে মাস্ক এঁটে ঘরে ফেরার প্রতিযোগিতা, তখন কতজনেরই বা সময় আছে সারমেয়দের নিয়ে ভাবার?

Advertisement

এমন সময়ে গত ৫ দিনে নিজে বাজারে গিয়ে খাবার কিনে প্রায় ১৪০০ কুকুরের খাবারের সংস্থান করেছেন বাংলাদেশের আলোচিত মডেল ও অভিনেত্রী নায়লা নাঈম। ডেন্টিস্ট নায়লা নাঈমের পশুপ্রীতি নতুন নয়। গত এক যুগ ধরেই প্রাণীদের রক্ষায় তিনি নিবেদিতপ্রাণ। অনেক বছর ধরেই তিনি প্রতিদিন অন্তত ৫০ টি কুকুর ও বিড়ালের খাবার জুটিয়ে চলেছেন। এবারে করোনাভাইরাসের আতঙ্ক যখন বিশ্বজুড়ে , তখন সেই সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। তিন চাকার স্কুটার নিয়ে বাজারে গিয়ে খাবার কিনে– পথে পথে ঘুরছেন নায়লা। নির্জন শহরে কুকুররাও যেন তাদের অন্নদাতার স্কুটির শব্দ চিনে গিয়েছে– আওয়াজ পেলেই ছুটে আসছে, ভোজন মিটলে লেজ নাড়িয়ে জানিয়ে দিচ্ছে ধন্যবাদ।

করোনাভাইরাসের প্রভাবে আরো অনেক শহরের মতোই থেমে গিয়েছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাও। এই বিপর্যস্ত সময়ে বাংলাদেশের সেলিব্রেটিরাও চেষ্টা করছেন বিপন্নদের পাশে থাকার, তাঁদের সামর্থ মতো সামগ্রী নিয়ে প্রান্তিক মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। এর আগে জয়া আহসানকেও দেখা গিয়েছে পথকুকুরদের খাবার যোগাতে।

Advertisement

নায়লা জানালেন, গত ডিসেম্বরে জন্মদিনে একটা স্কুটি উপহার পেয়েছিলেন তিনি। প্রায় পড়েই ছিল সেটি। এখন সেটি কাজে আসছে।

আরও পড়ুন: লকডাউনে ওরা খাবে কী? ঢাকার পথে নিজের হাতে কুকুরদের খাওয়াচ্ছেন জয়া

আগে তাও চা দোকান, হোটেল থেকে বেঁচে যাওয়া বা কোনও ক্রেতার মমতায় টুকটাক খাবার জুটতো পথকুকুরগুলোর। এখন করোনা ভাইরাস সক্রমণের আশঙ্কায় লকডাউন হয়ে গিয়েছে প্রায় সব কিছুই। পথের এই প্রাণীদের যোগান নেই খাবারের। নায়লার ভাষ্য, "মানবিকতার জায়গা থেকেই আমি ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় পথের উপোষী কুকুরদের খাবার দিয়ে যাচ্ছি। এর জন্য কোনও ফান্ড রেইজ নয়, নয় কোনও বাড়তি সহকারী বা ভল্যান্টিয়ার– আমি স্কুটি নিয়ে একাই বের হই। পনেরো কুড়ি কেজি খাবার কিনি। পথে পথে ছুটি– খাবার ফুরলে আবার কিনি। এভাবেই ৫ দিনে প্রায় ১৪০০ কুকুরের মুখে খাবার তুলে দিতে পেরেছি। এর বাইরে নিয়ম করে ৫০টি কুকুর-বেড়ালের যে খাবার বছরের পর বছর দিয়ে চলেছি– সে কাজও অব্যহত আছে।"

নায়লার মতে, "মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য দেশের হাজারো সংগঠন খুঁজে পাওয়া যাবে। কিন্তু রাস্তায় এসব নিরীহ পশুদের জন্য এখন কারোকে দেখা যাচ্ছে না।"

আরও পড়ুন: নিজামউদ্দিন থেকে ফিরেই পর পর ধর্মসভা, সংস্পর্শে কত জন? হিসেব নেই এখনও

নায়লা জানালেন, করোনাভাইরাসের কারনে যত দিন এই জনশূন্যতা থাকবে, তিনি নিজের সামর্থদিয়েই পথকুকুরদের খাইয়ে যাবেন। রাস্তায়, বাড়িতে অসুস্থ পশুপাখি দেখলেই নিজে চিকিৎসা দিয়ে পুনর্বাসনের চেষ্টা করবেন।

বাংলাদেশে নায়লা নাইম সাহসী মডেল হিসাবে অতি পরিচিত। লকডাউনের শুরুতেই তাঁর ভেরিফাইয়েড ফেসবুক পেজ থেকে আহ্বান ছিলো– ‘বাসায় বসে বসে প্রয়োজনে আমার ছবি দেখো! তাও, স্টে সেফ স্টে হোম !জীবনটা আসলেই মহামূল্যবান!'

নায়লার এই উদ্যোগ বেশ সাড়া জাগিয়েছে তার ভক্তকুলেও। অনেকেই পথপশুদের খাবার তুলে দিচ্ছেন এখন প্রতিদিন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন