বোমা পড়েছে শিবিরেই, বলল মাসুদের ভাই

প্রথম সারির বিদেশি সংবাদসংস্থা এবং সংবাদপত্রের প্রতিনিধিরা এই রিপোর্ট  প্রকাশের পরে এ বার জইশ-ই মহম্মদের প্রতিষ্ঠাতা মাসুদ আজহারের ভাই আম্মারের বক্তব্য প্রকাশ করল একটি ভারতীয় চ্যানেল।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

বালাকোট শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৯ ০১:৫০
Share:

মাসুদ আজহার। —ফাইল চিত্র।

পাকিস্তানের বালাকোটে ভারতীয় বায়ুসেনা বোমা ফেললেও কিছু পাইন গাছ আর একটা কাক ছাড়া কারও প্রাণহানি ঘটেনি! প্রথম সারির বিদেশি সংবাদসংস্থা এবং সংবাদপত্রের প্রতিনিধিরা এই রিপোর্ট প্রকাশের পরে এ বার জইশ-ই মহম্মদের প্রতিষ্ঠাতা মাসুদ আজহারের ভাই আম্মারের বক্তব্য প্রকাশ করল একটি ভারতীয় চ্যানেল।

Advertisement

ওই চ্যানেলের দাবি, তাদের কাছে থাকা একটি অডিয়ো ক্লিপে শোনা যাচ্ছে পেশোয়ারে এক সমাবেশে আম্মার বলছে, ‘‘ভারতের বিমান কোনও গোয়েন্দা সংস্থার সদর দফতর বা তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে বোমা ফেলেনি। যে কেন্দ্রে জেহাদের প্রকৃত অর্থ পড়ুয়াদের শেখানো হচ্ছিল, সেখানেই আক্রমণ করা হয়েছে।’’ ওই আক্রমণে আইএসআইয়ের প্রাক্তন কর্নেল সেলিম কারি এবং জইশের প্রশিক্ষক মইন নিহত হয়েছে বলেও ‘সূত্র’ উদ্ধৃত করে দাবি করেছে চ্যানেলটি। ওই অডিয়ো ক্লিপে আম্মার উইং কমান্ডার অভিনন্দনকে মুক্তি দেওয়া নিয়ে ইমরান খানের সমালোচনাও করেছে বলে দাবি চ্যানেলটির।

ঘটনাচক্রে এ দিনই ভারতের আর একটি ওয়েবসাইটে এক ইটালিয় সাংবাদিক ফ্রাঞ্চেস্কা মারিনো দাবি করেছেন, গত মঙ্গলবার বালাকোটে ভারতীয় বায়ুসেনা বোমা ফেলার পরে ঘটনাস্থল থেকে অন্তত ৩৫টি দেহ লোপাট করেছিল পাক সেনা! নিহত এই ৩৫ জনের মধ্যে অন্তত ১২ জন জইশ জঙ্গি।

Advertisement

আরও পড়ুন: কিডনির অসুখে ভুগছে মাসুদ: দিল্লি

কিছু প্রাক্তন পাক সেনা ও আইএসআই-এর এজেন্টেও সে দিন মারা যান ভারতীয় বায়ুসেনার অভিযানে। এই খবরের সূত্র কী? দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতি নিয়ে ১৯৯৫ থেকে কাজ করে চলা সাংবাদিক জানালেন— এঁরাও প্রত্যক্ষদর্শী, স্থানীয় সরকারি অফিসের কর্মী। কিন্তু এঁরা আর কারও কাছে মুখ খুললেন না কেন, প্রশ্ন উঠছে। যদিও গত দু’দিন রয়টার্স, আল জাজিরা-সহ বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমকে বালাকোটের জাবা গ্রামের অন্তত ১৫ জন বাসিন্দা জানিয়েছিলেন, সে দিন কিছু পাইন গাছ আর একটা কাক ছাড়া কেউ মারা যায়নি।

