বছরভর হৃদ্‌যন্ত্র ছাড়াই বাঁচলেন যুবক

একটা ছোট্ট ব্যাকপ্যাক। ছাই রঙা। ওটা কাঁধে নিয়েই পার্কে যেতেন লারকিন ম্যাকক্রেয়ি। আর পাঁচ জন বাবার মতো সন্তানদের সঙ্গে খেলতেন। গাড়ি নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে বেরোলেও ওই ব্যাকপ্যাকটা থাকতই। এমনকী বাস্কেট বল খেলার সময়ও।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

ইপসিলায়েন্তে (মিশিগান) শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৬ ০৯:২০
Share:

লারকিন ম্যাকক্রেয়ি

একটা ছোট্ট ব্যাকপ্যাক। ছাই রঙা। ওটা কাঁধে নিয়েই পার্কে যেতেন লারকিন ম্যাকক্রেয়ি। আর পাঁচ জন বাবার মতো সন্তানদের সঙ্গে খেলতেন। গাড়ি নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে বেরোলেও ওই ব্যাকপ্যাকটা থাকতই। এমনকী বাস্কেট বল খেলার সময়ও।

Advertisement

মিশিগানের ইপসিলায়েন্তে শহরের লোকজন চলতে-ফিরতে তাকাতেন না লারকিনের দিকে। সকলে ভাবতেন, ওই ব্যাকপ্যাকটা লারকিনের একটা শখ মাত্র। কিন্তু মিশিগানের কেউই জানতেন না, এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আস্ত একটা হৃদ্‌যন্ত্র ছাড়াই বেঁচে রয়েছেন বছর পঁচিশের এই কৃষ্ণাঙ্গ যুবক। আর তাঁর কাঁধের ওই ছাই রঙা ছোট্ট ব্যাগটাই এত দিন ধরে জীবনীশক্তি জুগিয়েছে তাঁকে।

পোশাকি নাম ফ্রিডম ড্রাইভার মেশিন। আসলে এটা হল একটা নকল হৃদ্‌যন্ত্র। হৃদ্‌যন্ত্রে সমস্যার জন্য সেটি প্রতিস্থাপনের দরকার হয়েছিল লারকিনের। কিন্তু সময় মতো প্রতিস্থাপনযোগ্য অন্য একটি হৃদ্‌যন্ত্র পাওয়াটা আমেরিকার মতো দেশেও বেশ মুশকিলের বিষয়। কিছু পদ্ধতি রয়েছে। যাতে সময় লাগতে পারে বছর খানেকেরও বেশি। কিন্তু তত দিন সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপন করার উপায়? বাতলেছিলেন ইউনিভার্সিটি অব মিশিগান ফ্রাঙ্কেল কার্ডিওভাসক্যুলার সেন্টারের চিকিৎসকেরা। তাঁরাই লারকিনের শরীরের সঙ্গে ফ্রিডম ড্রাইভার যন্ত্রটি লাগিয়ে দেন। কাঁধে করে এত দিন সেটাই সঙ্গে নিয়ে ঘুরতেন লারকিন। এক-দু’মাস নয়। টানা ৫৫৫ দিন, অর্থাৎ এক বছরেরও বেশি সময় নিজের হৃৎপিণ্ড ছাড়া বেঁচে ছিলেন লারকিন। সম্প্রতি হৃদ্‌যন্ত্র প্রতিস্থাপন হয়েছে তাঁর। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, অস্ত্রোপচার সফল। আর কয়েক দিনের মধ্যেই বাড়ি ফিরতে পারবেন লারকিন।

Advertisement

সমস্যার শুরু বছর আট-নয় আগে। বাস্কেট বল খেলতে খেলতেই হঠাৎ একদিন অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন লারকিন। চিকিৎসকেরা তাঁকে জানান, একটি বিরল বংশগত রোগ রয়েছে তাঁর। নাম ফ্যামিলিয়াল কার্ডিওমায়োপ্যাথি। এই রোগে ধীরে ধীরে হৃদ্‌যন্ত্রটি বিকল হয়ে যায়। তখন এটি প্রতিস্থাপন ছাড়া অন্য কোনও রাস্তাই থাকে না। বছর কয়েকের মাথায় একই অসুখ দেখা যায় লারকিনের ভাই ডমিনিকের শরীরেও। ছ’মাস হাসপাতালে থাকার পরে সফল প্রতিস্থাপন করা হয় তাঁরও। কিন্তু লারকিনের শরীরের চাহিদা মতো হৃদ্‌যন্ত্র পেতে সময় লাগছিল বেশ খানিকটা। তাই চিকিৎসকেরা তাঁর শরীরের সঙ্গে নকল হৃদ্‌যন্ত্র লাগানোর সিদ্ধান্ত নেন।

‘‘আর পাঁচটা সাধারণ ব্যাগের মতোই দেখতে ছিল ওটা। বইয়ে ভরা একটা ব্যাগের মতোই ওজন। কিন্তু তার থেকেই কতগুলো নল বেরিয়ে থাকত। নলগুলো ঢুকেছিল সোজা আমার বুকের মধ্যে। কখনও মনে হয়নি নকল হৃদ্‌যন্ত্র নিয়ে ঘুরছি। আসলটার মতোই ধুকপুক করত ওটা’’, হাসপাতালের বিছানায় শুয়েই হাসিমুখে বললেন লারকিন। তবে ওই রকম একটা যন্ত্রের দেখভাল করতে তাঁর মা তাঁকে অনেক সাহায্য করতেন বলে জানিয়েছেন লারকিন। ‘‘প্রথম ভাবতাম, এই নলগুলোর যত্ন নেব কী করে। সব সময় সংক্রমণের একটা ভয় থাকত। খুব সাবধানে ওটা ব্যবহার করতে হতো। কিন্তু এত দিন ধরে এ সব করে করে অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল’’, বললেন লারকিনের মা ভনসাইল ম্যাকক্রেয়ি।

লারকিন আপাতত দিন গুনছেন। সেই ছাই রঙা ব্যাকপ্যাকটা ছাড়াই এ বার বাস্কেট বল খেলতে হবে তো!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন