ছবি: এএফপি।
দু’শো বছরেরও বেশি পুরনো ঘটনা। ফ্রান্সের রাজা ষোড়শ লুইয়ের কাছ থেকে একটা অসাধারণ বিদায়ী উপহার পেয়েছিলেন আমেরিকার রূপকার বেঞ্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিন। ডিম্বাকৃতি সোনার একটা বাক্স, যার মধ্যে ৪০৮টি হিরে বাঁধানো ছোট সংস্করণে রাজারই মুখচ্ছবি। উপহার নিয়ে দেশে ফেরেন ফ্র্যাঙ্কলিন। কিন্তু এমন বহুমূল্য উপহার পেয়ে মনের মধ্যে তাঁর খচখচানি কিছু কম ছিল না।
কূটনীতিকদের বিদায়ী উপহার দেওয়া ফ্রান্সের রীতি। কিন্তু আমেরিকায় তা নিয়মবিরুদ্ধ। অভিজাত ইউরোপের কাছ থেকে তাদের দেশে কোনও ভাবে দুর্নীতির ‘অনুপ্রবেশ’ যাতে না ঘটে, তার জন্য কঠিন নিয়ম তৈরি হয়েছিল সদ্যগঠিত আমেরিকায়। ঠিক হয়, বিদেশি সরকারের কাছ থেকে মার্কিন অফিসাররা কোনও উপহার গ্রহণ বা অন্য পথে রোজগার করতে পারবেন না। তাই সে নিয়মের ব্যত্যয় না ঘটিয়ে ষোড়শ লুইয়ের দেওয়া সেই বাক্স ফ্র্যাঙ্কলিন জমা করেন মার্কিন কংগ্রেসে। কংগ্রেস অবশ্য তাঁকে সেটি রাখতে দিয়েছিল।
১৭৮৫ সালের এই ঘটনা এখন কাঁটা হয়ে বিঁধছে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গলায়। যার জেরে তিনি এখন মেরিল্যান্ডের আদালতে তিনটি মামলার মুখে। প্রেসিডেন্ট তাঁর ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যে বিদেশি সরকারের সঙ্গে লেনদেন নিয়ে ফ্যাসাদে পড়েছেন। বিদেশি সরকারের কাছ থেকে পাওয়া ওই সব অর্থ এখন ট্রাম্পের কাছে ষোড়শ লুইয়ের দেওয়া বাক্সের মতো! শুধু ব্যবসায় আর্থিক লেনদেন নয়, ওয়াশিংটনে ট্রাম্প ইন্টারন্যাশনাল হোটেলে কূটনীতিকদের থাকা নিয়েও আপত্তি উঠেছে।
সুদূর অতীতে আমেরিকার রূপকাররা দেখেছিলেন, বিদেশি উপহার প্রাপ্তি বা আয়ের জেরে বিভিন্ন দেশে নবগঠিত সরকারে দুর্নীতি শুরু হচ্ছে। তার পরেই মার্কিন কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া এ ধরনের বিদেশি উপহার/প্রাপ্তি নেওয়া নিয়মবিরুদ্ধ বলে স্থির করা হয়। এই নিয়মের জন্যই অ্যান্ড্রু জ্যাকসন বা আব্রাহাম লিঙ্কনের মতো প্রাক্তন প্রেসিডেন্টরা বিদেশি সরকারের কাছ থেকে উপহার পেলেই কংগ্রেসের শরণাপন্ন হতেন। ১৮৩০ সালে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট সাইমন বলিভারের কাছ থেকে পাওয়া সোনার মেডেল রাখতে কংগ্রেসের অনুমতি পাননি জ্যাকসন। লিঙ্কন বহুমূল্য বেশ কিছু উপহার পেয়েছিলেন এক বিদেশি রাজার কাছ থেকে। ১৯৬২ সালে কংগ্রেসের নির্দেশে তিনি সে সব জমা করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে।
এখন আমেরিকার ফেডারেল আইন অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট-সহ মার্কিন সরকারের কোনও কর্মী বিদেশি অফিসারদের কাছ থেকে ৩৯০ ডলারের বেশি মূল্যের উপহার নিতে পারেন না। বিদেশি সরকারের কাছ থেকে অন্য কোনও উপায়ে রোজগারের পথও বন্ধ ফেডারেল কর্মীদের। ২০০৯ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার নেওয়ার আগে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বিচার বিভাগের কাছ থেকে ছাড়পত্র পেয়ে তবে পুরস্কার নিতে পেরেছিলেন। নোবেলে পাওয়া ১৪ লক্ষ ডলার তিনি সেবাকাজে দান করেন।
আপাতত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তিন মামলার খাঁড়া কী ভাবে মাথা থেকে সরাবেন, সেটাই প্রশ্ন। বিচারক জানিয়েছেন, এ মাসের মধ্যেই রায় ঘোষণা হবে। এ মামলা চলবে কি না, জানা যাবে সেটাও।
সংবাদ সংস্থা