এরই মধ্যে আবার চলছে অপপ্রচারও। ফেসবুকে জঙ্গিপনা! কয়েকটি গ্রুপে ঘটনার দিনই একটি ছবির কোলাজ দিয়ে জনৈক নেটিজেন ক্যাপশনে লিখে দেন — ‘পুলওয়ামার ছবি তো অনেক দেখেছেন, আজ পাকিস্তানের হাল দেখুন’। ছবিতে দেখা যাচ্ছে ধ্বংসস্তূপ আর মৃত্যুমিছিল। ছবিটা বালাকোটেরই। কিন্তু ১৪ বছর আগের। ভারতের ‘প্রত্যাঘাত’ নয়, ২০০৫-এ বিবিসি-র ছবি-সহ রিপোর্ট দেখিয়েছিল ভূমিকম্পের সেই ভয়াল চেহারা। যাতে প্রাণ গিয়েছিল প্রায় ৭৫ হাজারের। যার সব চেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছিল পাক-অধিকৃত কাশ্মীর এবং খাইবার পাখতুনখোয়ার মতো মূল ভূখণ্ডে। এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ছবি তুলে রেখেছিল ‘গেটি ইমেজেস’-ও।

একই ক্যাপশনে আরও কিছু মৃত্যুমিছিল আর হাহাকারের ছবি ভাইরাল হয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ ও অন্য সোশ্যাল মিডিয়ায়। যার মধ্যে একটি ‘আল জাজিরা’-র রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৪-র ৩ নভেম্বরের। ঘটনাটা ভারত-পাক সীমান্তে তালিবানের হামলা। সিএনএন, পাক সংবাদমাধ্যম ‘ডন’-এও এই ছবি বেরিয়েছিল। ২০১৫-য় পঞ্জাব-গুরদাসপুরে জঙ্গি হামলা কিংবা তার আগের বছর পাক সেনা অভিযানে নিহত তালিবান জঙ্গিদের ছবিও ‘বালাকোটের হাল’ বলে ভাইরাল হয়েছে সম্প্রতি।

এ দিকে ‘সরকারি সূত্র’ গোড়া থেকেই বলছে, ৩০০-রও বেশি জঙ্গি মারা গিয়েছে বালাকোটে। কেন্দ্র কিছু বলছে না। বায়ুসেনা বলছে, জঙ্গি-শিবির ধ্বংসের প্রমাণ আছে তাদের কাছে। কিন্তু নিহত জঙ্গির সংখ্যাটা এখনই বলা যাবে না। সব মিলিয়ে বালাকোট নিয়ে ধোঁয়াশাই রয়ে গেল ঘটনার চার দিন পরেও।

মাঝখান থেকে উঠে এল ৩৫টি মৃতদেহ পাচারের ‘খবর’। ওই ইটালীয় সাংবাদিকের দাবি, এর মধ্যে তিনি সেখানকার স্থানীয় বেশ কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, ভারতীয় বায়ুসেনা বোমা ফেলার পর-পরই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু পাক সেনা তার আগেই জায়গাটা ঘিরে ফেলে। এমনকি পুলিশকেও সেখানে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। নিষিদ্ধ ছিল মোবাইল। এবং রাতের অন্ধকারেই বোমায় নিহতদের দেহ লোপাট করে ফেলা হয়। ওই সাংবাদিকের দাবি, অভিযানে মারা যায় কাঠ ও মাটির বাড়িতে থাকা প্রায় ১২ জন জইশ জঙ্গি।

ঘটনার দিন পাওয়া উপগ্রহ চিত্র বিশ্লেষণ করে ‘অস্ট্রেলিয়ান স্ট্র্যাটেজিক পলিসি ইনস্টিটিউট’ আবার বলছে, আপাত ভাবে ক্ষয়ক্ষতির কোনও প্রমাণ নেই। বোমা পড়েছিল, কিন্তু নিশানায় থাকা জঙ্গি শিবিরের থেকে অনেকটা দূরে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন