জেমস হোমস, মেইসি ব্রো ও জিলিয়ান জনসন
তিন বছরের আগের স্মৃতি এখনও ফিকে হয়ে যায়নি। ২০১২ সালের ২০ জুলাই কলোরাডোর একটি সিনেমা হলে চলছিল ‘দ্য ডার্ক নাইট রাইজেস’। আচমকাই বন্দুকবাজের হামলায় প্রাণ হারান ১২ জন। জখম হন ৭০ জন। জেমস হোমস নামে ওই বন্দুকবাজকে এক সপ্তাহ আগেই দোষী সাব্যস্ত করেছে আদালত।
ঠিক তার পরেই আবারও মার্কিন মুলুকের একটি সিনেমা হলে হামলা চালাল বন্দুকবাজ। এ বার লুইজিয়ানায়।
ভিড়ে ঠাসা সিনেমা হলে সবার চোখ তখন পর্দায়। চলছে অ্যামি শুমারের সিনেমা ‘ট্রেনরেক।’ আচমকাই পরপর গুলির শব্দে কেঁপে উঠল সিনেমা হল। বৃহস্পতিবার রাতে বন্দুকবাজের হামলায় লুইজিয়ানার লাফায়েত শহরের গ্র্যান্ড ১৬ থিয়েটারে প্রাণ হারিয়েছেন দু’জন। নিজেরই গুলিতে মৃত্যু হয়েছে বন্দুকবাজেরও। আহতের সংখ্যা ৯। এঁদের মধ্যে এক জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
পুলিশ জানিয়েছে, হত দুই মহিলা লুইজিয়ানার ফ্র্যাঙ্কলিনের বাসিন্দা বছর একুশের মেইসি ব্রো এবং লাফায়েতের বাসিন্দা বছর তেত্রিশের জিলিয়ান জনসন। প্রথম জন হলেই মারা যান। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর মৃত্যু হয় অন্য জনের।
লাফায়েতের পুলিশ প্রধান জিম ক্রাফ্ট শুক্রবার জানিয়েছেন, বন্দুকবাজের নাম জন রাসেল হাউজার। বয়স ৫৯। জন আদতে আলাবামার বাসিন্দা। এ মাসের শুরু থেকে লাফায়েত শহরের একটি হোটেলে থাকছিল সে। যে গাড়ি চড়ে জন সিনেমা হলে এসেছিল, সেটি তল্লাশি করে কোনও বিস্ফোরক মেলেনি। পুলিশ জানিয়েছে, অতীতে জনের প্রাক্তন স্ত্রী এবং মেয়ে তার বিরুদ্ধে পারিবারিক হিংসার অভিযোগ এনেছিলেন।
ক্রাফ্টের কথায়, ‘‘বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ পর পর তেরো বার বুলেটের শব্দে কেঁপে ওঠে সিনেমা হল। সে সময় সেখানে ছিলেন প্রায় তিনশো জন।’’
লুইজিয়ানা স্টেট পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সিনেমা শুরু হওয়ার প্রায় কুড়ি মিনিট পর এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়তে শুরু করে জন। তবে কেন এই হত্যালীলা চালাল সে, তা নিয়ে এখনও ধন্দে পুলিশ। পুলিশি
তদন্তে জানা গিয়েছে, আর পাঁচ জনের মতোই টিকিট কেটে সিনেমা হলে ঢুকেছিল জন।
ঘটনার সময় সিনেমা হলে ছিলেন এমন এক জনের কথায়, ‘‘প্রথমে বুঝতে পারিনি যে গুলি চলছে। ভেবেছিলাম, পর্দার থেকেই বুঝি আওয়াজ আসছে। বন্দুকের নল থেকে আগুনের ফুলকি বেরোতে দেখে বুঝতে পারি, ব্যাপারটা কী!’’ আর এক প্রত্যক্ষদর্শীর কথায়, ‘‘কোনও তর্কাতর্কি হল না। অদ্ভুত কিছু ঘটল না। শুধু এক জন উঠে দাঁড়িয়ে গুলি চালাতে শুরু করে দিল।’’
লুইজিয়ানার গর্ভনর ববি জিন্দল বলেছেন, ‘‘গর্ভনর, পিতা এবং স্বামী হিসেবে যখনই এ ধরনের ঘটনা শুনি, তখনই প্রচণ্ড রাগ হয়। দুঃখও পাই।’’ জিন্দল আরও বলেছেন, ‘‘লাফায়েতের জন্য এটা একটা বীভৎস রাত। আশা রাখি, এই দুঃসময় আমরা কাটিয়ে উঠব।’’
নিহত দুই মহিলার পরিবারের প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সমবেদনা রয়েছে বলে হোয়াইট হাউস সূত্রে জানা গিয়েছে। তদন্ত কত দূর এগোল, সে বিষয়েও তাঁকে যেন জানানো হয় বলে নির্দেশ দিয়েছেন ওবামা।