বেজায় চটেছেন মেয়র সাদিক খান। এতটাই যে, বিদেশি রাষ্ট্রনেতার সফর বাতিল করার দাবিও তুলেছেন তিনি। পরে সুর একটু নরম করলেও শ্লেষাত্মক ভাবে বলেন— ‘‘কথায় বলে, ইট টেকস ট্যু টু ট্যাঙ্গো। ট্যাঙ্গো নাচতে দু’জন লাগে। আমি তো ওঁর সঙ্গে কোনও নাচের আসরে যাচ্ছি না। বিষয়টি নিয়ে আমার ভাবার সময়ও নেই।’’
মেয়রের রাগের কারণ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বেঁফাস টুইট। ট্রাম্পের টুইট-বাণ হরহামেশাই নানা বিতর্কের জন্ম দিচ্ছে। লন্ডন হামলার পরে সেই একই ঘটনা ঘটল।
হামলার পরে পরেই মেয়র সাদিক খান টুইট করে শহরবাসীকে আশ্বাস দিয়েছিলেন, ‘‘সন্ত্রাসবাদীরা কখনওই জিততে পারে না। আজ থেকে আগামী কয়েক দিন লন্ডনে পুলিশ-পাহারা কয়েক গুণ বাড়ানো হচ্ছে। তাতে আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই।’’
সাদিকের এই টুইটের পরেই তাঁর টুইট-বোমা ছাড়েন ট্রাম্প। বলেন ‘‘সন্ত্রাসবাদী হামলায় সাত জন মারা গিয়েছে। ৪৮ জন আহত। আর লন্ডনের মেয়র কিনা বলছেন আতঙ্কের কোনও কারণ নেই!’’ সাদিকের টুইটের প্রথম অংশটি সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে এ ভাবে তার অপব্যাখ্যা করায় বেজায় চটে যায় ব্রিটিশ মিডিয়া। লন্ডন মেয়রের দফতর থেকেও বিবৃতি দিয়ে বলা হয়, ‘‘মার্কিন প্রেসিডেন্টের অর্থহীন টুইটের জবাব দেওয়ার চেয়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে মেয়রের।’’ এই সব সমালোচনায় আরও রেগে যান ট্রাম্প। কাল দ্বিতীয় টুইটে বলেন, ‘‘কী ভাবে সাফাই দিয়ে যাচ্ছেন মেয়র? আগে ভাবুন নিজে কী বলেছেন। সংবাদমাধ্যম আবার সেটা নিয়ে মাতামাতিও করছে।’’
ট্রাম্পের জোড়া টুইটের পরেই মুখ খোলেন সাদিক। কাল রাতে একটি টিভি চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘লাল কার্পেট বিছিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ডেকে আনার কোনও মানেই হয় না।’’ আজ সকালে অন্য এক সাক্ষাৎকারে অবশ্য সুর নরম করেন মেয়র। বলেন, ‘‘শনিবার রাত থেকে যে আপতকালীন অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি, তাতে কারও টুইট নিয়ে ভাবার সময় নেই।’’ তবে একই সঙ্গে ট্যাঙ্গো নাচের প্রসঙ্গ তুলে শ্লেষাত্মক মন্তব্য করতে ছাড়েননি সাদিক।
ট্রাম্পের টুইট নিয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে-কে প্রশ্ন করা হলে তাঁর সতর্ক উত্তর, ‘‘সাদিক খান খুব ভাল কাজ করেছেন। তার বাইরে অন্য কিছু বলা ঠিক হবে না।’’ হামলা-পরবর্তী লন্ডনের পরিস্থিতি যে ভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছেন মেয়র, তার প্রশংসা করেছেন ব্রিটিশ বিদেশমন্ত্রী বরিস জনসনও। তবে ট্রাম্পের সফর বাতিল করার বিষয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘‘এই সফর নিয়ে কূটনৈতিক প্রস্তুতি প্রায় শেষ। তা বাতিল করার কোনও কারণ ঘটেনি।’’ মেয়র যে ভাবে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন, তার প্রশংসা করেছেন ব্রিটেনে মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিউইস লুকেনস। অনেকেই আবার বলছেন, লন্ডনের মেয়র মুসলিম, তাই ট্রাম্প এ ভাবে তাঁর সমালোচনা করছেন। যা ‘‘আদপেই ঠিক নয়’’ বলে মন্তব্য করা হয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্টের দফতর থেকে!