পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ও ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
আফগানিস্তানের সঙ্গে সংঘর্ষের জেরে সীমান্তে আমদানি ও রফতানির ছাড়পত্র তুলে নিয়েছে পাকিস্তান। এর ফলে দুই দেশের সীমান্তে বাণিজ্যিক লেনদেন আপাতত বন্ধ। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম বাড়ছে। সংঘর্ষবিরতি হলেও সঙ্কট কাটেনি। এই পরিস্থিতিতে পাক সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে হুঁশিয়ারি দিল বিদ্রোহী গোষ্ঠী তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি বা পাকিস্তানি তালিবান)। সম্মুখমরে আহ্বানও জানানো হল।
পাকিস্তানে দীর্ঘ দিন ধরে সক্রিয় টিটিপি। আফগানিস্তানে যে তালিবান ক্ষমতাসীন, তাদেরই একটি শাখা পাকিস্তানি তালিবান। ইসলামাবাদের দাবি, আফগানিস্তান এবং ভারতের মদতে এই গোষ্ঠী পাকিস্তানের মাটিতে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ চালায়। কাবুল এবং নয়াদিল্লি বার বার এই দাবি অস্বীকার করেছে। চলতি মাসের শুরুতে আফগানিস্তানের সঙ্গে সীমান্তে পাকিস্তানি সেনার যে সংঘর্ষ শুরু হয়েছিল, তার নেপথ্যেও ছিল এই গোষ্ঠী। সম্প্রতি একটি ভিডিয়োবার্তায় টিটিপি-র অন্যতম শীর্ষনেতা আহমদ কাজ়িম হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মুনিরকে। পাক সেনাপ্রধানের উদ্দেশে তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘জওয়ানদের ভেড়ার মতো মরতে পাঠাচ্ছেন। আপনি যদি সত্যিকারের মানুষ হন, আমাদের সামনে এসে দাঁড়ান।’’ গত ৮ অক্টোবর পাকিস্তানের সেনাঘাঁটিতে একটি জঙ্গিহামলায় ১১ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এই ভিডিয়োয় সেই ফুটেজ দেখিয়ে হামলার দায় স্বীকারও করেছে টিটিপি।
অন্য দিকে, পাকিস্তানের ফেডেরাল বোর্ড অফ রেভিনিউ (এফবিআর) বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, আফগানিস্তান সংলগ্ন তোরখাম, গুলাম খান, খারলাচি এবং আঙুর আড্ডায় আমদানি ও রফতানির জন্য প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। গত ১২ অক্টোবর থেকে সীমান্তে লেনদেন বন্ধ। নিরাপত্তার কারণেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে দাবি এফবিআর-এর। তাদের বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, ‘‘নিরাপত্তাজনিত কারণে আমাদের অনেক কর্মীকে সাময়িক ভাবে সদর দফতরে পাঠিয়ে দিতে হয়েছে। হাতেগোনা কয়েক জন সীমান্তে রয়েছেন। পরিস্থিতি বুঝে যত দ্রুত সম্ভব আমরা আমদানি-রফতানির প্রক্রিয়া শুরু করব।
আমদানি-রফতানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পাকিস্তানের অর্থনীতিতেও তার প্রভাব পড়ছে। ফল ও সব্জির দাম বাড়ছে। এক লাফে অনেকটা বেড়ে গিয়েছে টম্যাটোর দাম। পাকিস্তানের বাজারে আপেলের মূল উৎস আফগানিস্তান। জোগান বন্ধ হওয়ায় তার দামও বাড়ছে। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, এক লাফে ৪০০ শতাংশ বেড়ে পাকিস্তানে টম্যাটো হয়ে গিয়েছে ৬০০ টাকা (পাকিস্তানি মুদ্রা) কেজি। পাকিস্তানের সঙ্গে আফগানিস্তানের সারা বছরে প্রায় ২৩০ কোটি ডলারের বাণিজ্য চলে। আদানপ্রদানকারী পণ্যের তালিকায় রয়েছে তাজা ফল, সব্জি, ধাতু, ওষুধ, গম, ধান, চিনি, মাংস এবং দুগ্ধজাত বিভিন্ন সামগ্রী। কিন্তু বাণিজ্য বন্ধ থাকায় সীমান্তে অনেক পণ্য পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে বলে খবর।